কাফকা অন দ্য শোর

৩৫২ পঠিত ... ১৪:২১, মে ১৮, ২০২৪

13

কাফকা অন দ্য শোর জাপানিজ লেখক হারুকি মুরাকামির বিখ্যাত একটি বই। বইপ্রেমী মানুষ মাত্রই এই বইটির সাথে কম-বেশি পরিচিত হয়ে থাকবেন। তবে বেশিরভাগ মানুষ যা জানেন না তা হলো, মুরাকামি এই বইটির আইডিয়া কপি করেছেন বাংলাদেশি লেখক সুমন্ত আসলামের 'স্কুল থেকে পালিয়ে' বইটি থেকে। বহির্বিশ্বের সাহিত্য এবং সাহিত্যিকদের তুলনায় বাংলাদেশের সাহিত্য সমাজ কিছুটা পিছিয়ে থাকার কারণে এ ঘটনাটি চাপা পড়ে যায় কালের বিবর্তনে।

'কাফকা অন দ্য শোর' উপন্যাসের মূল চরিত্র কাফকা তামুরা নামের এক বেয়ারা ছেলে। অল্প বয়সেই পেকে যাওয়ায় তার নিজের বাসায় আর মন টেকে না। উদাসীন বাবা আর অল্প বয়সেই মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত হওয়া কাফকা ১৫ বছর বয়সেই পালিয়ে যায় বাসা থেকে। জাপানের তাকামাতাসু শহরের কোমুরা মেমোরিয়াল লাইব্রেরী তার ঠিকানা হয়। বই পাগল কাফকা সেখানে গিয়ে ডুবে যায় বইয়ের সাগরে। ভয়ে ভয়ে সেখানে গেলেও ধীরে ধীরে সে খাপ খাইয়ে নিতে থাকে। একসময় লাইব্রেরির অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার ওশিমার সাথে তার খাতির হয়। ওশিমা তাকে একদিন বলে, ‘তুমি এত এত বই পড়ো, একটা ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট খোলো না কেন? তোমার বুকস্টাগ্রামার হিসেবে সফল হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি...’

কাফকা মনে মনে ভাবে, আসলেই তো!

যেই ভাবা সেই কাজ। শহরের ঘুপচি দোকান থেকে একটা সেকেন্ড হ্যান্ড আইফোন কিনে ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট খোলে সে।  কিছুদিনের মধ্যেই কাফকা তামুরা পুরোদস্তুর বুকস্টাগ্রামার বনে যায়। মাস শেষে তার ফলোয়ার হয় ৭২ হাজার ৬৭৮ জন। এভাবেই চলছিল দিনকাল। এর মধ্যে ঘটে এক বিপত্তি। একদিন কাফকা গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে নিজের স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলে। সে আশ্রয় নেয় একটি মেয়ের বাসায়। কাছাকাছি বয়সের মেয়েটিকে একবার তার ছোটোবেলায় হারিয়ে যাওয়া বোনের মতো মনে হয় (একমাত্র স্মৃতি যা তখনও লোপ পায়নি), পরক্ষণেই তাকে নিয়ে শরীর মিশ্রিত ভালোবাসার চিন্তায় বুদ হয়ে যায় কাফকা। এখানে লেখক কিছুটা ইন্সেসচুয়াস কমপ্লেক্সের মতো জঘন্য ব্যাপার নিয়ে এসেছেন। সে রাতে তারা নেটফ্লিক্স দেখে এবং চিল করে।

এরপর কাফকার নিজের পূর্ব নাম ভুলে গিয়ে নিজের নাম দেয় 'ক্রো'। একদিন সে বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি হয়। ক্লাস টাস তার ভালো লাগে না, তৃতীয় সপ্তাহেই সে জড়িয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংঘটনের সাথে। সেখানে জড়ানোর পর সে জীবনের অর্থ খুঁজে পায়। রাতের বেলা বাইক দিয়ে শো ডাউন হয়, দিনের বেলা মিছিল মিটিং-এ ভীষণ ব্যস্ত সময় পার হতে থাকে তার। ধীরে ধীরে সে জনপ্রিয়তা পায় সংঘটনের আভ্যন্তরীণ কাঠামোর কাছে। কালের পরিক্রমায়, নিজের দায়িত্ববোধ, পরিশ্রম আর নিষ্ঠার কারণে

