আইয়ুব বাচ্চুর জীবনের কয়েকটি ঘটনা

৪১৯৫ পঠিত ... ১৮:২৫, অক্টোবর ১৮, ২০১৮

১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। ছোটবেলায় ডাকনাম ছিল রবিন। বিরাট একান্নবর্তী পরিবারে ছোটবেলা কাটিয়েছেন। খুব রক্ষণশীল বলে পরিবারে কেউ কখনো গানবাজনার ছায়াও মাড়ায়নি। এমন পরিবার থেকে শুধুমাত্র গানকে কেন্দ্র করে জীবন যাপন করার সিদ্ধান্তটা তাই বেশ আত্মঘাতীই বলা চলে। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকেই গিটার আর গানকে করে নেন জীবনের একমাত্র অনুষঙ্গ। 

প্রচণ্ড একাগ্রতায় রূপালী গিটারকে সঙ্গী করেই এগিয়ে গেছেন। গিটার লিজেন্ড হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। শুধুই কি গিটার? গান গাওয়া, লেখা, সুর করা, পরিচালনা করা, প্লেব্যাক দেওয়া থেকে শুরু করে অভিনয় এমনকি টিভি বিজ্ঞাপনেও ছিলেন তিনি। সেই সত্তরের দশকে ফিলিংস, এরপর সোলস হয়ে একেবারে নিজের ব্যান্ড এলআরবি! অসাধারণ সব গান দিয়ে সকল শ্রেণীর মানুষকে আলোড়িত করেছেন। আর গিটারের সাথে তার অদ্ভুত জুটি। ঐ ছয় তারে আঙুল চালিয়ে সুরের মূর্ছনায় মাতিয়েছেন লাখো মানুষকে। এই অসাধারণ মানুষটি আজ ১৮ অক্টোবর চলে গেলেন সবাইকে ছেড়ে।  

 

হাসান, আইয়ুব বাচ্চু ও জেমস

 

৪# ‘৩০ মিনিটে ৩০ টাকা!’

গিটারকে ধ্যানজ্ঞান করা আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম উপার্জন কিন্তু এই গিটার বাজিয়েই। সদ্য তরুণ এবি স্থানীয় একটি ব্যান্ডের সাথে এক অনুষ্ঠানে গিটার বাজিয়ে প্রথমবারের মত পারিশ্রমিক পেলেন, মাত্র ৩০ টাকা! ৩০ মিনিট গিটার বাজিয়ে এই টাকা পাওয়া! যদিও তখনকার ৩০ টাকাও একেবারে ফেলনা না, তবে এবি কখনো কখনো আক্ষেপ করেছেন, ঐ নোটগুলো না রেখে দেয়ার জন্য। অবশ্য রাখবেনই বা কী করে, বোহেমিয়ান জীবন শুরু করা এক তরুণের জন্য কোন টাকাই সাজিয়ে রাখার বিলাসিতা মানায় না!

 

৫# বোহেমিয়ান জীবনের শুরু!

গুরু আজম খানের প্রতি এবির কৃতজ্ঞতা আর ভক্তির কথা জানতে বাকি নেই কারো। তবে আজম খানের পাশেই গিটার বাজাতেন হ্যাংলা শরীরে লম্বা চুলের একজন, যাকে দেখেই আইয়ুব বাচ্চুর বোহেমিয়ান জীবনের স্বপ্ন দেখার শুরু। টিভিতে আজম খানের পাশে এই নয়ন মুন্সিকে দেখেছিলেন বাচ্চু। বুকখোলা শার্ট পরে, মাথাটা একটু সামনের দিকে ঝুঁকে চুলগুলোকে চোখের সামনে পড়ে যেতে দিয়ে উদ্দাম গিটার বাজাতে থাকা এই তরুণকে দেখে কিশোর রবিন বুঝতে পারে যে, তার গিটারই বাজাতে হবে। সেই শুরু, গিটার তো আর কখনোই থামালেন না আইয়ুব বাচ্চু।

 

৬# ‘বাউল’ বাচ্চু!

