আমাদের একজন তারাবানু ছিলেন

২২১ পঠিত ... ২৩ ঘন্টা ৪২ মিনিট আগে

একাত্তর সালের অক্টোবর মাসের ঘটনা। খালের ওপাশে ভেড়ামারি গ্রামে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্প। একদিন তারা আবিষ্কার করল ১৪-১৫ বছরের এক পঙ্গু ও পাগল কিশোরীকে। যার সারা গায়ে গোবর ও কাদা, মাথায় চুলের জট, কাপড়-চোপড় ছেঁড়া। অপ্রকৃতস্থ কিশোরী গোবর কুড়াচ্ছে ক্যাম্পের পাশে। পাকিস্তানীরা তাকে নিয়ে মজা নিতে লাগল, গালাগাল করল, এটা-ওটা বলে ক্ষেপিয়ে তুলল। কিশোরীও ইচ্ছেমতো গাল দিলো ওদের, কিছুক্ষণ ক্যাম্পের আশপাশ ঘুরে বেড়াল, গোবর কুড়াল, তারপর চলে গেল।

রাত্তিরে খালের এপাশে খালিয়াভাঙ্গায় ক্যাম্প করে লুকিয়ে থাকা মুক্তিবাহিনীর নিখুঁত আক্রমণে পাকিস্তানি ক্যাম্প উড়ে গেল। পাকিস্তানিদের জানা হলো কিনা কে জানে— সকালবেলা যে অপ্রকৃতস্থ কিশোরী গোবর কুড়াতে এসে গালাগাল করে গেল ওদের, ওই কিশোরী অপ্রকৃস্থ নয়, তিনি ক্যাম্পের সৈন্যসংখ্যা ও অস্ত্রশস্ত্র সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে এসেছিলেন। তিনি পাগল নন, তিনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের তিনজন বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত দুর্ধর্ষ নারী মুক্তিযোদ্ধার একজন। তার নাম, তারামন বিবি। প্রকৃত নাম, তারাবানু।

যুদ্ধের পর এই অসীম সাহসী নারী আড়ালে চলে যান। বাইশ বছর পর তার সন্ধান মেলে। ততদিনে তিনি বিয়ে করে সংসার করছেন। সংসারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। এত বছর সংসার করা তার স্বামীও জানেন না, তার স্ত্রী একজন মুক্তিযোদ্ধা। তারাবানু কখনও বলেন নাই।

যুদ্ধশেষে তারামন ফিরে গিয়েছিলেন তারাবানুতে। যিনি আগেও ছিলেন তারাবানু, পরেও তারাবানু; মাঝখানে নয়মাসের জন্য ধারণ করেছিলেন তারামন, ধারণ করেছিলেন রণাঙ্গন, মা যেমন ধারণ করে তার সন্তান; আর বুকে মাইন বেঁধে মাতৃভূমির জন্য ছিনিয়ে এনেছিলেন টকটকে লাল সূর্য।

আজ তারামন বিবির সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী। জননী, তোমারে সালাম।

২২১ পঠিত ... ২৩ ঘন্টা ৪২ মিনিট আগে

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top