বস্তি উচ্ছেদ ফর্মুলা ও ঢাবির হকার উচ্ছেদ ফর্মুলা

৮৩ পঠিত ... ৮ ঘন্টা ৫৫ মিনিট আগে

লেখা: মাহা মির্জা

দেশের ৮৬ ভাগ মানুষ ইনফরমাল অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত। অর্থাৎ এই ভূখণ্ডের বেশিরভাগ মানুষ আদতে ইনফরমাল। ইনফরমাল মানে কাগজ নাই, রেজিস্ট্রেশন নাই, সরকারের নথিতে স্বীকৃতি নাই। 

লিগালিটি আর ইল্লিগ্যালিটির অতি সরলীকৃত এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক জ্ঞান-বিযুক্ত মানদণ্ড দিয়ে বাংলাদেশের ইনফরমাল খাতের কর্মীদেরকে বিচার করতে হলে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকেই আল্টিমেটলি গঞ্জিকা ব্যবসায়ী হিসাবে চিহ্নিত করতে হবে।

এই ধরণের কালেকটিভ ডি-হিউম্যানাইজেশনের ক্যাম্পেইন যখন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে সিস্টেমেটিকালি প্রচারিত হতে থাকে, তখন দুটো জিনিস বোঝার দরকার হয়ে পড়ে। এক. শ্রমিজীবি মানুষের ক্রিমিনালাইজেশনের মনস্তত্ব; এবং রাজনীতি বা ইতিহাসের কোন মুহূর্তগুলোতে এই ক্রিমিনাইলেজেশনটা দরকারি হয়ে পড়ে, এবং কোন সুনির্দিষ্ট  গোষ্ঠীর স্বার্থে। দুই. পরবর্তী  দুই-তিন মাসের মধ্যে ওই এলাকাগুলোতে কী কী পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। পরিবর্তন বলতে, ক্যাম্পাসকে ঘিরে সস্তা ও বৈচিত্রপূর্ণ খাদ্যের চাহিদা যেহেতু থাকবেই, তাই সাপ্লাই ডিমান্ডের সহজ সূত্র অনুসারেই এই উদ্যানগুলো খালি পড়ে থাকবে না। এক দলের বদলে আরেক দল আসবে। অথবা নতুন নেগোসিয়েশন হবে।

এগুলো আসলে ফর্মুলার মতোই কাজ করে। বস্তি উচ্ছেদ এর একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। আদতে ঢাকা শহরের লক্ষ লক্ষ ঠিকা বুয়া, হকার বা অটোয়ালাদের প্রায় সকলেই বস্তিতেই থাকেন। এরা সকলেই খেটে খাওয়া মানুষ। কিন্তু উচ্ছেদের আগে বস্তি এলাকার সবাইকে গণহারে গাঁজা ব্যবসায়ী ও যৌনকর্মী হিসাবে চিহ্নিত করা নতুন কিছু নয়। এবং উচ্ছেদের মাসখানেকের মধ্যই একই জমিতে সুপারমার্কেটের নির্মাণ কাজ শুরু হওয়াও স্বাভাবিক। আওয়ামী আমলে বস্তি মানেই ক্রিমিনাল এবং জুয়াখোর–এই  আখ্যা দিয়ে উচ্ছেদের ঘটনা খুবই সাধারণ ছিল। তখন এইসব প্রচারণা চালাত ছাত্রলীগ।

যাইহোক হকারি, অটোরিকশা, দারিদ্র বা ভাসমান মানুষের একটা পলিটিকাল ইকোনোমি আছে। তারা টুপ্ করে আকাশ থেকে পড়ে না।

-কয়েক দশকের শিল্পায়নের ব্যার্থতা,

-শিল্পায়নের নামে পাবলিক ব্যাংকের টাকা লুটপাট,

-কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধি,

-কৃষি অর্থনীতিতে ঠিকঠাক বিনিয়োগ না হওয়া (কৃষি আমাদের সামগ্ৰিক বাজেটের মাত্র ৫ পার্সেন্ট),

-একের পর এক পাবলিক কলকারখানা বন্ধ হওয়া,

-কয়েকটি বড় কোম্পানির সিন্ডিকেটের কারণে পোল্ট্রি এবং ডেইরি করে টিকে থাকতে না পারা,

-গার্মেন্টস শিল্পের জবলেস গ্রোথ ও ক্রমাগত ছাঁটাই (অর্থাৎ রফতানির পরিমান বৃদ্ধি পেলেও একই অনুপাতে কর্মসংস্থান তৈরী না হওয়া),

- রফতানি আয় দেশের ভিতরে পুনর্বিনিয়োগের বদলে বিদেশে পাচার হওয়া, এবং সর্বোপরি অটোমেশনের দৌরাত্ম্য–এই সবকিছু মিলিয়ে ফর্মাল অর্থনীতির সম্ভাবনা থেকে ছিটকে পড়া কোটি কোটি মানুষ দেশের লো-ইনকাম বা উঠতি মধ্যবিত্তের দৈনন্দিন চাহিদা, শখ, বা ডিস্পোসেবল ইনকামকে মাথায় রেখে সাপ্লাই চেইনের একটি মাল্টি ডাইমেনশনাল অর্থনীতি তৈরী করে। ঘরে বানানো কতবেলের আচার থেকে শুরু করে থাইল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত সস্তা প্লাস্টিকের স্যান্ডেল, সবকিছুই এই ইনফরমাল হকারি খাতের অনুষঙ্গ, উপকরণ।

ঢাকা শহর আয়তনগত ভাবে ঘিঞ্জি শহর। ক্যাপাসিটির তুলনায় বহু বহু গুন্ বেশি মানুষকে আশ্রয় দিতে হয় এই হতভাগা শহরকে।

এখানে গেটেড কমিউনিটি বা জেন্ট্রিফিকেশনের (ভদ্রলোকিকরণ) খায়েশ, অথবা নিজেদেরকে রাজধানীর  কমপ্লেক্স অর্থনৈতিক/সামাজিক বাস্তবতা থেকে সম্পূর্ণ বিযুক্ত করে ফেলার প্রয়াস একটা এবসার্ড গণবিরোধী অবস্থান। নিজের দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি এই বুঝ, এই অ্যাটিচুড, এই নাকসিঁটকানি নিয়ে বিসিএস দিয়ে আমলা হচ্ছে বলেই, আমলাতন্ত্র নামের এক মনস্টার তৈরী হয়। তবে এই গণবিরোধী, গরিব বিরোধী মনস্তত্বের পিছনে কে দায়ী, কেন দায়ী সেটা সমাজবিজ্ঞানের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা।

৮৩ পঠিত ... ৮ ঘন্টা ৫৫ মিনিট আগে

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top