আইয়ুব বাচ্চুর রক্ষণশীল পরিবারে গান বাজনাকে কখনোই ভালো চোখে দেখা হয়নি। নয়ন মুন্সির গিটার শোনার পর থেকেই এই গিটারিস্টের ভক্ত বনে যান তিনি। গিটার আর লম্বা চুল, এই দু'য়ের কম্বিনেশনকে এবির বাবা-মা মোটেই ভালো চোখে দেখতেন না। ক্ষোভ আর আক্ষেপ নিয়ে ছেলের ‘বাউল’ হয়ে যাওয়া দেখতেন তারা। তাঁর চোখে গানবাজনা করা আর লম্বা চুল রাখাটা ‘বাউল’ হবারই সামিল। মা ভাবতেন, বড় ছেলেটা গোল্লায় চলে যাচ্ছে।

আর আইয়ুব বাচ্চুর পক্ষেও সম্ভব হয়নি ‘বাউল’ হয়ে ঘরে বসে থাকা। রূপালী গিটারকে সঙ্গী করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসে সত্যিকারের ‘বাউল’ জীবনই যেন শুরু করলেন। শুরু হলো ‘গোল্লায়' যাওয়া।

 

৭ # নতুন ভাই! 

সেই আশির দশক থেকেই অসংখ্য সম্ভাবনাময় শিল্পীকে প্রতিনিয়ত সুযোগ দিয়ে একসাথে কাজ করে প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করেছেন আইয়ুব বাচ্চু। তাদেরই একজন গায়ক ও নির্মাতা হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল। জুয়েলের প্রথম এ্যালবামটির অধিকাংশ গানের কথা সুর ছিল এবির। প্রথম এ্যালবামেই তিনি হিট! আর অসাধারণ মানুষ আইয়ুব বাচ্চু যেন ধীরে ধীরে হয়ে উঠলেন তার আপন ভাইয়ের মতই।

নব্বইয়ের দশকে বেশ প্রচলিত একটা ‘মিথ’ ছিল বাংলাদেশের ব্যান্ড ভক্তদের মাঝে। সেটা হচ্ছে, জুয়েল হচ্ছেন আইয়ুব বাচ্চুর আপন ছোট ভাই। প্রায়ই দেখা যেত, কোন ভক্ত বন্ধুদের সাথে এই বিষয়ে বাজি ধরে জুয়েল বা এবিকে এসে জানতে চাইছেন সত্যিকারের উত্তর। আইয়ুব বাচ্চু, এমনকি তার আপন ভাইয়েরা পর্যন্ত জুয়েলকে নিজেদের ভাই বলে পরিচয় দিতে কখনো কার্পণ্য করেননি!

 

৮# ‘রাঁধুনি’ এবি

আইয়ুব বাচ্চু কিন্তু গানকে একেবারে রান্নাই করতেন বলা চলে। ঢাকার মগবাজারে অবস্থিত তার নিজের মিউজিক স্টুডিওর নাম হচ্ছে ‘এবি কিচেন’! এখান থেকে এলআরবিসহ আরও অনেকের অসাধারণ সব গানের ‘রান্না’ হয়েছে। আর প্রধান রাঁধুনি এবি ছাড়া আর কেইবা হবে!

 


৯# এলআরবি থেকে এলআরবি!


১৯৯০ সালে সোলস থেকে বের হয়ে নিজের মতো করে গান করার ইচ্ছায় আইয়ুব বাচ্চু গঠন করলেন বাংলার ইতিহাসের অন্যতম সফল ব্যান্ড দল ‘লিটল রিভার ব্যান্ড’ বা সংক্ষেপে এলআরবি! তবে পরবর্তীতে তারা জানতে পারলেন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে ঠিক এই নামেই আরেকটি ব্যান্ড দীর্ঘদিন ধরে আছে। কিছুদিন পর ব্যান্ডের নাম বদলে রাখা হয়, ‘লাভ রানস ব্লাইন্ড’। সংক্ষেপে নামটা একই থেকে যায়!

৪১৯৫ পঠিত ... ১৮:২৫, অক্টোবর ১৮, ২০১৮

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top