বাংলাদেশি মুসলমানদের কথা মানুষ বিশ্বাস করছে না কেন? ঘটনা কী?

৬৪১ পঠিত ... ৭ ঘন্টা ১৯ মিনিট আগে

ঢাবির কার্জন হলে মায়িশা নামে ছাত্রী সংস্থার এক নেত্রী 'হিজাব ও পর্দা' করার কারণে বাজেভাবে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। নিজের ফেসবুক পোস্টে এমনটা জানিয়েছেন তিনি। যে মেয়ের দ্বারা উনি হেনস্থা হয়েছেন, তাকে চিনতে পারেননি। ক্যাম্পাসের নাকি ক্যাম্পাসের বাইরের তাও জানেন না। ঘটনার আকস্মিকতায় মায়িশা এতটাই হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন যে, উনি কাউকে ডাকতে পারেননি, হেনস্থাকারীকে আটকাতে পারেননি, পারেননি একটি ছবি তুলতে বা ভিডিও করতে। এমন হওয়াটা স্বাভাবিক। এমন বাজে ঘটনা আমার সাথে ঘটলেও উপস্থিত অনেক বুদ্ধিই মাথায় খেলত না। বলা হচ্ছে, কার্জনের যে স্থানে মায়িশা হেনস্থার শিকার হয়েছেন সেখানে সিসি ক্যামেরাও নাই। ফলে এই হেনস্থার একমাত্র প্রমাণ মায়িশা নিজে ও মায়েশার ফেসবুক পোস্ট। আর কিছু এখনও পর্যন্ত নাই। ভিক্টিমকে আমি অবিশ্বাস করতে চাই না। মায়িশার জন্য আমার সহানুভূতি রইল। এই ট্রমা কাটাইয়া উইঠা মায়েশা যথাযথ বিচার পাক এটা আমি চাই।WhatsApp Image 2025-11-01 at 3.46.05 PM (1)

আমি আলাপ করতে চাই অন্য একটা বিষয় নিয়ে। মায়িশার এই পোস্টে ২ হাজারের বেশি হাহা রিঅ্যাক্ট। কমেন্টেও প্রচুর হাহা রিঅ্যাক্ট। অনেকেই মায়েশার এই ঘটনা বিশ্বাস করতে চান না। সেটা তারা কমেন্টে জানাচ্ছেন। তারা সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চান।  

এইটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বাংলাদেশের মুসলমানদের আনা অভিযোগ এখন আর কেউ বিশ্বাস করতে চায় না। কিন্তু কেন? চলুন একটু বুঝি।

বোঝার আগে ৫ আগস্টের পরের কিছু সিগনিফিক্যান্ট ঘটনা বলি। প্রথম কেস মুফতি আমির হামজা। তিনি বাজারে তিনটা গুরুত্বপূর্ণ মিথ্যা ছড়াইছেন। 

প্রথম মিথ্যা, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ১৫৮ সমন্বয়কের ১০৮ জনই শিবিরের। এই ডাহা মিথ্যা উনি যেখানে-সেখানে বলেন নাই। বলেছেন, সোহরাওয়ার্দির উদ্যানের এক বিশাল সমাবেশে।

দ্বিতীয় মিথ্যা, উনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যয়ে চান্স পেয়েছিলেন। কিন্তু ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখেন সকালবেলা স্টুডেন্টরা মদ দিয়ে কুলি করে। শিক্ষক পিটায়।

তৃতীয় মিথ্যা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা হলে নাকি ছাত্রলীগ ১৬ বছর আজান দিতে দেয় নাই।

এই তিনটা ডাহা মিথ্যা নিয়া ফেসবুকে ট্রল, মিমের বন্যা হয়ে গেছে। এখনও এইসব ঘটনা নিয়ে ট্রল হয়।

এই ঘটনার ইম্প্যাক্ট আছে। এইসব ঘটনায় শুধু মুফতি আমির হামজাই মানুষের বিশ্বাস হারান নাই। বেশিরভাগ হুজুররাই মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারাইছেন। মুফতি আমির হামজা ছাড়াও দীর্ঘদিন ঘরে মিথ্যা ছড়ানোয় নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন, মুফতি কাজী ইব্রাহীম, মাওলানা তারেক মনোয়ারের মতো ওয়াজের মার্কেটের বক্তারা!

