বর্তমান বাংলাদেশ এখন বড় উত্তাল, অস্থির। আমাদের আলোচনা, সমালোচনা এমনকি বিচার চাওয়ার ও একমাত্র মাধ্যম ফেসবুক। তাও নানান অ্যালগরিদমের মধ্যে চলে এক বায়বীয় যুদ্ধ। সেখানে আপনার ইস্যুটা আগে আসতে হবে, ভালো রিচ থাকতে হবে, টানটান একটা হেডলাইন হবে, ভালো ভিউ হবে, ভাইরাল হবে, তারপর না আপনার ইস্যু আলোচনায় আসবে। এরপর আসবে শোক, বিবৃতি আর বিচারের আলাপ।
শুক্রবার গভীর রাতে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনাটা তাই আপনারা এখনও অনেকে জানেনই না। হয়তো কেউ কেউ জানেন! তবে সেটা হাদির ঘটনার গুরুত্বে আপনার হৃদয়ে কতটুকু জায়গা করে নিতে পেরেছে সেটাও আলোচ্য। তবে আপনাদের এখানে দোষ দেয়া যায় না। একটা মানুষ কত সময়ই বা ফেসবুকে পড়ে থাকতে পারে। ডেটা-ব্রডব্যান্ডেরও একটা ব্যাপার স্যাপার আছে। তাছাড়া এত এত ইস্যু, কোনটাকে গ্লোরিফাই করবেন আর কোনটাকে করবেন না সেটাও একটা কাজ বটে। মোদ্দা কথা, ইস্যুকে বিচারোপযোগী করার পেছনের কাজ বেশ লম্বা। কিন্তু মানুষ সেটা কেন যেন বুঝতে চায় না। হঠাৎ ঘটনা জানতে পেরে দুটো সমালোচনা করে নতুন ইস্যুর পিছনে সময় বিনিয়োগ করে।
ঘটনা হয়েছিল এক পিতা, বেলাল হোসেন; তার তিন মেয়ে বিথী (১৭), স্মৃতি (১৪), আয়েশা( ৭) ও স্ত্রীকে নিয়ে। স্বাভাবিকভাবেই শুক্রবার রাতে ঘুমিয়ে ছিলেন। তাদের ঘুম যেন অনন্তকালের হয় সেটা নিশ্চিত করতে দুর্বৃত্তরা ঘরের বাইরে থেকে বের হবার দুটো দরজা আটকে পেট্রোল ঢেলে ঘরের আগুন দেয়।
সবাই টিন ভেঙে বের হতে পারলেও ধোঁয়া আর আগুনের তীব্রতায় নিষ্পাপ ছোট্টো শিশু আয়েশাকে আর বের করা যায়নি। তার ‘আব্বু আমাকে নাও, আমাকে নাও’ আর্তনাদ শুনেও বাবা তাকে উদ্ধার করতে পারেননি। এই পিতার মনের অবস্থা কেউ কল্পনাও করতে পারবেন না। শোনা গেছে তিনি একটি রাজনৈতিক দলের (বিএনপি) সদস্য।
কিন্তু স্ত্রী-সন্তানদের একটা স্বাভাবিক জীবনের দাবীর কাছে এই পরিচয় কি অর্থবহ?
কেন আয়শা আক্তারের মতো ফুটফুটে একটা প্রাণবন্ত শিশুর বেঘোরে পুড়ে মরতে হয়? বাংলাদেশে জন্মানোই কি তার অপরাধ? নাকি তার বাবা বিএনপি করে দেখে সেটাই অপরাধ। কারও বাবা এনসিপি, জামায়াত, আওয়ামী লীগ করাও কী অপরাধ? অপরাধ আজকাল কীসে মাপা হয়! কী তার নিক্তি? কী তার একক?
বাবাদের এক্ষেত্রে কী করা উচিত?
আগেভাগেই সিধ কেঁটে রাখা উচিত নাকি সুড়ঙ্গ বানানো ভালো হবে যেন অন্তত প্রাণে সন্তানরা রক্ষা পায়? নাকি জগতের যাবতীয় সাত-পাঁচ থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখা উচিত! বন্ধ করে রাখা উচিত মুখ! যাতে কারও রোষানলে পড়তে না হয়। বেঁচে যায় প্রিয় সন্তান!



পাঠকের মন্তব্য