প্রচলিত একটি উপকথা আছে; এক অত্যন্ত ধার্মিক মানুষকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, একটা সূঁচের ছিদ্রের মাঝ দিয়ে কি একটা হাতি যেতে পারে? এর উত্তর তিনি দিতে পারেননি। আর যাত্রাপালা করে এমন এক নারীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো একই প্রশ্ন, সে এক মুহূর্ত না ভেবে উত্তর দেয়, আল্লাহ চাইলে নিশ্চয়ই যেতে পারে।
সুতরাং আল্লাহকে কে কতটা ভালোবাসে; কতটুকু আস্থা তার; তা বাইরে থেকে পরিমাপ করা খুবই কঠিন। এই ভালোবাসা পরিমাপ করতে আসে, কোন সে তৌহিদি সমাজ!
একইভাবে দেশকে কে কতটা ভালবাসে তা পরিমাপ করাও কঠিন। দেশপ্রেম নিয়ে কলাম লিখে, কবিতা লিখে, অন্যকে দেশপ্রেমের শিক্ষা দিয়ে নিজের ছেলেমেয়েকে পশ্চিমে পার করে দেয় বুদ্ধিজীবী। আর মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসী শ্রমিকের ফোনের রিঙ্গারে যখন আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি বাজতে থাকে; বিমান ঢাকায় ল্যান্ড করতে দেখে যে শ্রমিকের চোখ ভিজে ওঠে; তাকে দেশপ্রেম শেখাতে আসে কোন সে সুশীল সমাজ।
কাজেই ধর্মপ্রেম কিংবা দেশপ্রেম কাউকে শেখাতে যাওয়ার মাঝে যে পঞ্চায়েতি প্রবণতা তা খুবই সন্দেহজনক। ধর্মপ্রেম দেখিয়ে রিক্সাচালক থেকে দ্রুত তিনতলা দালানে উঠতে দেখেছি; দেশপ্রেম দেখিয়ে কাঠমিস্ত্রীর ছেলে নিউইয়র্কে সেকেন্ড হোম কিনতে দেখেছি। জীবন থেকে নেয়া এসব প্রতারণার উদাহরণে ঠাসা বাংলাদেশের ৫৪ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাস।
শুধু মনে রাখতে হবে দেশের মালিক সেজে অন্যকে নাকে খত দিয়ে দেশপ্রেম শেখাতে গিয়ে আওয়ামী জনতা ভারতে পালিয়েছে পাবলিকের তাড়া খেয়ে। তাই তৌহিদি জনতাকে খেয়াল রাখতে হবে, দেশের মালিক সেজে অন্যকে ধর্মপ্রেম শেখাতে গেলে নাকে খত দিয়ে ভারতের দেওবন্দে পালাতে হবে। বাংলাদেশে নৈরাজ্যকারী এই দুই পুতুলের পাপেট মাস্টার দিল্লির সাউথব্লকে বসে সুতো নাড়িয়ে পুতুল নাচায়, সে আমরা জানি।
চব্বিশের ৫ অগাস্টের পর, তৌহিদি পুতুলের নাচ আর তাতে জোড়াসাঁকো পুতুলের প্রতিনাচ; আওয়ামী পুতুলের নাচ আর অগ্নিহোত্রীর নাচ; বেশ জমিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ মঞ্চ। ১৫ বছর থ্যাংক ইউ পিএম বলে প্রগলভ জোড়াসাঁকো সমাজ, গত এক বছরে পান থেকে চুন খসলে 'দম বন্ধ লাগছে', ‘কিচ্ছু ভালো লাগছে না’ বলে আদুরে ভঙ্গি করলেও আমরা জানি এতো আদরের কিশোর-কিশোরী তারা ছিলো না। ছোট্ট সরকারি কোয়ার্টার থেকে একটু বড় এপার্টমেন্টে উঠে এলেই বড্ড আদর হয়; গণভবনে বুবুর পিঠাপুলির আসর আর বঙ্গভবনে রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো সেমাইয়ের ঈদ গাইতে না পারার কষ্টে কথায় কথায় মন খারাপ হয়। বুবু ছাড়া কারো কাছে কোন প্রত্যাশা থাকতে পারেনা; এই নিশ্চল বিশ্বাসে নাচুনি হিরা-পান্না-চুন্নিও টকশোতে এসে , জুলাই বিপ্লবীদের নিয়ে অনেক আশা ছিলো বলে ডুকরে ওঠে! কড়াইল বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডে সহস্র ছোটখাট মানুষ খোলা আকাশের নীচে আশ্রয় নিলেও তাতে কোন বিচলন নেই; অথচ পাশের বাড়ির আগুনে চিত্রকর কিংবা গাতকের বাড়িতে দুটি চিত্রকর্ম বা দোতরা পুড়ে গেলে; ৭২ ঘন্টা ধরে জোড়াসাঁকো পুতুলেরা ফিফটি শেডস অফ গ্রে হয়ে কাঁদে। এই মনের দিক থেকে ভিখারি প্রগতিশীল লইয়া আমরা কি করিবো! যে আর্ট কালচার বোঝে, মানুষ বোঝে না!
একইরকম ভিখিরি তৌহিদি পুতুলেরা মাজারে শতবছর ধরে দরিদ্র মানুষের সিন্নি আর আল্লাহ'র ইশকে অপার্থিব আনন্দের সুর বোঝে না! সে বোঝে মাজার ভেঙ্গে জমি দখল, মাজার না থাকলে চাঁদা যেন তার ৫৬০টি মডেল মসজিদের দানবাক্সে জমা হয়; তার দঙ্গলবাজিতে ভয় পেয়ে সরকার যেন খাসজমি দেয়; এইসব ধান্দার কথা না বলে, ইসলাম খতরে মে হ্যায় গল্প বলতে আসে। চড়ুই পাখি আকাশের দিকে পা তুলে যেমন কল্পনা করে সে, পা দিয়ে আকাশের ভেঙে পড়া ঠেকিয়ে রেখেছে; তৌহিদি পুতুল তেমনি বাউলের ওপর চড়াও হয়ে কল্পনা করে সে ইসলামের ভেঙে পড়া ঠেকিয়ে রেখেছে। জোড়াসাঁকো পুতুল যেমন শিবসেনার বালিশে ঠেস দিয়ে শিবির খুঁজে ভাবে কালচারের ভেঙ্গে পড়া ঠেকিয়ে রেখেছে।
ধান্দা ছাড়া তৌহিদি পুতুল ধর্ম করে না, ধান্দা ছাড়া জোড়াসাঁকো পুতুল সংস্কৃতি করে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তৌহিদি পুতুলকে যদি আইনের শাসনের কড়াকড়িতে নাচতে না দেয়; তাহলে জোড়াসাঁকো পুতুল নাচতে পারবে না। কারণ এই চিত্রনাট্যে তৌহিদি পুতুল আর জোড়াসাঁকো পুতুলের নাচ পরস্পর প্রবিষ্ট। পাপেট মাস্টার তৌহিদি জনতাকে স্বপ্ন দেখিয়েছে ভারতে গেরুয়া আর বাংলাদেশে সবুজ ; ইধার হিন্দুত্ববাদ উধার ইসলামপন্থা; জোড়াসাঁকো জনতাকে স্বপ্ন দেখিয়েছে, বুবুকে ফেরত পাবে; ফিরে আসবে প্লট পদক পদক আর পিঠাপুলির দিন।
বাউলের গান থেকে একটি দুটি অশালীন উক্তি কেটে যে তৌহিদি পুতুল বড্ড রুচিশীলতার আলখাল্লা পরছে; তৌহিদি পুতুলের ওয়াজ মেহেফিলে ও ফেসবুক কমেন্টে এরচেয়ে সহস্রগুণ বেশী অশালীন শব্দ চোখে পড়েছে। এই যে শতছিদ্রের ঝাঁঝরের সূঁচের একটি ছিদ্র খুঁজে তাকে শাতিম ডাকা; একইরকম ছিলো ফেসবুকে অশালীন উক্তির পিতা-মাতা আওয়ামী পুতুলেরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে কটুক্তি খুঁজে নিয়ে রাজাকার ডাকা। সোশ্যাল মিডিয়া এই তৌহিদি পুতুল বা আওয়ামী পুতুলের হাতে তেমনি, যেমন বানরের হাতে খুন্তি।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বিশুদ্ধ জোড়াসাঁকো সংস্কৃতি, ইসলামি চেতনা এইসব দেশ লুন্ঠনের ধান্দার ইজম আর লিপসার্ভিসের পেছনে; বহুবছর নষ্ট হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার গণতন্ত্র, সাম্য, সামাজিক সুবিচার, নদীর দেশ সুরের দেশের শেকড় সঞ্জাত সংস্কৃতি চর্চা, ইসলামের সততা ও নৈতিকতা শিক্ষার আলোয় সব ধর্মের, গোত্রের, চিন্তার নাগরিকের জন্য সভ্যরাষ্ট্র গঠন করতে গেলে; ঐসব অশুভ পুতুল নাচ থামাতে হবে।
বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক, তৌহিদি পুতুল, জোড়াসাঁকো পুতুলকে আইনের শাসন মেনে চলতে হবে। দেশে আইন আদালত আছে; যে কোন বিরোধের নিষ্পত্তি সেখানেই হতে পারে। ভারতীয় মিডিয়ার তৌহিদি পুতুল আর জোড়াসাঁকো পুতুল নাচানোর ধণুক ব্যবসা আর নয়।
বাংলাদেশ একটি নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে; জোড়াসাঁকো পুতুল এই নির্বাচন চায়না; কারণ বুবু ফেরারি আসামি। তৌহিদি পুতুল ভয়ের রাজ্য কায়েম করে ক্ষমতা সূর্যের মালিক হতে চায়। জাঢ্য জরদগব ইসলামের স্বপ্রণোদিত ম্যানেজারেরা পাবলিকলি সূর্যের মালিকানা দাবি করেও ফেলেছেন। জোড়াসাঁকো পুতুলের জাঢ্য জরদগব ভারতের কর্মচারী বুবু যেমন শামীম ওসমানের ভাষ্যে ওলি আউলিয়ার পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন।
তাই প্রতিটি নাগরিককে এইসব ক্ষমতা উন্মাদ পুতুলের ভুতুড়ে নাচন থামাতে সক্রিয় হতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হতে হবে। আসছে নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো দেশে সাম্য,মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠায় কি কি অঙ্গীকার করছে এখন তা যাচাই বাছাই করে কোন প্রার্থীকে ভোট দেয়া উচিত তা স্থির করতে হবে। মার্কার পুতুল নয় বোধসম্পন্ন মানুষ খুঁজতে হবে।



পাঠকের মন্তব্য