অধ্যাপক মামুনের ফিগার অফ স্পিচ নিয়ে দঙ্গল পাকানো

১৩৫ পঠিত ... ১২ ঘন্টা ৬ মিনিট আগে

ফিগার অফ স্পিচ মানে যে কথাটা আক্ষরিক অর্থে বলা হয় না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ-আল মামুন ফিগার অফ স্পিচ হিসেবে ফেসবুকে কয়েকটি বাক্য লিখে কয়েক সেকেন্ড পর তা অনলি মি করেছিলেন। কিন্তু সেই ফেসবুক স্ট্যাটাস-এর স্ক্রিনশট নিয়ে মধ্যরাতে ফেসবুকে ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রীতিমতো ঝড় বয়ে যায়। 

শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনকালে ছাত্রলীগের ছেলেরা এভাবে ফিগার অফ স্পিচ-এর স্ক্রিন শট নিয়ে মধ্যরাতে ঝড় তুলত ফেসবুকে ও ক্যাম্পাসে। চব্বিশের ৫ অগাস্টের পর থেকে একই কাজ করছে ছাত্র শিবির।

এই যে একটা কথার কথাকে ফেনায়িত করে ঘন করে তুলে উইচ হান্টিং-এর জন্য সংঘবদ্ধ হওয়া; এটি আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতি। আওয়ামী লীগের শাসনামলে ভারতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন নিয়ে কেউ সামান্য প্রতিবাদ জানালেই ফার লেফট ও হিন্দুত্ববাদী আওয়ামী লীগ বল্লম লাঠিসোঁটা হাতে হারেরেরে করে নেমে পড়ত। আওয়ামী লীগ পতনের পর ফার রাইট ও ইসলামপন্থীরা সৌদি সংস্কৃতির আগ্রাসন নিয়ে সামান্য প্রতিবাদ দেখলেই বল্লম লাঠিসোঁটা হাতে হারেরেরে করে নেমে আসে। আমাদের দুর্ভাগ্য; আমাদের জনপদ সবসময় বহিঃশক্তির দ্বারা শাসিত হয়েছে। আমাদের পূর্বপুরুষের পিঠে রক্তজবার মতো ফুটে আছে ঔপনিবেশিক চাবুকের দাগ। 

ফলে ক্ষমতাহীনতাই আমাদের ডিএনএ-র প্রধান বৈশিষ্ট্য। এ কারণে ক্ষমতা হাতে পেলেই আমাদের মাথা খারাপ হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই ক্ষমতা হাতে পেলে ছাত্রদল, ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবির একই রকম পাশবিক হয়ে ওঠে। একইরকম ক্ষমতা অপব্যবহারের নেশা চাপে তার।

আত্মবিশ্বাসহীনতার কারণে আমাদের স্বকীয় সংস্কৃতিকে লালন করতে শিখিনি আমরা। ফলে ভূখণ্ডের সার্বভৌমত্ব থাকলেও সাংস্কৃতিক সার্বভৌমত্ব তৈরি হয়নি আমাদের। যেহেতু কল্পিত আর্যরা কাস্ট সিস্টেমে আমাদের সমাজকে বিভাজিত করেছিল; ফলে আর্য হয়ে ওঠার আকাঙক্ষা প্রবল আমাদের মাঝে। আর্য হয়ে ওঠার দুটিই পথ; হয় ভারতীয় কল্পিত উচ্চবর্ণের লোকজনের মতো পোশাক পরা অথবা আরব বিশ্বের কল্পিত আর্যদের পোশাক পরা। এই আর্য বা উচ্চবর্ণের বিকৃত ধারণাটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পিটুনি খেয়ে ইউরোপে প্রশমিত হলেও; আমরা পড়ে আছি সেই জীর্ণ ধারণা নিয়ে। 

ফলে আওয়ামী লীগ আমলে সংস্কৃতি মামা ও খালারা জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের পোশাক পরে প্রচণ্ড আর্য সেজে দেশের সাধারণ মানুষকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করত। হালে জামায়াতের সংস্কৃতি মামা ও খালাদের দেখছি সৌদি শেখ পরিবারের পোশাক পরে প্রচণ্ড আর্য সেজে দেশের সাধারণ মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে শুরু করেছে। কি রকম অপরিণামদর্শী এরা ভাবুন, চোখের সামনে আওয়ামী লীগের গজদন্তের মিনার ভেঙ্গে পড়তে দেখার পর আবার গজদন্তের মিনার গড়ে তুলছে। হাজার বছরের দাস জীবনের গ্লানির কারণেই হাতে ক্ষমতা পেলেই প্রভু হয়ে ওঠার নেশা জাগে লোকজনের।

