এখন আমার ব্যথাটা একটু কম লাগছে।আগামীকাল তো ইদ! ইদে নতুন জামা-কাপড় পরার গল্প শুনেছিলাম ভাইয়ার কাছে। তারা নাকি পড়তেন। আমিও ছোটোবেলায় এক-দুবার নাকি পড়েছি। নতুন জামা কেমন হয়? অনেক সুন্দর? স্কুলের গল্প শুনতে শুনতে স্কুলে যেই না যাওয়া শুরু করেছি মাত্র তখনই দেখো কাণ্ড, গোটা স্কুলটাই ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। এখন আবার খারাপ লাগছে। নাহ, স্কুলের কথা ভাবব না।
ভাইয়ার কাছে শুনেছি বিদেশে আমার মতো অনেক বাচ্চাই আছে যারা নাকি নরম বিছানায় ঘুমায়। ভাইয়া বলেছে শুয়ে চোখ বুজে মনে মনে নরম বিছানা কল্পনা করলে বিছানা নরম হয়ে যায়, আমি অনেকক্ষণ যাবত কল্পনা করছি, আজ কিছুতেই নরম লাগছে না। উফ! অনেক শব্দ, আমার আবার খারাপ লাগছে। কিন্তু আমি শিখেছি কান চেপে ধরে হাত নাড়ালে শব্দ কম শোনা যায়। হাতের আঙুলে ব্যথা পেয়েছি বিধায় কান চেপে ধরতে পারছি না। ভাইয়া?
সবাই হয়তো আড্ডাখানায় আছে, আমিও যদি থাকতে পারতাম! ওরা হয়তো জানেই না আমি এখানে আটকে গিয়েছি। জোরে কি একবার ডাকব? কিন্তু আমি যে শব্দ করতে পারছি না জোরে। বাইরে এত শব্দের মাঝে আমার আওয়াজ তো আমি নিজেই শুনতে পাচ্ছি না। ভাইয়া বলেছে কখনও ভয় না পেতে। সত্যিই আমি ভয় পাই না। একদমই পাই না। ভাইয়া আরও বলেছে শিশুদের মনে কোনো পাপ থাকে না। শিশু হলেও আমি অনেককিছু বুঝি, সেদিন আমার রুটি আমি তাসবিয়াকে দিয়ে দিয়েছি। আমার অনেক খিদে ছিল, কিন্তু আমি সহ্য করতে পারি, তাসবিয়া নিজেও একজন শিশু, ওর কষ্ট দেখে বেশি কষ্ট লাগছিল তখন। ভাইয়া বলেছে মন বড় রাখলে খিদে কন্ট্রোল করা যায়, আমরা নাকি অনেক অনেক সাহায্য-সহযোগিতা পাব, ভাইয়ার সব কথা আমি বিশ্বাস করি, এটাও হয়তো সত্যিই হবে। আচ্ছা, ওরা আমায় কি আর খুঁজে পাবে? কাগজের বলটা কেন যে নিতে আসলাম এখানে? এখন ঘরটাকে ঠিক আমার স্কুলের মতো লাগছে, কিছুক্ষণ আগেই সব ঠিকঠাক ছিল, কর্ণারে আমার বই, পাশে গতকাল কাগজ দিয়ে বানানো ফুলটা এখনও দেখতে পাচ্ছি, একটা বড় গুলিতে সব গুঁড়ো হয়ে গেল। আবার শব্দ... কানে যেন কিছু শুনতে পাচ্ছি না এখন! ওমা! এত্ত আলো কেন চারিদিকে? কী সুন্দর লাগছে দেখতে!
আমার ব্যথাও নেই এখন, শব্দগুলোও আর পাচ্ছি না। কী সুন্দর একটা সুবাস, খিদেও নেই, আরেহ, কয়েকজন আমার দিকে খুব সুন্দর কিছু জামা নিয়ে আসছে, কাল ইদে আমি এগুলো পড়ব।
পাঠকের মন্তব্য