তরতর করে উঠে যায় শিখরে। তিন বছরের মধ্যেই সে জাকসু নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হয়। তখন চারদিকে কেবল ক্রো'র জয়জয়কার। দেয়ালে, রাস্তায়, বিলবোর্ড জুড়ে শুধু তার ছবি। মাত্র ১৫ বছর বয়সে একা একা অন্য শহরে পাড়ি দেওয়া ক্রো তখন পুরোদস্তুর সেটেল্ড। বাড়ি, গাড়ি, কাজের লোকের অভাব নেই।

এক অলস বিকেলে তার রাজকীয় বাসায় কড়া নাড়ে এক বৃদ্ধ লোক। সিকিউরিটি গার্ড পরিচয় চাওয়ার পর তিনি বলেন, সম্পর্কে তিনি কাফকার বাবা। বিলবোর্ড দেখে তিনি কাফকার খোঁজ পেয়েছেন। এদিকে সিকিউরিটি গার্ড থেকে শুরু করে বাড়ির সবাই ভীষণ অবাক! এখানে তো কাফকা নামে কেউ থাকেই না৷ এদিকে মলিন, ছেঁড়া কাপড় পরা দুঃস্থ বয়স্ক লোকটিও নাছোড়বান্দা। কাহিনী খোলাসা করার জন্য ডাকাহয় ক্রো'কে। স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলার পর থেকে ক্রো তার আগের পৃথিবী থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। ফলশ্রুতিতে সে চিনতে পারে না তার বাবাকে।

নিজের ছেলে পরিচয় দিতে অস্বীকৃতি জানালে কান্নায় ভেঙে পড়ে কাফকার বাবা। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আজ দু পাইস কামিয়ে নিজের বাবাকে ভুলে গেলি? মনে রাখিস, প্রকৃতি এর প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়বে... এই বলে প্রস্থান করেন তিনি। কীসের টানে যেন পিছে পিছে দৌড়ে গিয়েও তাকে খুঁজে পায় না স্মৃতিবিচ্যুত ক্রো। যেন এক অশরীরী মানুষ হঠাৎ এসে বাতাসে মিলিয়ে গেল।

সেদিন রাতে ভীষণ কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে ক্রো'র। জ্বরের মধ্যে ভুলভাল বলে সে। একসময় বিছানা থেকে উঠে টয়লেটে যাওয়ার সময় মাথা ঘুরে ফ্লোরে পড়ে যায়। মাথায় ভীষণ আঘাত লাগে তার। দীর্ঘ দেড়দিন পর যখন তার জ্ঞান ফেরে, তখন সবকিছু আবারও অপরিচিত ঠেকে তার কাছে। দীর্ঘ ৮ বছর পর নিজেকে আবিষ্কার করে কাফকা তামুরা হিসেবে। আশেপাশের মানুষ, নিজের বাড়ি, সংঘঠনের কর্মী কাউকেই চিনতে পারে না সে। এদিকে বাকসুর ভিপি কিংবা নিজের পোস্টের ব্যাপারেও সম্পূর্ণ অজ্ঞ কাফকা। আশেপাশের সবাই একসময় তাকে বদ্ধ পাগল ভাবতে শুরু করে।

এদিকে কাফকা নিজের বাবা-মাকে খুঁজে বেড়ায়, খুঁজে বেড়ায় মেমোরিয়াল লাইব্রেরির সেই অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারকে, সেই বোন কাম প্রেমিকারুপী মেয়েটিকে। কোনোকিছুরই হিসাব মেলে না তার। অবশেষে সে গিয়ে দাঁড়ায় করে এক নদীর তীরে। গুনগুন করে এক বুক কষ্ট নিয়ে গান গায়,

আমি কূলহারা কলঙ্কিনী,

আমারে কেউ ছুঁইয়ো না কো সজনী...’

এভাবেই এক অপ্রয়োজনীয়, পরাবাস্তব মেলানকোলিক পরিবেশের মাধ্যমে শেষ হয় 'কাফকা অন দ্য শোর'।

এই উপন্যাসের ভেতরে লেখক আরও নানা অদ্ভুত চরিত্রের জন্ম দিয়েছেন যা অত্যন্ত বিরক্তিকর এবং অখাদ্য পর্যায়ের। সাহিত্য সমালোচকদের বেশিরভাগের মতেই এই উপন্যাসটি পাঠকের সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছুই নয়। কারও যদি অফুরন্ত সময় থাকে, এবং এই সময়গুলো কীভাবে কাটাবেন বুঝতে না পারেন, তাহলে এই বইটি হাতে নিতে বলেছেন; অন্যথা নয়।  

 

৩৫২ পঠিত ... ১৪:২১, মে ১৮, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top