লেখা: পুন্নি কবীর
ঢাকায় আজকে ইসলামিস্টদের একটা জনসভায় যে দাবি উঠছে রাষ্ট্রকে দিয়ে মানুষকে মুসলমান-অমুসলমান সার্টিফাই করানোর, এটা শুধু অযৌক্তিক না, রিপাবলিক কাঠামোর সাথেই যায় না। রাষ্ট্রের কাজ নাগরিককে নিরাপত্তা দেওয়া, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, আর জনকল্যাণমুখী কাজ করা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সেবা, অবকাঠামো এগুলো ঠিকঠাক চালানোই রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কার বিশ্বাস সঠিক আর কার ভুল, সেটা বিচার করা রাষ্ট্রের কাজ না।
এই ধরনের দাবি আসলে ধর্মের নামে মানুষকে ভাগ করে রাজনৈতিক লাভ তোলার স্ট্র্যাটেজি। এতে কারও ঈমান বাড়ে না, শুধু ভয়, সন্দেহ আর সংঘর্ষ বাড়ে।
আর বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে ইসলাম একরকম না। বড় বড় মাজহাব আর ধারাগুলো নিজেরাই আলাদা। আছে হানাফি-দেওবন্দি, আছে বেয়ারেলভি বা পীরের অনুসারী সুন্নি ধারা, আছে সালাফি-ওহাবি, তাবলিগের ভেতরে আলাদা লাইন, শিয়া সম্প্রদায়ও আছে। এসব ভেতরেই ব্যাখ্যার পার্থক্য অনেক। এখন রাষ্ট্র যদি এক দলের কথা ধরে, তাহলে অন্যদের তো নাকচ করতেই হবে। আজ যারা অন্যকে অমুসলিম বলাতে চাচ্ছে, কাল ক্ষমতার পালা বদল হলে তারাই অন্য দলের টার্গেট হবে। এটার কোনো শেষ নাই।
রাষ্ট্র এই খেলায় নেমে পড়লে সেটা আর রাষ্ট্র থাকে না, একটা মাজহাবি রেফারি হয়ে যায়। রাষ্ট্রের আসল কাজ আইন চালানো, মানুষের জীবন সহজ করা, সবার সমান মর্যাদা নিশ্চিত করা। কে কতটা মুসলমান এটা নির্ধারণ করা না।
এই দাবিগুলি শেষ পর্যন্ত শুধু সংখ্যালঘুদের না, পুরা সমাজকেই দুর্বল করে। মানুষের আধ্যাত্মিক বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ওপর লেবেল লাগানোর মত অপ্রয়োজনীয় কাজে রাষ্ট্রের যত ইনভল্ভমেন্ট বাড়ে, রাষ্ট্র তত ভেঙে পড়ে। আর ইতিহাস বলে, ধর্মের নামে কাউকে বাদ দেওয়ার অভ্যাস একবার শুরু হলে গড়াতে গড়াতে সেটা কার দরজায় গিয়ে দাঁড়াবে তা কেউ বলে দিতে পারে না।



পাঠকের মন্তব্য