মীর হুযাইফা আল মামদূহ
সাবিকুন নাহারের (আবু ত্বহার স্ত্রী) ভিডিও-এর নিচে যারা ইসলামপন্থী ভাবে নিজেদের, তাদের কমেন্ট দেখছেন? প্রায় সবাই, আক্ষরিক অর্থে সাবিকুন নাহারকে গালি দিচ্ছে, যতটা অভব্য শব্দ পারা যায়, তা দিয়ে। এবং এরা কেউ বট আইডি না বা গালি দিচ্ছে, সেই লজ্জায় নিজেকে আড়াল করবে, তাও না, এরা সবাই স্বনামে খ্যাত ফেসবুকে, কেউ কেউ নামের সাথে মুফতী কিংবা আরও নানাকিছু যুক্ত করেছে ফেসবুক নামে। ওয়ালে গেলে দেখবেন, এরা ইসলাম প্রতিষ্ঠায় জানপ্রাণ দিয়ে দেওয়া মানুষ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠ। তবু কেন এরা এরকম গালি দিচ্ছে?
ইকোনমিক একটা পলিটিক্স তো আছেই এর পিছনে, এই যারাই গালি দিচ্ছে, কেউ উঠতি আবু ত্বহা কিংবা আবু ত্বহাদের খদ্দের। উঠতিরা ভাবছে, এরকম গোমর ফাঁস হতে থাকলে তাদের পয়সা কামানোর জায়গা কমে যাবে। আর খদ্দেররা ঘোর থেকে বের হতে পারছেন না। ফলে গালি দিচ্ছেন থামাতে না পেরে, ভেবে যে গালি শুনে যদি থামে।
মানে, নারীদের উপর চড়াও তো দলমত নির্বিশেষে সবাই হয়। মতের বিরুদ্ধে গেলে, নারী হলে পহেলাই তার মূল্য নির্ধারণ হয়, নানা অঙ্গ পাবলিক হয়ে যায়, এসব তো থাকেই। কিন্তু ইসলামপন্থীরা ভাবেন, তারা নারীকে সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান দিয়ে থাকেন, অন্যদের চেয়ে, কিন্তু তাদের ক্ষমতা প্রশ্নের মুখে পড়লে অতটা বিচ্ছিরিভাবে চড়াও হন কেন? এবং এই চড়াও হতে গিয়ে তাদের মুখে লাগাম থাকে না, ইমেজ ক্ষুণ্ণ হওয়ার ভয় থাকে না। হেফাজতের হুজুররা ভরা মজমায় বেশ্যা বলেন, গুণী ভরা মাহফিলে বেশ্যা বলে নারী সাংবাদিকের পোশাকের বর্ণনা দেন, কেন এমনটা হয়?
এর একটা বড় কারণ আমার মনে হয়েছে, এরা, মানে যারা নিজেদের ইসলামপন্থী বলে দাবী করে, এবং ভেবে খুশী হয়, তারা নারীকে অর্ধেক আকলওয়ালা ভাবে, তাদের অধীন–যেহেতু হাদীস আছে। ফলে, নারীকে তারা তাদের সমপর্যায় ভাবেই না, ভাবে কিছুটা নিচ, আর নিচ যে, তারে তো গালি দেওয়াই যায়, যাবে।
দেশের নারীদের কওমী মাদ্রাসা নিয়ে পুরুষদের নাক সিটকানো দেখেই বড় হয়েছি আমি। সম্ভবত এই সময়ের সব মাদ্রাসার ছেলেরাই এভাবে বড় হচ্ছে। মেয়েদের আকল কম, পড়াশোনা আর কী হবে ভেবে তাচ্ছিল্য করতে দেখেছি প্রায় সবাইকেই
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে দেখি বিভাগগুলোতে মেয়েরা আরামে ফার্স্ট হয়ে যায়। শিক্ষকদের মধ্যে নারী শিক্ষকরাই বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পর্যায়ের, তারা শোনেন, বোঝেন, বলতে দেন। ভিন্নতা নেই, তা না। অযোগ্যরা তো সব জায়গাতেই আছে।
মাদ্রাসার হুজুররা, ওয়ায়েজিনরা নারীদের আকল অর্ধেক আর নারীদের সম্পত্তির হাদিস, আর অধীনতার আয়াত নিয়ে নতুন করে ভাবতে পারেন, নতুন ব্যাখ্যা দিতে পারেন। যেই ব্যাখ্যা আপনার ভেতর নারীদের জন্য সম্মান জাগাবে। এই ২০২৫-এও এসে যদি নারীদের অর্ধেক আকল মনে হয়, আপনার অধীন লাগে, নারীরাই আপনাদের ছুঁড়ে ফেলে দিতে থাকবে দেখবেন।
সাবিকুন নাহার শুরু করলেন কেবল।
পাঠকের মন্তব্য