প্রত্যেকটা দেশের খাদ্যাভ্যাস, পোশাক, সংস্কৃতি গড়ে ওঠে ঐ দেশের জলবায়ু, ঐতিহ্য ও ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে। কাজেই উত্তর-পশ্চিম ভারতের নারী-পুরুষের পোশাক কিংবা আরবের নারী-পুরুষের পোশাক আমাদের চেহারা ও দৈহিক গড়নের সঙ্গে একেবারেই যে মানানসই নয়; সেটা না বুঝে আমরা নিজেদের হাস্যষ্পদ করে তুলি। আর হঠাৎ করে কি এমন শেকড় বেরিয়েছে আমাদের যে, উত্তর ভারতের ও আরবের কাল্পনিক আর্যের মতো সেজেগুজে ঘুরতে হবে আমাদের। এই ঘটনাটা আমরা পশ্চিমে গিয়েও ঘটাই; সাহেবদের মতো থ্রী-পিস স্যুট পরে আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকারকে ডিম মারতে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে যাই। তারপর মার খেয়ে স্যুট ছিঁড়ে গেলে বউয়ের গলা জড়িয়ে ধরে অন ক্যামেরা কাঁদি। অনেক লোক আছে যারা থ্রি-পিস স্যুট পরে টয়লেটে পর্যন্ত যায়।

আমাদের দাদা-দাদী-নানা-নানী-মা-খালা-ফুপুরা স্বকীয় সংস্কৃতিতে নিজ এলাকার পোশাক পরে এত সহজাত আত্মবিশ্বাসী জীবন কাটাতে পারলে; আমাদের এ কি হলো যে আমরা ভারতীয়-আরবীয় পোশাকের দাস হয়ে পড়লাম। মনের মধ্যে এই ভারতীয় ও আরবীয় সাংস্কৃতিক উপনিবেশ গড়ে তুলে আমরা নিজস্ব সংস্কৃতির সার্বভৌমত্ব হারিয়েছি। অনুকরণপ্রিয় বেড়াল জনগোষ্ঠী হিসেবে নিজের এত হাস্যকর করে তুলেছি যে তা বর্ণনাতীত এক কাকের ময়ূরপুচ্ছ পরার ট্র্যাজেডি।

অধ্যাপক আ-আল মামুন তার ফিগার অফ স্পিচ বা কথার কথায় মদের কথা উল্লেখ করায় জামায়াতের সংস্কৃতি মামারা ছ্যা ছ্যা করে উঠেছে। মামাদের পোশাক-আশাক আরবের শেখদের মতো হওয়ায়; তাদের একটু আরব দেশগুলো ভ্রমণের অনুরোধ জানাচ্ছি। দেখবেন সেখানে মদিরার নহর বইছে।  কবি মির্জা গালিবকে একবার খুশিজল পান করতে দেখে মামারা ছ্যা ছ্যা করে উঠেছিল। গালিব উত্তর দিয়েছিলেন, ওহে মামা, নেশা যদি বোতলেই থাকত, তাহলে বোতল নাচত।

আওয়ামী লীগের লোকেরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মালিকানা নিয়ে যত্রতত্র লোকজনকে রাজাকার ডেকে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে যে কোন আলোচনার প্রতি বিতৃষ্ণা তৈরি করেছে। জামায়াতের লোকেদের একদম উচিত হবে না ইসলামের মালিকানা নিয়ে যত্রতত্র শাতিম ডেকে বেড়ানো। এতে করে মুসলমানদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ইসলাম নিয়ে যে কোন আলোচনার প্রতি বিতৃষ্ণা তৈরি হবে। আওয়ামী লীগের লোকেরা মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারের যে ক্ষতি করেছে; জামায়াতের লোকেরা ইসলামের অঙ্গীকারের সে ক্ষতি করলে; তাদের জন্য একই পরিণতি অপেক্ষা করছে তা বলাই বাহুল্য।

১৩৫ পঠিত ... ১২ ঘন্টা ৬ মিনিট আগে

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top