ওল্ড অর্ডার চেঞ্জেথ, ইয়েল্ডিং প্লেস টু নিউ

১৫৯ পঠিত ... ১৫:২৩, মার্চ ১০, ২০২৫

9

অন্তর্বতীকালীন সরকারটি যেহেতু কোনো দলীয় সরকার নয়; ফলে একে একা পথ হাঁটতে হচ্ছে। পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীটিকে পঙ্গু করে দিয়ে যাওয়ায়; আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারেনি।

যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-ছাত্রীদের সংঘটিত বিপ্লবের ম্যান্ডেট নিয়ে ড. ইউনূসের সরকারটি গঠিত হয়েছে; সেই ছাত্রছাত্রীরা জাতীয় নাগরিক পার্টি তৈরি করে দল গোছাতে ব্যস্ত।

ভারতের সরকার, মিডিয়া ও সেখানে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামীলীগের ঘাতকেরা ৫ আগস্ট রাত থেকেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নানারকম উস্কানি সৃষ্টি করে একে ব্যর্থ রাষ্ট্র প্রমাণে মরিয়া। বাংলাদেশ লুণ্ঠন করে ভারতে বিপুল অর্থ পাচার করেছে আওয়ামীলীগের মানবতা বিরোধী অপরাধীরা। ফলে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণায় সক্রিয় আওয়ামী ন্যারেটিভ নির্মাতাদের মুখমণ্ডলে চেকনাই দেখা যাচ্ছে।

বিএনপি জানে আওয়ামীলীগের হঠাৎ পতনে তারা অপ্রতিদ্বন্দ্বী; ফলে তাদের ক্ষমতায় যাবার তাড়াহুড়া রয়েছে। তারা ড. ইউনূসের সঙ্গে প্রতিটি বৈঠকে সমর্থন প্রকাশ করলেও; প্রতিদিনই বিএনপির কোনো না কোনো নেতা বিবৃতি দেন, ক্ষমতায় যাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?

জামায়াতে ইসলামী সাড়ে পনেরো বছর পর পাওয়া মুক্তির আনন্দ উদযাপনে অসংযত। আওয়ামীলীগের ফ্যাসিজমকালে নিরংকুশ ক্ষমতা উদযাপনের যে কালচার তৈরি হয়েছে; ইসলামপন্থীরা একই কালচারে ‘ট্যাগিং দাও ও শিকার করো’ পদ্ধতি অনুসরণ করছে। ফলে আওয়ামীলীগ আমলে সহমত ভাই ও শিবব্রত দাদা যেমন যাকে তাকে রাজাকার ও পাকিস্তান পন্থী ট্যাগ করে শিকার করত, জামায়াতের শরিয়ত ভাইয়েরা একই স্টাইলে যাকে তাকে শাহবাগী ও ভারতপন্থী ট্যাগ করে শিকারের চেষ্টা করছে। আওয়ামীলীগ ও জামায়াতের এই হিংস্র ও আদিম পলিটিক্যাল কালচার নির্মূল করা না গেলে বাংলাদেশের সভ্যতার স্বপ্ন অধরা রয়ে যাবে।

বাংলাদেশে মন দিয়ে পড়ালেখা করে কট্টর হিন্দুত্ববাদী ও কট্টর ইসলামপন্থীরা আর তাদের মাঝে রয়েছে অন্ধ আনুগত্য। ফলে আওয়ামীলীগ আমলে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের পদায়ন হয়েছিল। আওয়ামীলীগ পতনে তারা ভারতে পালালে বা আত্মগোপনে গেলে কট্টর ইসলামপন্থীরা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে চলে যায়। দুর্ভাগ্যের ব্যাপার ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের ছেলেরা পড়ালেখা করে না। ফলে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে তাদের পদায়ন সম্ভব হয় না। অবশ্য অন্ধ আনুগত্য বিবেচনা না করে কেবল মেধা তালিকা অনুসরণ করে নিয়োগ করা গেলে নির্দলীয় কর্মকর্তা পাওয়া সম্ভব। বাংলাদেশের সিভিল প্রশাসনকে মেধা তালিকা ভিত্তিক পদায়নের দিকে নিয়ে যেতে হবে। তাহলে কট্টর ইসলামপন্থী ও কট্টর হিন্দুত্ববাদীর দুষ্টচক্র থেকে প্রশাসনকে মুক্ত করা যাবে।

বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিত একটি সংস্কৃতিমনষ্ক জনগোষ্ঠী রয়েছে; যারা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জমিদার ভাবতে শুরু করেন নিজেদের। ফলে ৫ আগস্টের পর থেকে তাদের আচরণ দেখে মনে হয়; বাংলাদেশ একটা গ্রাম আর তারা শহর থেকে গ্রামে বেড়াতে আসা বড়লোক আত্মীয়-স্বজন; যারা জিজ্ঞেস করছে, এসি নাই কেন, হাই কমোড নাই কেন! পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো বিপ্লবের পরে দ্রুত আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবার নজির নেই। ফ্যাসিস্ট হাসিনা পুলিশ বাহিনীকে পঙ্গু করে রেখে গেছে; এই কথাটা শহর থেকে বেড়াতে আসা জমিদার মানসিকতার আত্মীয়-স্বজনকে বিশ্বাস করানো যাচ্ছে না। যে ফরাসি রেনেসাঁর যেমন খুশি তেমন সাজোতে এরা কথা বলে, সাজ-গোজ করে, কল্পনায় নিজেদের ফরাসি ভাবে; সেই ফরাসি বিপ্লব সম্পর্কে তাদের জানাশোনা শূন্যের কোঠায়। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নাগরিক সমাজ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে গভীর আত্মত্যাগ ও সামষ্টিক কল্যাণের বোধ থেকে দেশ ও সমাজের সেবায় নিয়োজিত থেকেছে; আমাদের ফেইক ফরাসি সমাজ ১৯৭২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত সেরকম কোনো সক্রিয়তা দেখায়নি। এরা বৈষম্য ধূসর সমাজে বৈষম্যের সুযোগ নিয়ে দ্রুত একটু অ্যাফ্লুয়েন্স অর্জন করে সেই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জমিদার সেজে বসেছে। প্রথম সুযোগে নিজের সন্তানকে দেশের বাইরে পড়তে পাঠিয়ে দিয়ে; পটের বিবি সেজে সেমিনার সিম্পোজিয়ামে সভ্যতার জ্ঞান দিয়ে বেড়ানো এদের কাজ। কোত্থেকে যেন বৃটিশ কুইন কিংবা সুইডেনের রাজার নাতি-নাতনি এসেছেন তারা; রক্ত-ত্যাগে-ঘামে বাংলাদেশকে মুক্ত করেছে যে নতুন প্রজন্ম; তাদের পান থেকে চুন খসলে তারা সব নেমে আসে বাবু বংকিমচন্দ্র সেজে।

এই ধূলোমলিন বাংলাদেশের কবরস্থানগুলোতে অসংখ্য সম্ভাবনা অবিকশিত অনাম্নী মৃতদেহ ঘুমায়। থমাস গ্রে'র ‘এলিজি রিটেন ইন আ চার্চ ইয়ার্ডে’ কবিতার বর্ণনার মতো অনেক সম্ভাবনাময় মিল্টন, নিউটন সুযোগের অভাবে অনাদরে ঐ কবরস্থানে ঘুমিয়ে। আর দৈবচয়নে ১৯৫২-র ভাষামুক্তি ও ১৯৭১ সালের স্বদেশ মুক্তির সুযোগে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া লোকেরা; মিডিওক্রেসির সাফল্য উদযাপন করে বিরাট এক একজন সমাজপতি সেজে বসেছেন। যতদিন ক্ষমতায় পরিচিত অমুক ভাই তমুক আপা ছিল; ততদিন তারা নিজেরা রুলিং এলিট সেজে মন্দের ভালো হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে মাঝে মাঝে মৃদু বকে দিয়ে ‘এসো সমাজ পরিবর্তন করি’-র পুতুল খেলায় বড্ডপুলকে ছিল।

কিন্তু তাদের ফাঁপা আভিজাত্যের অহমের গণভবনের পতন হলে; ক্ষমতা মানচিত্রে নতুন তরুণ দেখে তারা সেই ১৯৪৭ পূর্ববর্তী হিন্দু রুরাল এলিট, ১৯৭১ পূর্ববর্তী মুসলিম রুরাল এলিটের মতো আঁতকে উঠেছে। এখন এয়ারপোর্টের ভিআইপি লাউঞ্জ পেতে কাছে ফোন করবে, প্রেফারেনশিয়াল ট্রিটমেন্ট পেতে কাকে তেলাঞ্জলি দেবে; পদ-পদবী-পদকের জন্য কাকে ধরবে তা আর বুঝে উঠতে পারছে না। এই অনিশ্চয়তার খোয়ারি ফেসবুকের টাইমলাইনে বেছে বেছে দুঃসংবাদ ফেরি করার বিষাদের দিনরাত্রি এনেছে।

জুলাই বিপ্লবের সবচেয়ে আশা জাগানিয়া দিক ছিল ব্যাপক নারী অংশগ্রহণ। জাতীয় নাগরিক পার্টির কর্তব্য খুঁজে খুঁজে জুলাইয়ের সাহসিকাদের দলে আমন্ত্রণ জানানো। ইউরোপের দেশে দেশে কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পেছনে কাজ করেছে নারীশক্তি। নারী আসলে তুলে ধরে সভ্যতার পুরো আকাশ। বাংলাদেশকে হতে হবে বেগম রোকেয়ার সুলতানার স্বপ্নের বাস্তবায়ন। খেলনা রুলিং এলিটের পটের বিবি নয়; ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের নারীসমাজকে ক্ষমতায়িত করতে হবে। যে কোনো সমাজের সভ্যতার সূচক হচ্ছে সে সমাজে নারী ও শিশু কতটুকু নিরাপদ। জুলাই বিপ্লব সম্পন্ন করতে নারীর ক্ষমতায়ন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। যেভাবে জুলাইয়ে নারীসমাজ অসম্ভবকে সম্ভব করেছিল; একইভাবে তারা বাংলাদেশকে সভ্যতায় উত্তরণের অসম্ভবকে সম্ভব করতে সক্ষম।

 

১৫৯ পঠিত ... ১৫:২৩, মার্চ ১০, ২০২৫

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top