চার নয়নার হানিট্র্যাপ

২১৩ পঠিত ... ১৭:০০, এপ্রিল ১৬, ২০২৫

16

প্রণয় নিকেতনে লাইফস্টাইল বিষয়ক সেমিনারে লেকচার দিতে এসেছেন কৈকেয়ী রেখা। তার লাইফস্টাইল সংক্রান্ত ভ্লগগুলো খুবই শিক্ষামূলক। সকালে একটু শসা খেয়ে ওয়ার্কআউট করে; দুপুরে শুধু একটা আপেল খেয়ে; ডিনারে একটু কার্বোহাইড্রেট খেলে; কী করে ফিগার জিরো করে ফেলা যায়; কী করে সিম্পল মেকআপে গর্জিয়াস করে তোলা যায় মুখমণ্ডল; কোন ফ্রেমের চশমা পরলে হার্ভার্ড গ্র্যাজুয়েট মনে হয়; এসব শেখান রেখাদি।  

প্রণয় নিকেতনে আজ খুব সিরিয়াস ব্রেন স্টর্মিং চলতে থাকে। গত সরকারের সময় যাদের হানি ট্র্যাপে ফেলে ভিডিও করা হয়েছিল; বেশিরভাগই পালিয়ে গিয়ে দুধভাত হয়ে গেছে। এখন পাওয়ার করিডোরে একেবারেই সব নতুন মুখ। সুতরাং অপারেশন টিংকার টেইলর সোলজার স্পাই (টিটিএসপি) সক্রিয় করা হয়েছে। প্রতিকূল পরিবেশে লোকাল রিসোর্স ব্যবহার করে এই অপারেশন চালাতে হচ্ছে।

আজ রাতে একটা পশ্চিমা দূতাবাসের অনুষ্ঠান আছে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন পাওয়ার করিডোরের নতুন অনেকে। রেখাদি বেছে দেন চার জনকে। সিনথিয়া, সুনয়না, জেসিকা, আরোহী নামে চারটা হোয়াটস অ্যাপ ও ফেসবুক আইডি তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ফটোশপ করে সিঙ্গাপুরে বাঞ্জি জাম্পিং, ভেনিসে হলিডে, দুবাই-এ বুর্জ খলিফার সামনে সেলফি, ফ্রিদা কাহালোর পেইন্টিং, অরুন্ধতী রায়ের উদ্ধৃতি, হার্ভার্ডে প্রাজুয়েশনের ছবি, ঘুমানোর আগে বেড়ালকে আদর করার ছবি দিয়ে; আইডিগুলো এমন করে তোলা হয় যে মনে হবে, কেইট উইন্সলেট আর কে! সিনথিয়াকে দেখো। স্পোকেন ইংলিশের ক্র্যাশ কোর্স করানো হয়েছে তাদের।

অ্যাম্বাসির ডিনারে সিনথিয়া, সুনয়না, জেসিকা, আরোহী একে একে প্রবেশ করে। গোরা সাহেবদের সঙ্গে সেলফি তোলে। পরিবেশ, মানবাধিকার, ফোকলোর, মিউজিক, বার্ডস এসব নিয়ে কথা বলে। প্রথম তারা একটা নেসেসারি ইলিউশান তৈরি করে, তারা দেশি কারও ব্যাপারে ইন্টারেস্টেড না। হার্ভার্ড, আইভী লীগে পড়ে এসেছে তারা। সুতরাং তারা মিনিমাম ইউরোপীয় ছাড়া কথা বলে না। এটা রিভার্স সাইকোলজি। এতে দেশি সাহেবেরা তাদের বেশি করে লক্ষ্য করতে থাকে।  

অনেকটা সময় গোল্লাছুট খেলার পর আর চোখাচোখি করার পর চারটা টেবিলে গিয়ে বসে চার নয়না। আরোহী ব্যাগ থেকে কী একটা বের করার অজুহাতে ইউভাল নোয়াহ হারারির নেক্সাস বইটা টেবিলে রাখে। একে বলা হয় কনভারসেশন স্টার্টার। কেউ বইটা পড়ে থাকলে তা নিয়ে কথা তুলবে; কেউ পড়ে না থাকলে উরি বাবা বলে ইমপ্রেসড হয়ে যাবে।

অ্যাসাইনমেন্ট অনুযায়ী সিনথিয়া আমেরিকার দূত, সুনয়না চীনের দূত, জেসিকা সৌদি আরবের দূত আর আরোহী বাংলাদেশের এক কর্মকর্তার সঙ্গে গল্প জমিয়ে ফেলে। প্রণয় নিকেতন জানতে চায় জিও পলিটিক্স কীভাবে এভলভ করছে নতুন এস্টাবলিশমেন্টকে ঘিরে। ফেসবুক আইডি ও হোয়াটস অ্যাপ নাম্বার চালাচালি হয়ে গেলে; চারজন পুরুষের চিত্ত চাঞ্চল্য ঘটিয়ে চার নয়না বিদায় নেয়; তাড়াতাড়ি না ফিরলে আম্মু রাগ করবে বলে। একেবারেই বাপে খেদানো মায়ে তাড়ানো ইমপ্রেশন দেওয়া যাবে না।  

