যে জীবন নারকীয় কষ্টের একইসাথে স্বর্গীয় আনন্দের

১৭৮৩ পঠিত ... ১৮:০৫, নভেম্বর ১১, ২০২৫

জীবন্ত মেয়ের মৃত্যুর অপেক্ষায় কবর খুঁড়লেন বাবা। তারপর যা হলো… 

দুই বছর বয়সী এক মিষ্টি মেয়ে। তার জন্য বাবা কবর খুঁড়েছেন। সেই কবরে নিয়ে মেয়েকে শুয়ে থাকেন, খেলেন দুইজনে। মাঝে মাঝে দুজনে ঘুমিয়েও যান। বাবা মেয়েটিকে মৃত্যুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চান, কিন্তু কেন? 

এমন হৃদয়বিদারক ঘটনার সূত্রপাত চীনের সিচুয়ান প্রদেশের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে। ঝাং লিয়ং এবং ডেং মিন দম্পতির ঘর আলো করে আসে একটি ফুটফুটে মেয়ে যার নাম তারা রাখেন ঝাং ঝিনলেই। ২০১৭ সালে দুই বছর হতেই ঝাং ঝিনলেইয়ের থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়ে। থ্যালাসেমিয়া হচ্ছে রক্তের সেই রোগ যাতে একা একা হিমোগ্লোবিন তৈরী হয় না। এর চিকিৎসা যেমন ব্যয়বহুল, তেমনই সারাজীবন ধরে চালিয়ে যাওয়ার মতো দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়া। বাবা মা ঝিনলেইকে বাঁচাতে তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেন। একটা সময় ঋণ নিয়েও ঝিনলেইয়ের চিকিৎসা ব্যয় চালালেন। এর মাঝেই জানা গেল মেয়েটির জীবন বাঁচাতে স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট প্রয়োজন, যার খরচ ছিল প্রায় ১০ লাখ ইউয়ান (প্রায় পৌনে ২ কোটি টাকা)। কিন্তু স্বল্প আয়ের পরিবারের পক্ষে আর সম্ভব হলো না এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার। কারন ততদিনে তারা তাদের শেষ সঞ্চয়টুকুও শেষ করে ফেলেছেন। ফলে তারা মেনে নিলেন তাদের মেয়ের মৃত্যু সন্নিকটে।

ছেলেমেয়ের মৃত্যু মেনে নেওয়া বাবা মায়ের জন্য অত্যন্ত কঠিন কাজ। আরও যদি চোখের সামনে তারা ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে থাকে সেটা কতটা দুঃখের হতে পারে তা বোঝানোর ভাষা নেই। ঝাং ঠিক করলেন মৃত্যু যদি তার মেয়েকে নিয়েই যায় তবে তাকে মৃত্যুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া যাক। হয়তো মেয়েটির তাতে কষ্ট কম হবে! তাই ঝিনলেইয়ের জন্য কবর খুঁড়লেন বাবা। সেই কবরে দুজন একসাথে বসে থাকেন, খেলাধুলা করেন, মাঝে মাঝে সেখানেই ঘুমিয়ে যান। ঝিংলেইকে সেই কবরের পরিবেশে অভ্যস্ত করতে চান বাবা। 

কিন্তু একদিন এই ঘটনার একটি ভিডিও হঠাৎই ছড়িয়ে পড়ে ইন্টারনেটে। ভেঙে যায় হাজার মানুষের হৃদয়। সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেন হৃদয়বান মানুষেরা। ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে ১ মাসেরও কম সময়ের মাঝে ঝিনলেইয়ের চিকিৎসার টাকা উঠে আসে। পরবর্তীতে ডাক্তারের পরামর্শে এই দম্পতি আরেকটি সন্তান নেন। সেও ছিল কন্যাসন্তান। ঝিনলেই তার ছোটবোনের কর্ড ব্লাড দিয়েই সুস্থ হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে একজন ব্যবসায়ী চিকিৎসার পরেও ঝিনলেইয়ের খরচের দায়িত্ব নেন। 

ঝিনলেই সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে আসে। এরপর সেই কবরের কী হলো? ঝাং এই কষ্টদায়ক স্মৃতির জায়গাটাকে দারুন কিছু বানাতে চাইলেন। তাই কবরের মাটি ভরাট করে তাতে ছড়িয়ে দিলেন সূর্যমুখীর বীজ। এখন বোধহয় ঝিনলেইয়ের সাথে এই সূর্যমুখীগুলোও আনন্দে ঝলমল করে।

১৭৮৩ পঠিত ... ১৮:০৫, নভেম্বর ১১, ২০২৫

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top