ঐ সব ব্যাঁকা-তেরা ছবি এঁকে জীবন চলবে

২১৫ পঠিত ... ৭ ঘন্টা ৪৬ মিনিট আগে

আজ মহান ১৫ নভেম্বর ২০২৫ । দেশের প্রথম প্রফেশনাল কার্টুনিস্ট আহসান হাবীবের জন্মদিন।

জি, নিজের কথাই বলছি। আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে যখন ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে কার্টুনিস্ট জীবন শুরু করলাম এবং বাসায় এসে মাকে বললাম ‘মা, আমিই দেশের প্রথম প্রফেশনাল কার্টুনিস্ট হতে যাচ্ছি…’মা খুবই বিরক্ত হলেন। বললেন, ঐ সব ব্যাঁকা-তেরা ছবি এঁকে জীবন চলবে?

আসলে এই নভেম্বর মাসটা হচ্ছে আমাদের জন্মদিনের মাস। ৯ তারিখ ছিল বড় বোনের জন্মদিন। ১৩ তারিখ গেল বড় ভাইয়ের জন্মদিন। তাদের নিয়ে ফেসবুকে অল্প-বিস্তর লিখেছি (যারা দুজনকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা)। এবার নিজেকে নিয়ে একটু লিখি না কেন...?

আমি তখন ওয়ানে পড়ি, থাকি আমরা বগুড়ায় । একদিন বড় দুই ভাই তাদের এক বড়লোক বন্ধুর বাসায় জন্মদিন খেয়ে খুবই উত্তেজিত হয়ে বাড়ি ফিরল। জন্মদিনে যে এত মজা হয় কে জানত! কেক কাটা, ফুঁ দিয়ে মোম নেভানো তারপর গিফট পাওয়া আর খাওয়া-দাওয়াতো আছেই… সাথে আবার হ্যাপি বার্থডে গান। তারা ঘোষণা দিল আমাদের বাসায় জন্মদিন করা হবে। এবং আজকেই করা হবে। কারটা করা যায়? শাহীনেরটাই হোক। মানে আমি। ছোটো বোন মনি বেশি ছো্টো সে বুঝবেই না। কাজেই আমিই ফাইনাল। আমাকে কড়া ধমক দেওয়া হল, তোর জন্মদিন হবে, যা ভাল কাপড়-চোপড় পড়ে আয়। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। এ আবার কি?

পরে দেখা গেল ব্যাপারটা মন্দ না। কেক তো নাই, একটা মোম জ্বালানো হলো। বাইরে থেকে বাদাম আর কয়েকটা চকলেট আনা হলো আর মা একটু পায়েস বানিয়ে দিলেন। এই আমাদের বাসার প্রথম জন্মদিন। উপহার হিসেবে পেলাম একটা কাগজে মোড়ানো চকলেট সিগারেট, একটা রোল টানা বাংলা খাতা আর একটা নেল কাটার! (উপহার হিসেবে নেল কাটার কেন পেলাম এটা আমার কাছে আজও রহস্য) এই তিন উপহার পেয়ে আমি মহা উত্তেজিত। জন্মদিন ব্যাপারটা তো মন্দ না।

সন্ধ্যায় আমাদের দীর্ঘ দেহি সুদর্শন বাবা যখন অফিস থেকে ফিরে এসে তার পুলিশের ড্রেস খুলছেন,  সবাই গিয়ে উত্তেজিত ভাবে জানাল। আজ বাসায় বিরাট একটা ঘটনা ঘটেছে, শাহীনের জন্মদিন হয়েছে (সেদিন কিন্তু ১৫ নভেম্বর ছিল না। জন্মদিন করতে হবে তাই করা, ডেট দিয়ে কি আসে যায়)। বাবা শুনলেন খুব একটা খুশী হলেন বলে মনে হল না। আস্তে করে বললেন, বাবারা নিজেরা নিজেরা জন্মদিন করলে তো হবে না। এমন কিছু করো যেন মানুষ তোমাদের জন্মদিন করে… বাবার এই উচ্চাঙ্গের কথা অবশ্য আমরা বুঝলাম বলে মনে হয় না। পরবর্তীতে কার জন্মদিন হতে পারে তার গবেষণা চলতে লাগল।

এখন সময় বদলেছে এত বছর পর ৬৮তম বছরে দাঁড়িয়ে বলা যায় জন্মদিনের প্যাটার্ন বদলে গেছে।

১৫ নভেম্বরে আমার একমাত্র কন্যার উইশ দিয়ে জন্মদিনের শুরু তারপর পরিচিতরা একটা-দুটো কেক নিয়ে হাজির হয়, কেউ বাসায় কেউবা অফিসে (সাথে টুক টাক ফ্রি উপহার)। এত এত কেকের ভীড়ে আমার মনে পরে সেই প্রায় ৫০ বছর আগে আমার প্রথম জন্মদিনে কেকহীন একটা ছোট্টো মোমের কথা ... যেটা ফুঁ দিয়ে নেভাতে আমার যথেষ্ট কষ্ট হচ্ছিল। আহা জীবন গিয়েছে চলে আমাদের কুড়ি কুড়ি বছরের পার... (প্রিয় কবি জীবনানন্দের থেকে ধার করতেই হয়) যেন জীবনের প্রায় শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি, ভাবি পৃথিবীতে আমার কি আদৌ কোন খুব

প্রয়োজন ছিল? সেই এক প্রাচীন দার্শনিকের মতো বলতে ইচ্ছে করে... ‘পৃথিবীতে এসে তুমি যে জীবন পেয়েছ মনে রেখ সেটা একটা ছোট্টো পেঁয়াজ ছাড়া আর কিছু নয় যার খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে একসময় আবিস্কার করবে তার ভিতরে আসলে কিছু নেই…’ হ্যাঁ, সেই কিছু নেই দেখার অপেক্ষায় আরও কিছুদিন হয়তো বেঁচে থাকব আমরা। শুভ জন্মদিন আহসান হাবীব। মানে আমি নিজেই... হা হা হা!!

(যারা শুভেচ্ছা জানাবেন তাদের আগাম ধন্যবাদ, এবার যারা উপহার দিতে মিস করেছেন আগামীবারের জন্য প্রস্তুত হোন। সবাই ভাল থাকুন।)

২১৫ পঠিত ... ৭ ঘন্টা ৪৬ মিনিট আগে

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top