আসলেই কী মব-পলিটিক্সে নারীকে ব্যবহার করা হচ্ছে?

৫১ পঠিত ... ১৫:৪৩, নভেম্বর ১৯, ২০২৫

লেখা: আসিফ বিন আলী

মব-পলিটিক্স যারা করছেন, কিংবা যে ব্যক্তি মব রাজনীতির নায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের সমর্থনে আমরা দেখছি একাধিক উচ্চশিক্ষিত নারী সরব গলায় অবস্থান নিচ্ছেন। এই মবপন্থী দলগুলো সচেতনভাবেই ‘নারী কার্ড’ ব্যবহার করছে। আপাতদৃষ্টিতে যদিও এই নারীরা ইসলামের নিয়মে পর্দা করেন না কিংবা নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, তারপরও জামায়াত-শিবির ও তাদের বি ও সি টিমরা এই নারীদের নিজেদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে প্রচার চালাচ্ছে। বিনিময়ে এই নারীরাও তাদের পক্ষ থেকে আকুণ্ঠ সমর্থন জানাচ্ছেন, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে উসকানিও দিচ্ছেন। এই ধরনের কৌশলগত অংশগ্রহণকে আমরা পারফরমেটিভ জেন্ডার পলিটিক্স বলতে পারি। 

রাজনৈতিক মব খুব ভালো করেই জানে, সামনে যদি পুরুষ থাকে তাহলে পুলিশের গুলি বা লাঠিচার্জ সমাজে ‘স্বাভাবিক’ বলেই গণ্য হয়; কিন্তু সামনে যদি ‘মা–বোনেরা’ থাকে, তাহলে সেই একই পুলিশি অ্যাকশন সহজেই ‘নারী নির্যাতন’ হিসেবে মিডিয়া, আন্তর্জাতিক মহল ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ফ্রেম করা যায়। ফলে মিছিলের সামনে নারীদের দাঁড় করানো, ব্যারিকেডে তাদের বসিয়ে রাখা প্রায়ই পরিকল্পিত এক ধরনের 'shield' হয়ে ওঠে। অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলো জানে, নারীর ওপর সামান্য আঘাতও নিউজ ভ্যালু অনেক বেশি তৈরি করে; তাই ‘নারী কার্ড’ তাদের জন্য একটি মিডিয়া-স্মার্ট অস্ত্র, যা সহিংস সংঘর্ষকে দ্রুত নৈতিক ও আবেগীয় সমর্থন পাওয়ার সুযোগে পরিণত করে।

কিন্তু এটাকে শুধু ‘নারীকে ব্যবহার’ বলা হলে বিষয়টি আংশিক বোঝা হয়। অনেক নারীই বিশ্বাস করেন, তারা সামনে থাকলে পুলিশ ‘লজ্জা পেয়ে’ হয়তো কম সহিংস হবে; সেই কারণে তারা নিজেদের শরীর, ইজ্জতকে নৈতিক ঢাল হিসেবে ক্যালকুলেটেডভাবে ব্যবহার করেন। যেকোনো আন্দোলনের ক্ষেত্রেই এই ধরনের ব্যবহার অনেক সময় স্বাভাবিক ও গ্রহণযোগ্য কৌশল হিসেবে দেখা যেতে পারে।

সমস্যা তৈরি হয় তখন, যখন একদল উচ্চশিক্ষিত নারী প্রতিক্রিয়াশীল গ্রুপগুলোর পক্ষ নিয়ে নিজে থেকেই উসকানিমূলক ভাষা ব্যবহার করেন–যেমন, অমুক স্থাপনা মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে, হাতুড়ি-বুলডোজার নিয়ে মার্চ করতে হবে, কিংবা ‘আই ডোন্ট গিভ আ এফ-ওয়ার্ড’ বলে উত্তেজনা ছড়ান। এমন ক্ষেত্রে প্রশ্ন জাগে, এই নারী কি সত্যিই সকল নারীর সামগ্রিক কল্যাণের অবস্থান থেকে ভাবছেন? যদি তাই হয়, তবে যখন তিনি ভালো করেই জানেন ইসলামপন্থী দলগুলো নারী অধিকারের বিপক্ষে ও পুরুষতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণের পক্ষে, তখনও কীভাবে তাদেরকে এভাবে সমর্থন দিয়ে যান? উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জামায়াতে ইসলামী যে সংসদ সদস্য প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা করেছে, সেখানে একজনও নারী প্রার্থী নেই। এমন স্পষ্ট উদাহরণ থাকার পরও একজন ডাক্তার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক কিংবা ছাত্রী কেন এমন ধরনের গ্রুপের পক্ষে শুধু সমর্থনই দেন না, বরং তাদের মুখ বা ফেস হিসেবে ব্যবহার হন? বাস্তবতা হলো, এখানে নারী কোনোভাবেই পুরোপুরি ক্ষমতাহীন নন; বরং তিনি সচেতনভাবেই বিদ্যমান শক্তির ভেতর থেকে নিজের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপদ ও লাভজনক ডিলটা করতে চাইছেন। তাই তিনি হয়তো নারী স্বাধীনতায় ধারণাগতভাবে একমত হন, কিন্তু বাস্তবে এমনভাবে কাজ করেন, যেন ব্যক্তি হিসেবে তিনি কিছু প্রতীকী বা বাস্তব অর্জন করতে পারেন, সেখানে সামষ্টিক বা সামাজিক লাভের খুব বেশি প্রাসঙ্গিকতা থাকে না। নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণ যেমন তার অধিকার, তেমনি যেকোনো অংশগ্রহণের ভেতরকার এই পারফরমেটিভ জেন্ডার পলিটিক্স নিয়েও আমাদের সমালোচনামূলকভাবে কথা বলা জরুরি।

৫১ পঠিত ... ১৫:৪৩, নভেম্বর ১৯, ২০২৫

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top