বাংলাদেশের কর্মকর্তা ইকবাল ভোরবেলা একটা হোয়া্টস অ্যাপ মেসেজ পায়, আই এম সো ব্লু উইদাউট ইউ। ইকবালের মনের মধ্যে ভ্রমর আসে গুনগুনিয়ে। দ্রুত দিনের কাজগুলো সেরে সন্তর্পণে চলে আসে টেগোর টেরেসে। অপেক্ষা করে। আরোহী আজ বনলতা সেন সেজে এসেছে। গুন গুন করে রবীন্দ্র সংগীত গায়। এমন করে আইসে বলসে করসে বলে যেন ইংরেজির মতো শোনায়। এত দ্রুততার সঙ্গে সম্পর্ক এগোয় যেন জাম্প কাটে তৈরি পাল্প ফিকশন।

ঠিক হয় আরোহী তার সিনিয়র আপা রেখাদির ৩৬ চতুরঙ্গী লেনের বাসায় নিয়ে যাবে ইকবালকে। রেখাদি পর্তুগালে হলিডে কাটাতে গেছে। বাসাটা খালি আছে।

ইকবাল পরদিন দুপুরে যথাসম্ভব সাবধানতার সঙ্গে রেখাদির ফাঁকা বাসায় যায়। কয়েকবার কলিংবেল টেপার পরেও সাড়া না পেয়ে ঘাবড়ে যায়। আরোহী দরজা খোলে; মাথায় নীল তোয়ালে; ঠোটের ওপর কয়েকবিন্দু জল। মোমবাতির সারি গিয়ে পৌঁছেছে জাকুজিতে। ইকবালকে জুতা খুলে ইনডোর সুইমিংপুলের পানিতে পা ভেজাতে হয়। আরোহীর চলা বলা খোলা সব কিছুতেই রুচির মোহন ছোয়া।

ইকবালের মনে হয়; সারাজীবন বইয়ে মুখ গুঁজে গুড বয় হয়ে থেকে কী ঘোড়ার ডিমটা করেছে। গলায় একটু খুশি জল ঢেলে টিপসি হলে মনে হয়, গুল্লি মারো সরকারি দায়িত্ব। দুপুরের স্যালাড খেতে খেতে নিজের সমুদয় বাহাদুরির গল্প বলে। সোফায় আরোহীর কোলে মাথা রেখে ভবিষ্যতের স্বপ্নের কথা বলে। পাহাড় কিনে পাহাড়ি ঝর্ণার ধারে কাঠের বাংলো গড়ে আরোহীর সঙ্গে সংসার পাতার গল্প করে। আরোহীর চোখ ছলছল করে।

দিনের পেন্ডিং কাজগুলো গুছিয়ে নিতে অফিসে সন্ধ্যায় বসে কাজ করে। এমন সময় আরোহীর ফোন আসে, ইকবাল তুমি কখনও পাপেট শো দেখেছ।

: হ্যা দেখেছি, বিটিভিতে।

: মনে করো তুমি এখন থেকে একটা পাপেট। তোমার সুঁতোগুলো আমার হাতে। আমি যা যা বলব, লক্ষী ছেলের মতো তুমি ঠিক তাই করবে। যদি তা না করো; আমি এক এক করে আমাদের সব ছবি আর ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়ে দেব।

বজ্রাহতের মতো বসে থাকে ইকবাল। এমেরিকান দূত, সৌদি দূত আর চীনা দূতের ফোন আসে ইকবালের কাছে, সিনথিয়া, সুনয়না, জেসিকা তাদের পাপেট শোর গল্প বলেছে। গল্প করতে করতে অনেক তথ্য তো তারা ফাঁসও করে দিয়েছে।

প্রণয় নিকেতনে আবার বসন্ত এসেছে ফিরে। মিশন টিংকার টেইলর সোলজার স্পাই (টিটিএসপি) একোমপ্লিশড। পুলিশ সাদা পোশাকে প্রণয় নিকেতনে এসে দেখে, আজ সেখানে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ে সেমিনার চলছে। পিয়ানোতে বসে একটা ফুলের মতো শিশু সুর তুলেছে, আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে, বিরাজ সত্য সুন্দরও।

২১৩ পঠিত ... ১৭:০০, এপ্রিল ১৬, ২০২৫

আরও

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top