জেন-আলফাদের মাল্টিডাইমেনশনাল বাগধারা সিক্স-সেভেন

পঠিত ... ১৪ ঘন্টা ১২ মিনিট আগে

লেখা: হেলাল মহিউদ্দিন

বিশ্বখ্যাত ডিকশনারি ডট কম প্রতি বছর একটি ‘ওয়ার্ড অব দ্যা ইয়ার’ নির্বাচন করে। পশ্চিমা দেশগুলোতে সমাজবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, যোগাযোগতত্ত্ব আর ভাষাবিদ্যার মানুষজন খুব নজর রাখে শব্দটি কি হবে। কারণ, সমাজ ও মানবিক যোগাযোগের ধরণ-ধারণের কী কী পরিবর্তন হয়েছে, নতুন সৃষ্ট শব্দটিকে ভেঙেচুরে নিলে, সেই জ্ঞানটি মেলে।

২০২৫ সালের জন্য ডিকশনারি ডট কম বর্ষসেরা শব্দ নির্বাচন করেছে ‘সিক্স-সেভেন’!

সিক্স-সেভেন?

মানে ছয়-সাত! হোয়াট!

বাংলায় একটা বাগধারা আছে ‘নয়-ছয়’। মানে এলোমেলো করা, গোলমেলে, উলটাপালটা। যেমন—'তোর কাজই নয়ছয় করা’। আরেকটা অর্থ—উলটাপাল্টা বোঝানো। যেমন—‘আমাকে ওসব নয়ছয় বুঝিয়ে এক টাকাও খসাতে পারবে না’।

ভাবলাম আমাদের ‘নয়-ছয়’-এরই ইংরেজি অ্যাডাপ্টেশন নয় তো!

খানিকটা খোঁজখবর করে যা জানা গেল তা’ বিস্ময়কর। এটা ইংরেজিভাষী আলফা জেনারেশন-এর ভাষা। শব্দটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে সারা দুনিয়ায়। ইংরেজিভাষী দেশগুলোর গণ্ডি ছাড়িয়ে অ-ইংরেজিভাষী অনেক দেশেও ছড়াচ্ছে। এবং ছড়ানোর গতিও দ্রুত। ‘সিক্স-সেভেন’ এখন জেন-আলফাদের ‘হাউজহোল্ড এক্সপ্রেশন’। (বাংলাদেশে কতোটা হয়েছে জানি না অবশ্য!)

জেন-জির পরের জেনারেশনটি আলফা জেনারেশন। এদের জন্ম ২০১০ হতে ২০১৫’র মধ্যে। অর্থাৎ এরা কিশোর বয়সী। বয়স ১১ হতে ১৫’।

কেন, কখন, কীভাবে জেন-আলফা-এর ব্যবহার শুরু করল, কেন এটা তাদের ডিজিটাল এক্সপ্রেশনের ফুটপ্রিণ্ট ইত্যাদি জানতে আরও সময় লাগবে। গবেষণা লাগবে। যতোটুকু জানা গেছে স্ক্রিলার র‍্যাপ গান Doot Doot-এ সিক্স-সেভেন-এক্সপ্রেশন আছে। সেখান থেকে এটা ছড়িয়েছে। কিন্তু, স্ক্রিলার র‍্যাপ তো বাচ্চাদের, মানে শিশু-কিশোর হতে চলা বয়সীদের উপযোগী নয়।

যাই হোক, তারপর কোনো একটি বাস্কেটবল খেলায় এক কিশোর হাতের আঙুলে ছয়-সাত এক্সপেশনটি দেয়। সেটা নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। তারপর দেখা গেল অসংখ্য রিল এবং টিকটক তৈরি হচ্ছে হাতের আঙুলের এক্সপ্রেশনে। ব্যকগ্রাউন্ডে স্ক্রিলার সিক্স-সেভেন মিউজিক। বেশিরভাগই ভাইরাল, ট্রেন্ডও। 

কিন্তু ভিডিওতেই শুধু নয়, ঘরে-বাইরে স্কুলেও নাকি সারাদিনই কিশোর-কিশোরীরা সিক্স-সেভেন এক্সপ্রেশন দিচ্ছে। শুধু অঙ্গভঙ্গিতেই নয়, মুখেও বলছে ‘সিক্সেভ্যান’। বিভিন্ন ডায়লেক্টও তৈরি করছে। যেমন ‘সিক্যাব্যান’, সিস্যাব্যান’।    

‘সিক্যাব্যান’, সিস্যাব্যান’ জেন-আলফাদের ডিজিটাল ভাষা। বাংলায়ও প্রতিবছরই কিছু নতুন হাতুরে শব্দ সৃজন তো হয়ই, প্রতিষ্ঠাও পেয়ে যায়। যেমন—প্যারা, টাংকি, পোংটা। খেয়াল করলে দেখবেন শব্দগুলোর মাঝে কেমন যেন স্ল্যাং আছে, আবার নাইও! প্রথম প্রথম মনে হবে এগুলো কী? পরক্ষণেই মনে হবে, থাক না, তেমন খারাপ তো লাগছে না। মনে হবে ‘অনুমোদন করা যেতে পারে! মুল্যবোধে সামান্য ঝাঁকুনি দিচ্ছে বটে, ভূমিকম্প তো আর ঘটাচ্ছে না’!

কিন্তু ‘সিক্স-সেভেন’ ‘সিক্যাব্যান’, সিস্যাব্যান’ দিয়ে আসলে তারা কি বুঝাচ্ছে?

অর্থ একটা দুটো নয়, অসংখ্য। এ যেন এক মাস্টার সাইন-ল্যাংগুয়েজ। কন্টেক্সট বদলাচ্ছে, সিস্যাব্যান-এর অর্থ বদলাচ্ছে। যাকে বলা হচ্ছে, সে ঠিকই সঠিক অর্থই বুঝে নিচ্ছে। অনেকটা আদিম ভাষাযুগের আদলে। একই পদের অর্থ আমি ‘একমত’, সামান্য মাথা ঝাঁকিয়ে বললে ‘দ্বিমত’। আই হেইট ইউ, লাভ ইউ, গো অ্যাওয়ে, লীভ মি আল্যোন, ইউ আর অ্যানোয়িং, গট ইট, লেটস হ্যাং আউট, ইউ আর অ্যা মোরন, ইউ নেইল্ড ইট, ব্রাভো, চিয়ার্স, ব্রেক অ্যা লেগ—এ রকম অসংখ্য মীনিং তৈরি করতে ব্যবহৃত হচ্ছে ‘সিস্যাব্যান’।

আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পশ্চিমা সমাজে জেন-এক্স, মিলেনিয়াল, জেন-জিরা স্যোয়ারিংকে (খিস্তি/ বাজে শব্দ, যেমন ফাক, ফাক ইউ, শীট, মাই অ্যাস) একেবারে নিত্যদিনের ডাল্-ভাত এক্সপ্রেশন বানিয়ে ফেলেছিল। ‘সিস্যাব্যান’ এই জগদ্দল থেকে জেন-আলফাকে মুক্তি দিয়েছে। তাদের ‘সিস্যাব্যান’-এ পরিবার সদস্যরা মজা পাচ্ছে, কৌতুক বোধ করছে কিন্তু বিব্রত হচ্ছে না।

জেন-আলফারাও যেন বড় ভাই, বাবা-দাদাদের খিস্তি সংস্কৃতিকে আর ঔন করছে না। হয়তো অপছন্দই করছে। হয়তো ক্লিশে, একঘেঁয়ে, বোরিং বিবেচনা করছে। তারা খিস্তি একেবারেই ছেড়ে দিয়েছে বলছি না। তবে ‘সিস্যাব্যান’ খিস্তির ব্যবহার করা থেকে আলফাদের অনেকাংশেই মুক্তি দিয়েছে। খুব রাগ হলে, বিরক্ত হলে তারা বিরক্ত বা রাগের ভঙ্গিতে বলছে ‘সিস্যাব্যান’। ‘সিস্যাব্যান’ আসায়  এফ-ওয়ার্ড, এস-ওয়ার্ড এ-ওয়ার্ডগুলোকে এখন আগের চাইতেও অনেক নোংরা ও অভব্য লাগে! আশা করা যায়, আলফাদের এই ডিজিটাল ভাষার প্রকাশভঙ্গি আগের জেনারেশনগুলোকে খানিকটা হলেও শোধরাবে।

গতকাল সমাজবিজ্ঞানের ক্লাসে ছাত্রদের বললাম—আমাকে এই বিষয়ে খানিকটা জ্ঞান দাও। তাদের আলোচনা আমাকে ঋদ্ধ করেছ। ওরা সকলেই জেন-জি। তবু কয়েকজনই তাদের অনুজ-অনুজাদের কাজ কারবার বিষয়ে একটি দারুণ ইনসাইট দিয়েছে। তাদের মতে—জেন-আলফার উচ্চারণে ‘সেভেন'-এর শেষ অংশ ইংরেজি ‘ব্যান’ (ban)। ‘ব্যান’ যেমন বাতিল করা অর্থের মতো। ‘সিক্স অ্যা ব্যান’ জেনারেশন আমাদের এবং ওদের প্রাচীন-পুরনো, জীর্ণ-জ্বরা বাতিল করে দিতে মাঠে আসছে!

বাংলাদেশের জেনারেশন আলফাদের কী খবর? ওদের বিষয়ে আমাদের কি কোনো অবজার্ভেশন আছে? আছে কোনো পাঠচিন্তা?

পঠিত ... ১৪ ঘন্টা ১২ মিনিট আগে

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top