কাজী নজরুলের গান-কবিতা-বিজ্ঞাপনের গল্প

৮৭৮ পঠিত ... ২৩:০৩, আগস্ট ২৯, ২০২১

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন ভীষণ বাউন্ডুলে স্বভাবের রসবোধ সম্পন্ন মানুষ। কথায় কথায় বিখ্যাত সব ছড়া বানিয়ে ফেলার দুর্দান্ত ক্ষমতা ছিল তার। গান, কবিতা কিংবা ছড়া, নিজের চারপাশ থেকে তার নির্যাস সংরক্ষণ করে খাতা-কলম নিয়ে বসে লিখে ফেলতেন একেকটি অমর সৃষ্টি। কবি কাজী নজরুলের তেমনি কিছু ছড়া/কবিতা ও গানের পেছনের গল্প পড়ে নেওয়া যাক আজ।

Nazrul-jevabe

 


বাবুদের তালপুকুরে

ছোটদের জন্য পাঠ্যবই লিখতেন আলী আকবর সাহেব। একদিন নজরুল ইসলামকে একটি পান্ডুলিপি দেখিয়ে মতামত চাইলেন। পুরো পান্ডুলিপিটি পড়ে নজরুল বললেন, 'আপনার পান্ডুলিপির ছড়াগুলো ছোটদের উপযোগী হয়নি। যদি বলেন তো আমি একটা ছড়া লিখে দিতে পারি। সঙ্গে সঙ্গে তিনি অনুরোধ করলেন নজরুলকে একটি ছড়া লিখে দেয়ার জন্য। নজরুলও দু’খিলি পান মুখে পুরে লিখলেন সেই বিখ্যাত ‘লিচু চোর’-- ‘বাবুদের তালপুকুরে/ হাবুদের ডালকুকুরে/ সেকি ব্যস করলো তাড়া/ বলি, থাম-একটু দাঁড়া...’

 

কাঠবেড়ালী! কাঠবেড়ালী! পেয়ারা তুমি খাও?

পুতুলের মতো ফুটফুটে সুন্দর মেয়ে অঞ্জলি। একদিন নজরুল বারান্দায় বসে আছেন। হঠাৎ তার চোখ পড়লো অঞ্জলির ওপর। নজরুল দেখলেন, একটা পেয়ারা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে চোখ-ঠোঁট উল্টিয়ে, হাত-পা নেড়ে অঞ্জলি যেন কার সঙ্গে কথা বলছে। নজরুল ভাবলেন, নিশ্চয়ই কেউ পেয়ারা গাছে উঠেছে। তার কাছে কাকুতি-মিনতি করে অঞ্জলি পেয়ারা চাইছে, কিন্তু সে পেয়ারা দিচ্ছে না। নজরুল ভাবলেন, অঞ্জলির হয়ে পেয়ারা চাইবেন। ছেলেটা দেয় তো ভালো, না দিলে নিজেই পেয়ারা পেড়ে দেবেন। মজার ব্যাপার হলো, অঞ্জলির সামনে গিয়ে কবি নজরুল গাছের ওপর কাউকেই দেখতে পেলেন না। তবে অঞ্জলি কথা বলছিলো কার সঙ্গে? নজরুল তখন অঞ্জলিকে জিজ্ঞেস করলেন, 'তুমি কার সাথে কথা বলছিলে?' অঞ্জলি বলল, 'কাকাবাবু! ওই দেখো দুষ্টু কাঠবেড়ালী। রোজ রোজ দুষ্টুটা পেয়ারা খেয়ে পালিয়ে যায়। আমাকে একটাও দেয় না।' কাঠবেড়ালীর সঙ্গে অঞ্জলির এই মান অভিমানের ঘটনাটি নজরুলকে এতোটাই চমৎকৃত করলো যে, এ ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য লিখলেন ‘খুকী ও কাঠবেড়ালী’ নামের সেই কবিতা--‘কাঠবেড়ালী! কাঠবেড়ালী! পেয়ারা তুমি খাও?/ গুড়-মুড়ি খাও! দুধ-ভাত খাও? বাতাবি লেবু? লাউ?...’ 

 

নজরুলের হাসি

একবার নজরুলকে তাঁর বন্ধুরা খুঁজছেন। এ বাড়ি ও বাড়ি খোঁজা হচ্ছে। হঠাৎ দূর কোনো বাড়ি থেকে অট্টহাসির শব্দ কানে আসতেই নজরুলের খোঁজ মিলল। এমনই ছিল নজরুলের হাসির সুনাম।

নিজের হাস্যরসপূর্ণ চরিত্রকে নজরুল নিজেই তুলে ধরেছেন একটি হাসির গানে, 

‘আমি দেখব হাসি
আমায় দেখলে পরে হাসতে হাসতে পেয়ে যাবে কাশি।
আমি হাসির হাঁসলী ফেরি করি এলে আমার হাসির দেশে
বুড়োরা সব ছোঁড়া হয়, আর ছোঁড়ারা যায় টেঁসে
আমার হাস-খালিতে বাড়ি, আমি হাসু-হানার মাসি।’

 

দিলাম তোমার চরণ তলে হৃদয় জায়নামাজ

কবি কাজী নজরুল ইসলাম যখন ইসলামি হামদ, নাত, গজল রচনা শুরু করলেন, তখনকার একটি ঘটনা। শিল্পী আব্বাসউদ্দিন একদিন অনেক খোঁজাখুজি করে নজরুলকে না পেয়ে সকালে তার বাসায় চলে গেলেন। বাসায় গিয়ে দেখলেন নজরুল গভীর মনোযোগ দিয়ে কী যেন লিখছেন। নজরুল ইশারায় আব্বাসউদ্দিনকে বসতে বললেন। আব্বাসউদ্দিন অনেকক্ষণ বসে থাকার পর জোহরের নামাজের সময় হলে তিনি উসখুস করতে লাগলেন।

নজরুল বললেন 'কী, তাড়া আছে, যেতে হবে?'

আব্বাসউদ্দিন বললেন 'ঠিক তাড়া নেই, তবে আমার জোহরের নামাজ পড়তে হবে। আর এসেছি একটা ইসলামি গজল নেবার জন্য। গজল না নিয়ে আজ যাওয়া হচ্ছে না।' (নজরুলকে যেহেতু বাউন্ডুলে স্বভাবের কারণে পাওয়া যেত না, তাই সবাই এইভাবে লেখা আদায় করত!)

নামাজ পড়ার কথা শুনে নজরুল তাড়াতাড়ি একটি পরিষ্কার চাদর তার ঘরের আলমারি থেকে বের করে বিছিয়ে দিলেন। এরপর আব্বাসউদ্দিন যথারীতি জোহরের নামাজ শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে নজরুল তাঁর হাতে একটি কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বললেন 'এই নাও তোমার গজল'। এই গজলটিই হলো--

হে নামাজী আমার ঘরে নামাজ পড় আজ
দিলাম তোমার চরণ তলে হৃদয় জায়নামাজ...

৮৭৮ পঠিত ... ২৩:০৩, আগস্ট ২৯, ২০২১

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top