ইতালির নেপলস শহরের মেয়েদের প্রেমিক থাকে দুইজন

৪২০ পঠিত ... ১৬:১৯, মে ০৭, ২০২৩

ইতালির

লেখা: সাদিকুর রহমান খান

প্রথমজন পার্মানেন্ট প্রেমিক। বিয়ে করার পরেও নেপলসের মেয়েরা সেই প্রেমিককে বুকে নিয়ে ঘুমায়। সেই পার্মানেন্ট প্রেমিকের নাম ডিয়েগো ম্যারাডোনা।

বার্সার মতো বনেদি ক্লাব ছেড়ে নাপোলিতে গিয়ে ম্যারাডোনা কী হারিয়েছিলেন, জানি না। তবে পেয়েছিলেন মানুষের ভালোবাসা।

স্পেনে সবকিছুই ছিলো। টাকা ছিলো, বড় বড় মদের বার ছিলো। জুয়ার আসর ছিলো। বাট স্পেনে ম্যারাডোনা থাকতে পারলেন না, তিনি নিজের হোম হিসেবে বেছে নিলেন ইতালির নেপলস।

সাত বছর পর, সেই নেপলসের প্রতিটা ঘরে ম্যারাডোনার একটা করে ছবি থাকতো। নেপলসের এক মেয়ে একবার বিনা দ্বিধায় বলেছিল, পোপের চে আমরা ডিয়েগোকে বেশি ভালোবাসি।

মজার ব্যাপার হলো, কথাটা শুধু বলার জন্য বলা না।বরং নেপলসের মানুষ এই ভালোবাসার প্রমাণ দিয়েছে একবার না, বারবারই।

অখ্যাত ক্লাবকে তুলে এনে সিরিআ জিতাইছিলেন। ইউরোপের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন করছিলেন। এই জেতানোর মূল্য নেপলসের মানুষ দিয়েছে ভালোবাসার বিনিময়ে। আজও, এখনও নেপলসের দেয়ালে দেয়ালে ডিয়েগোর ছবি, ভাবা যায়?

একটা ক্লাবের সাথে একটা ফুটবলারের সম্পর্ক কত বছর থাকে? ৫? ১০? ১৫? ২০?

অথচ, আজ ৩৩ বছর হয়ে গেল নেপলসের মানুষ এখনও ডিয়েগোকে তাদের নিজেদের ফুটবলার মনে করে। পৃথিবীতে এতো ভালোবাসা, এতো সম্মান, এতো ক্রেইজ আর কোন ক্লাব আর কোন প্লেয়ারকে দিসে কখনও? আমার মনে হয় না।

৩ বছর হলো ম্যারাডোনা পৃথিবীতে নাই। অথচ তিনি নেপলসে এখনও আছেন। ৩৩ বছর পর, সিরি আ শিরোপা ফিরতেছে নাপোলিতে, সাথে ফিরতেছেন ম্যারাডোনাও। এই শিরোপা জয় আরো একবার মনে করাইয়া দিতেসে, এই শহরটা ম্যারাডোনার, শুধুই ম্যারাডোনার, এই শহর আর কারো না।

এতো বছর পর কাপ জেতায় স্বাভাবিকভাবেই শহরজুড়ে চলতেসে উৎসবের প্রস্তুতি। সেই উৎসবের মধ্যমনি কে জানেন? ডিয়েগো। নাপোলির কোন খেলোয়াড় না, নাপোলির কোচ না, ক্লাব মালিক না। এই শিরোপা উৎসবেও নেপলসের মানুষের উৎসবের মধ্যমণি তিন বছর আগে দুনিয়া থেকে চলে যাওয়া একজন ফুটবলার, ডিয়েগো ম্যারাডোনা।

পৃথিবীতে অনেক সফল ফুটবলার ছিলেন,আছেন, থাকবেনও।বাট এই যে মরে যাওয়ার পরেও একজন ফুটবলারকে ঘিরে এমন উদ্দাম উচ্ছ্বাস আর কোন ফুটবলারের কপালে জোটেনি, কোনদিন জুটবেও না, এইটা আমি এক কলম লিখে দিতে পারি।

বারবার ম্যারাডোনার ব্যাপারে আমি একটা কথাই বলি, ঈশ্বর উনাকে দারিদ্রের কষ্ট দিছেন, ফ্যামিলির কষ্ট দিছেন, অ্যাডিকশনের কষ্ট দিছেন, বাট ঈশ্বর উনার সব কষ্টের  মানুষের ভালোবাসা দিয়ে পোষায়া দিছিলেন। এতো ভালোবাসা এই পৃথিবীতে ম্যারাডোনা ছাড়া খুব বেশি মানুষের কপালে জোটে নাই। 

কথিত আছে, নেপলসে একবার ভূমিকম্প হইছিলো। তো ওখানকার লোকজন ভূমিকম্পের সময় ঈশ্বরকে না ডেকে ম্যারাডোনাকে ডাকতে শুরু করেছিলো।

আজ নেপলসে আরো এক ভূমিকম্পের প্রস্তুতি চলতেছে। আনন্দের ভূমিকম্প। শহরজুড়ে চলবে আনন্দ মিছিল, ফুলের বন্যা আর শ্যাম্পেনে শ্যাম্পেনে ছেয়ে যাবে নেপলসের রাজপথ।

বদলে গেছে সময়। বদলে গেছে মানুষ। বদলে গেছে ফুটবল। বদলেছে সবকিছুই।

বদলায়নি শুধু একটা জিনিস। শোকের ভূমিকম্প হোক আর উৎসবের ভূমিকম্প হোক। নেপলসের লোকজন এখনও সবার আগে একটা নাম ধরেই চিৎকার করে উঠে। সেই নামটা, ডিয়োগো ম্যারাডোনা।

ম্যারাডোনা পৃথিবী ছেড়েছেন বহুদিন, কিন্তু নেপলস ছাড়েন নাই এখনও।

৪২০ পঠিত ... ১৬:১৯, মে ০৭, ২০২৩

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top