তিথি বাসার বড় মেয়ে। আশেপাশের সবাই বলে বাসার বড় সন্তান সবসময়ই স্পেশাল। তিথিরও তাই মনে হয়, সে বাকি সবার মতো না। অনেক স্পেশাল।
তিথির আম্মা ওইদিন মাংস রান্না করতে গিয়ে পুড়ে ফেললেন। প্রায় দুই হাজার টাকার গরুর মাংস। তিথি তখন নিজের রুমে ঘুমাচ্ছিলো।
ঘুম ভাঙলো আম্মার চিল্লাচিল্লিতে, 'বাসায় এত বড় মেয়ে থাকতে মাংস পুড়ে কেমনে? সবই কপাল। অন্য মেয়ে হইলে এইখানে থাকতো, কি রান্না হচ্ছে দেখতো। আর এইখানে নবাবজাদী খালি ঘুমায়।'
তিথির ছোট ভাই তন্ময় ক্লাস এইটে পড়ে। তন্ময়ের প্রধান কাজ গেমস খেলা। সারাদিন মোবাইল, ল্যাপটপ, ট্যাব এসবের বাইরে তন্ময়ের কোনো জীবন নাই।
তিথির আব্বা নুরুল সাহেব প্রায়ই দুঃখ করে বলেন, 'আগের হাল যেমনে চলে পরেরটা তো এমনে চলবেই। মেয়ে ভালো হইলে ছেলে আপনাতেই ভালো হইতো।'
জেএসসির রেজাল্ট পর দেখা গেলো তন্ময় তিন বিষয়ে ফেল, আর তিথি বরাবরই ক্লাস টপার। তিথি নুরুল সাহেবের কাছে জিজ্ঞেস করতে গেলো আগের হালের মতো রেজাল্ট কেনো হয় নাই৷
যেতে যেতে পথে শুনলো তিথির আম্মা মন খারাপ করে বলছেন, 'তিথি যদি ছেলেটাকে পড়াইতো একটু তাহলে আর এমন হইতো না। মনের মধ্যে খালি হিংসা। ভালো চায় নাকি ভাইয়ের?'
এরপরের বছর তিথির চেষ্টায় তন্ময় অনেক মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করলো। চেষ্টায় বাঘের দুধ ও মিলে, আর ভালো রেজাল্ট সেখানে ক্ষুদ্র।
রেজাল্টের দিন দেখা গেলো ফার্স্টের চেয়ে মাত্র তিন নাম্বারের ব্যবধানে তন্ময় সেকেন্ড হয়েছে। বাসায় এসে সে কি কান্না!
তিথির আম্মা চিৎকার করে করে বললেন, 'তিথি যদি আরেকটু মনোযোগ দিয়ে পড়াইতো তাহলে কি এমন হইতো? ঠিকই ফার্স্ট হইতো ছেলে। দোষ তো ওরই।'
তিথির মনে হলো, মা সত্যি কথাই বলছেন।
কাজের মেয়ে হেলেন একদিন লবণের জায়গায় ভুলে চিনি দিয়ে ফেললো মাছের তরকারিতে।
তিথির আম্মা ঠাস করে থাপ্পড় দিয়ে তিথিকে বললেন, 'জিনিসপত্র নিয়ে জায়গামতো রাখতে পারো না? চিনির জন্য মুখেই নেওয়া যাচ্ছে না তারকারি। শ্বশুর বাড়িতে যেয়ে এরকম করলে ঝাড়ুর বাড়ি খাইতে হবে৷'
তিথি কিছুই বুঝলো না। এলোমেলোভাবে মাথা ঝাঁকালো।
এদিকে চীন থেকে করোনাভাইরাস বাংলাদেশে আসলো। পত্রিকা পড়তে পড়তে তিথির আব্বা বললেন, 'তিথির মতো কিছু অসতর্ক মানুষের জন্যই পৃথিবীর আজকে এই অবস্থা। কবে যে বুঝবে এরা!'
তিথি মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, 'সহমত ভাই।'
জলবায়ু পরিবর্তনের পিছে তিথির দোষ, সাহারা খাতুন মারা গেলেন তিথির দোষ, সিয়েচেনে তুষার ধ্বস তিথির দোষ, বাংলা একাডেমি গরুকে গোরু বলছে তিথির দোষ, ফ্যারাডে নাইটহুড ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এটাও তিথির দোষ।
মাঝেমাঝে তিথির নিজেকে আসলেই স্পেশাল মনে হয়...
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন