সম্প্রতি নিউইয়র্কে হয়ে গেল জাতিসংঘের ঘটনাবহুল ৮০তম সাধারণ অধিবেশন। যেখানে ঘটে গেছে নানা ঘটনা, দুর্ঘটনা, বিতর্ক, হাস্যকর বক্তব্য ইত্যাদি। সম্ভবত নিউইয়র্কের নিরাপত্তা বাহিনী অর্ধেক সময় ব্যস্ত ছিল বাংলাদেশের মানুষদের সামলাতে সামলাতে। এছাড়া ট্রাম্প, গণহত্যাকারী নেতানিয়াহুর বক্তব্য, বাঙালিদের মারামারিসহ দেখে নেওয়া যাক এই অধিবেশন ঘিরে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য সব ঘটনা।
১. ট্রাম্পের সাথে মশকরা ও ট্রাম্পের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব: ট্রাম্প এবং মেলানিয়া ট্রাম্প জাতিসংঘ অফিসে ওঠার সময় এস্কেলেটর বা চলন্ত সিঁড়ি বন্ধ হয়ে যায়। একটু বিরক্ত ট্রাম্পকে দেখা যায় স্ত্রীসহ হেঁটেই সেই সিঁড়ি পাড়ি দিচ্ছেন। ট্রাম্পের চোখে-মুখে বিরক্তির ভাবও ছিল স্পষ্ট। এরপর ট্রাম্প বক্তব্য দেওয়ার সময় টেলিপ্রম্পটার নষ্ট হয়ে যাওয়া, এবং শেষমেষ তিনি বক্তব্য দেওয়ার সময় অডিও নিয়ে কারিগরি সমস্যায় পড়েন। সবমিলিয়ে ট্রাম্পের একটু ক্ষেপে যাওয়াই স্বাভাবিক। খেপে-মেপে তিনি এই তিন ঘটনাগুলোকে তার প্রতি ষড়যন্ত্র হয়েছে বলে দাবি করেন। সেই সাথে তিনি বলেন, 'যারা এই কাজ করেছে, তাদের গ্রেপ্তার করা উচিৎ।’ সপ্তাহান্তে লন্ডন টাইমসে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের কর্মীরা ট্রাম্পকে হেনস্থা করতে এস্কেলেটর ও লিফট বন্ধ রেখে কৌতুক করেছেন।
২. ট্রাম্পের ট্রাম্পবাজি: গত কিছুদিন ধরে জাতিসংঘে ট্রাম্প বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দেন, যাকে ট্রাম্পের অনুসারিরা ট্রাম্পবাদ বা ট্রাম্পিজম বলে বর্ণনা করেন। আর ট্রাম্প সমালোচকদের কাছে এটি ছিল ট্রাম্পবাদের চূড়ান্ত উন্মাদনা। এর মাঝে, যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় চাওয়া মানুষের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ বরাদ্দ করা নিয়েও সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, ‘জাতিসংঘের কাজ আগ্রাসন বন্ধ করা, সেগুলো তৈরি করা ও অর্থায়ন করা নয়।’ এছাড়া পুরা পৃথিবীতে গ্যাঞ্জাম লাগায়ে তিনি নিজেকে ৭টি যুদ্ধ থামিয়ে সেভিওর দাবি করেন, এবং বারাক ওবামার মিমের মতো নিজেই নিজের গলায় নোবেল মেডেল পরানোর দাবি রাখেন। নিজে ফাঁকা বুলি মারতে মারতে তিনি জাতিসংঘকে বলেন, ‘ফাঁকা বুলি কোনো যুদ্ধ থামায় না।’
৩. নেতানিয়াহুর বক্তব্যের সময় ওয়াকআউট: জাতিসংঘে এবার অধিবেশনের সবচেয়ে অনুপ্রেরণামুলক, চমকপ্রদ বিষয় ছিল ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ভাষণ দেওয়ার সময় অধিকাংশ দেশের প্রতিনিধিরা কক্ষ ত্যাগ করেন। এসময় তিনি প্রায় খালি কক্ষের মধ্যে ভাষণ দেন। তার ভাষণের সময় যে কয়েকজন উপস্থিত ছিল খুব সম্ভবত তারা মাইকের লোক, ডেকোরেশনের লোক কিংবা কারেন্টের লোক!
৪. গণহত্যাকারী নেতানিয়াহুর মিথ্যাচার: জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর বক্তব্যে, ৬৫ হাজার ফিলিস্তিনি হত্যা করেন। যদিও জাতিসংঘের ভাষণে তিনি শুধুমাত্র হামাস দ্বারা ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিকদের জিম্মি রাখার নিন্দা করেন। এ যেন শেখ হাসিনার মেট্রোরেল নিয়ে মায়াকান্নার কথা মনে করিয়ে দেয়। তিনি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বিরোধিতা করে পরোক্ষভাবে গণহত্যাকে সমর্থন করেন। অনেক দেশের প্রতিনিধিদের বয়কয়টের মুখে নেতানিয়াহু বলেন, ‘পর্দার আড়ালের একটি গোপন কথা আপনাদের বলতে চাই। তা হলো, অনেক নেতাই প্রকাশ্যে আমাদের নিন্দা করেন আর আড়ালে ধন্যবাদ জানান।’
৫. ডিম ছোড় কাণ্ড: নিউইয়র্কে জাতিসংঘের অধিবেশনে যাওয়ার সময় জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের ওপর ডিম নিক্ষেপ করেছে পলাতক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ফ্যাসিস্ট আমলে ২০১৯ সালেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলে আখতার এবং কিছু নারীদের ওপর ডিম নিক্ষেপ করে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ যেন এখনও কোনো আফসোস নেই, নিজেদের কৃতকর্মকে আরও প্রাউডলি এক্সেপ্ট করা।
৬. ঘুষি মেরে ছাত্রলীগের এক নেতার দুইটি দাঁত ভেঙে দিল বিএনপি কর্মী: জাতিসংঘের অধিবেশন ঘিরে বিভিন্নভাবে বাংলাদেশিপনা দেখিয়ে দিয়ে আসল বাংলাদেশিরা। সেই নিউইয়র্কে গিয়েও দেশের কালচার মারামারি করে দেশকে নিউইয়র্কের মাটিতে গর্ব ভরে তুলে ধরলেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো। এর মধ্যে একটা হচ্ছে, বিএনপির এক কর্মী নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের এক নেতাকে ঘুষি মেরে তার দুইটা দাঁত ভেঙে দেয়। পরবর্তীতে অবশ্যে নিউইয়র্কের পুলিশ বাংলাদেশের পুলিশের মতো বসে না থেকে স্পটে বিএনপির কর্মীকে অ্যারেস্ট করে।
৭. ভিআইপি ও আমজনতা মাঁখো: ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর গাড়িবহর আটকে দিল নিউইয়র্ক পুলিশ। কাহিনী কী? বড়ভাই ট্রাম্পের গাড়িবহর যাবে। পরে গাড়ি থেকে নেমে মাখোঁ ফোন দিলেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকেই। হেসে বললেন, ‘কেমন আছেন? আন্দাজ করুন তো কী ঘটেছে? আমি রাস্তায় অপেক্ষা করছি। কারণ, সবকিছু আপনার জন্য থেমে গেছে।’ পরে অবশ্য মাখোঁকে হেটে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। তিনি মনে মনে বলেন, অনেক উপকার হয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য