সাফারি পার্ক মূলত এমন একটি জায়গা যেখানে বন্যপ্রাণীরা মনের সুখে আপন পরিবেশে বিচরণ করে আর মানুষ তাদের দেখতে যায়। এটি চিড়িয়াখানাও না, প্রাণী আটকে রাখার জায়গাও না। কিন্তু বাংলাদেশ অন্য সব দেশের থেকে আলাদা। তাই গাজীপুরের সাফারি পার্কে গেলে আপনি বন্যপ্রাণী নয়, বরং দুর্নীতিকে তার প্রাকৃতিক পরিবেশে অবাধ বিচরণ করতে দেখতে পাবেন।
থাইল্যান্ডের 'সাফারি ওয়ার্ল্ড' ও ইন্দোনেশিয়ার 'বালি সাফারি পার্ক' দেখে ২০১৩ সালে গাজীপুরে প্রায় ৩ হাজার ৬৯০ একর জমিতে তৈরি করা হয় গাজীপুর সাফারি পার্ক।
আপনি যদি এই সাফারি পার্কে ঘুরতে যান তবে কী কী দেখতে পাবেন? তার একটা ছোট তালিকা দিচ্ছি এখানে–
প্রথমেই বলি গলা লম্বা জিরাফের কথা। যেখানে জিরাফ দেখতে পাওয়ার কথা সেখানে গেলে বর্তমানে কিছু গাছপালা ছাড়া আর কিছুই দেখবেন না। কারণ গত বৃহস্পতিবার মারা গেছে সাফারি পার্কের শেষ স্ত্রী জিরাফটি। তার টিবি রোগ হয়েছিল, চিকিৎসা হচ্ছিল নাকি। এ ব্যাপারে থানায় সাধারন জিডি করতেও দেরি হয় কারন ‘সরকারি কাজে ব্যস্ত’ ছিলেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এটি কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে আসলে সাফারি পার্ক নিয়ে আগের আরও কিছু খবর পাওয়া গেল।
সাফারি পার্কে মৃত্যুর শুরু হয় ২০২১ সালের ২৭ ডিসেম্বরে একটি সিংহ ও ওয়াইল্ডবিস্ট দিয়ে। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে মারা যায় ১১টি জেব্রা, একটি সিংহ ও একটি বাঘ। ২০২২ সালে শেষ ক্যাঙারুটি মারা যাওয়ার পর থেকে ক্যাঙারুর জায়গাটিও পুরোপুরি খালিই পড়ে আছে।
লেমুর নামক প্রাণীর নাম শুনে যদি সাফারি পার্কে দেখতে যেতে চান, সাইনবোর্ডে লেমুর লেখা ছাড়া আর কিছু দেখতে পাবেন না। কারন ২০২২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি একটি আফ্রিকান স্ত্রী লেমুরের মৃত্যু হয় এবং পরে ২০২৪ সালের ২২ মার্চ পার্কে থাকা বাকি তিনটি লেমুরও চুরি হয়ে যায়। যদিও জিডি করা হয়েছে তবে এখনও চুরি যাওয়া লেমুর কিংবা চোর কারোরই খোঁজ মেলেনি।
এখানেই শেষ নয়। ২০২৩ সালের ২২ নভেম্বরে পার্ক কর্মচারীদের সহায়তায় পার্ক থেকে দুটি ম্যাকাও পাখি চুরি হয়। পরে থানায় মামলা হলে অভিযান চালিয়ে একটি ম্যাকাও উদ্ধার করা হলেও আরেকটির কোনো খোঁজ মেলেনি। যদিও আরেকটি ম্যাকাও পাওয়া যায়নি তবে এবার আর চুপ থাকেনি পার্ক কর্তৃপক্ষ। একজন কর্মচারীকে বদলি করেই ছেড়েছে।
যাক আসি আরেকটি প্রাণীর কথায়। নীলগাই চেনেন? নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই? গাজীপুর সাফারী পার্কে আছে সেটাও, তবে সাইনবোর্ডে! কারন এই বছরের ১৬ জানুয়ারিতে একটি নীলগাই উধাও হয়ে যায়। এখনও তার কোনো খোঁজ মেলেনি, চোরেরও খোঁজ মেলেনি। আশা করি নীলগাইটি কিছুদিন পর একাই ফিরে আসবে এবং বলবে সে আবহাওয়া চেঞ্জ করতে আশেপাশেই কোথাও গিয়েছিল।
তাই বলছিলাম যে সাফারি পার্কে গেলে বন্যপ্রাণীর বদলে শুধু দুর্নীতিই দেখতে পাবেন। বছরের পর বছর এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে পার্ক কর্তৃপক্ষের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তারা দায়সারাভাবে কিছু তদন্ত, বিবৃতি দিয়ে শেষ। না আছে কোনো শক্ত জবাবদিহিতা, না আছে কোনো পদক্ষেপ। কিন্তু এর জন্য ভুক্তভোগী হচ্ছে অসাধারণ, অসহায় কিছু বন্যপ্রাণী। আসলে যে দেশে মানুষ মারার বিচার হয় না সে দেশে কয়েকটি বন্যপ্রাণীর জন্য কে কাঁদবে? তাই হয়তো কয়েকদিন পর পর একেকটি প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেলে একটু দুঃখবোধ করেই সবাই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়।



পাঠকের মন্তব্য