লেখা: নূর রয়হান
১। নিরাপদ যৌন শিক্ষা পাবার অধিকার।
না, যৌন শিক্ষা বলতে কেমনে স্যাগস করতে হয় সেই শিক্ষারে বুঝায় না। শিশুর নিজস্ব শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানার অধিকার রয়েছে। অর্থ্যাৎ তার শরীরে কী কী অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আছে, কোনটার কী কাজ, সেই সম্পর্কে তাকে ওয়াকিবহাল রাখতে হবে। ঠাট্টা তামাশা কইরা তাকে ধোঁয়াশার মধ্যে না রাইখা তাকে তার শরীর সম্পর্কে জানতে দিতে হবে। এইটা তার অধিকার। শিশুর প্রতি যৌন নিপীড়নের পরিসীমা, অর্থ্যাৎ শিশুর সঙ্গে কোন কোন আচরণ যৌন নিপীড়নের পর্যায়ে পড়ে, সেই সম্পর্কে শিশু ও অভিভাবককে সচেতন করা। নিপীড়নের শিকার হলে কী করতে হবে, সেই তথ্য জানা। শিশুকে গুড টাচ-ব্যাড টাচ শেখানো। কৈশোরে মেন্সট্রুয়াল হাইজিন সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া। পিরিয়ডকালীন সময়ে কীভাবে নিজের শারীরিক যত্ন করতে হবে তা শেখা। পুষ্টিকর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জানা। (এখানে ধরেই নিসি যৌন ও প্রজনন শিক্ষা শুধু শিশুকেই দেওয়া হইতেছে। যদিও শিশু বয়সেই এই শিক্ষা প্রদান করার কথা, কিন্তু আমাদের দেশে তো উল্টা। কাজেই এই কথাগুলা শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক এমনকি বৃদ্ধবয়স পর্যন্ত প্রযোজ্য)
২। যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা পাবার অধিকার।
মেন্সট্রুয়াল হাইজিন বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা। মাতৃত্বকালীন সেবা পাবার অধিকার। গর্ভকালীন সময়ে, প্রসব-কালীন সময়ে, এবং প্রসব-পরবর্তী সময়ে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা পাবার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। যৌন রোগের সুচিকিৎসা পাবার অধিকার (জি না, শুধু স্যাগস করলেই যৌন রোগ হবে, তা না। আপনার বাড়ির মেয়েদের যে চুলকানি খাউজানি হয়, এগুলাও যৌন রোগ)। দেশে এমন বহুত নারী আছে যারা যৌন রোগের চিকিৎসা পায় না। জ্বর হইলে জামাইয়ে হয়তো নাপা আইনা দিবে, কিন্তু যৌন রোগের কথা বলতে গেলে সবাই মুখ চাইপা ধরবে। এইটা আনকমন কোনো ঘটনা না। ভেরি ভেরি কমন। নিরাপদ গর্ভধারণ ও গর্ভপাতের অধিকার। নিরাপদ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি চর্চার অধিকার। মানে আপনের বউ যদি পিল খাইতে চায়, সে যেন তার সিদ্ধান্তমতো খাইতে পারে। যদি পিল খাইতে না চায়, তাইলে তার সিদ্ধান্তমতো খাবে না। এখানে কেউ জোর জবরদস্তি করতে পারবে না।
৩। যৌন সহিংসতা ও বৈষম্য থেকে মুক্তি।
মানে হইল মন চাইলেই তারে গিয়ে ধর্ষণ করা যাবে না। গায়ের যেখানে সেখানে হাত দেওয়া যাবে না। মৌখিকভাবে যৌন হয়রানি করা যাবে না। টেক্সট দিয়াও না। মানে সম্মতি ছাড়া দিকপিক পাঠাইতে পারবেন না। এমনকি চোখ দিয়াও গিলা খাইতে পারবেন না। এইসব যৌন সহিংসতা থেকে মুক্তি পাবার নামই হইছে যৌন স্বাধীনতা। অর্থ্যাৎ আমার যৌনাঙ্গ আছে বলেই আমি তোমার দাস নই।
৪। ব্যক্তিগত যৌন ও প্রজনন জীবনের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার।
এএসপি পলাশের কাহিনীর পর শ্বশুরবাড়ি সংক্রান্ত একগাদা কাহিনী বাইর হইল না ফেসবুকে? জামাই বউরে দরজা আটকাইয়া ঘুমাইতে দেয় না। রাতেরবেলা হুট করে লোকজন ঢুইকা পড়ে ঘরের মধ্যে। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও নারীর বাথরুম ব্যবহারের প্রাইভেসি দেয় না। বাথরুমের ফুটা দিয়া লোকজন তাকাইয়া থাকে। আত্মীয়স্বজন আইসা আইসা নতুন বউয়ের সেক্স লাইফ নিয়া অসভ্য কৌতূহল প্রকাশ করেন, তাদের একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য জানার চেষ্টা করেন, এগুলা হচ্ছে যৌন ও প্রজনন জীবনের গোপনীয়তা লঙ্ঘনকারী আচরণ। এগুলা করবেন না।
অতএব, জি না, নারীর যৌন স্বাধীনতা নিশ্চিত কর প্ল্যাকার্ড দিয়া একশোটা ব্যাডার লগে শোওয়ার অধিকার চাইতেছে, বিষয়টা তা না।
ধন্যবাদ, আবার আসবেন।
পাঠকের মন্তব্য