দ্বিতীয় কেস ফাতেমা তাসনিম জুমা। তিনি এক টকশোতে জানিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম ক্লাসে এক শিক্ষক একটা কবিতার প্রথম লাইন বলে শিক্ষার্থীদের কাছে দ্বিতীয় লাইন শুনতে চেয়েছেন। ক্লাসে তেমন কেউ দ্বিতীয় লাইন বলতে পারেননি। পেরেছেন অল্প দু-একজন। তাদের মধ্যে জুমা একজন। জুমার ভাষ্যমতে, এতে স্যার ক্ষেপে গিয়েছেন। কারণ, জুমা হিজাব পরা ছিল। হিজাব পরিহিত একটা মেয়ে কীভাবে কবিতার লাইন পারে বাকিরা কেন পারে না এ নিয়ে স্যার বাকিদের বকা দিয়েছেন। যে ট্রমা থেকে জুমা হিজাব পরা বন্ধ করেছিলেন। 

কিন্তু জুমারই ডিপার্টমেন্টের রাহেমা নামের আরেক শিক্ষার্থী সেদিনের ঘটনার একটা ভিন্নরকম কথা জানিয়েছেন। যেদিনের কথা জুমা বলছেন, সেদিন এই শিক্ষার্থীও ক্লাসে ছিল। এই শিক্ষার্থীর মতে হিজাবের জন্য সেদিন স্যার কোনো ধরনের বাজে কথা বলেননি। বরং স্যার জুমাকে ধন্যবাদ দিয়ে বাকিদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, এটা খুবই কমন একটা কবিতা। সবারই এটা জানা উচিত ছিল। রাহেমার পোস্টে কমেন্টে তাদের অনেক সহপাঠিই বলেছেন, জুমার এই ঘটনা আসলেই তারা জানেন না। বরং রাহেমার কথাটাই ঠিক। এবং যেই শিক্ষকের কথা বলা হচ্ছে, তিনি ক্যাম্পাসে সজ্জন শিক্ষক হিসেবেই পরিচিত। কেউই তার মধ্যে হিজাব বা অন্যকারও বিশ্বাস, আচার-কালচারের প্রতি বিদ্বেষ দেখেননি। শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি দারুণ একজন শিক্ষক বলেই পরিচিত ছিলেন। বরং জুমার দাবি নিয়ে বাকিরা খুবই হতাশা প্রকাশ করেছেন ও জুমার দাবিকে মিথ্যা ও স্ট্যান্টবাজি হিসেবেই সাব্যস্ত করেছেন।

তৃতীয় কেস মুফতি মুহিবুল্লাহ! যাকে ই/স/ক/ন থেকে চিঠি দিয়ে অপহরণ করেছে বলে অভিযোগ ওঠে। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বেশ উত্তপ্তই ছিল। যেখানে বিক্রমপুরী নামের এক হুজুর, সাদিক কায়েম, উসমান হাদি, জুমাসহ আরও অনেকেই ফুয়েল দিয়েছেন। ই/স/ক/নের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন। এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশে বড় ধরনের ঝামেলা লেগে যেতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জানা গেল, গন মুফতি নিজেই অপহরণের নাটক করে পালিয়েছেন। তাকে কেউ অপহরণ করেনি। পুলিশের কাছে সে নিজেই সব স্বীকার করেছেন। 

মিথ্যা ছড়ানো ও মিথ্যা ছড়িয়ে ধরা খাওয়ার লাইনে আরও আছেন আবু ত্বহা আদনান, বহুবিবাহের ব্র‍্যান্ড অ্যাম্বাসেডর কাশেমি, মোহাম্মদ ইশরাকসহ আরও অনেকে। তাদের ঘটনা আমি আর বিস্তারিত না বলি।

ডাকসু নির্বাচনের সময়ের একটা ঘটনার কথাও বলতে হয়! চারুকলাতে শিবির প্যানেলের সব প্রার্থীদের নিয়ে একটা ব্যানার টাঙানো হয়েছে। সেই ব্যানারের প্রতিটি প্রার্থীর ছবিতে শিং লাগিয়ে বিকৃত করেছেন কারা যেন। সেখানে সাবিকুন্নাহার তামান্না নামে একটা হিজাব পরিহিত প্রার্থীও ছিলেন। শিবিরের প্যানেলের সবার মাথায় শিং আঁকলেও শিবির পুরো ব্যাপারটিকে ফ্রেমিং করেছেন হিজাব বিরোধীতা হিসেবে। ফেসবুক জুড়ে প্রচার করেছেন শুধুই সাবিকুন্নাহারের ছবিটি। এভাবে নানান সময়ে নানান কৌশলে সচেতনভাবেই শিবির–শিবির বিরোধীতাকে ইসলাম বিরোধীতা, কোথাও হিজাব বিরোধীতায় ফ্রেমিং করেছেন। মুসলমানদের দাঁড় করিয়ে দিতে চেয়েছেন বাকিদের সামনে। WhatsApp Image 2025-11-01 at 3.50.17 PM

গত এক বছরে এমন প্রতিটি ঘটনা সমাজে মুসলমানদের প্রতি, মুসলমানদের অভিযোগের প্রতি মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। খুবই স্বাভাবিক, আপনি প্রতিনিয়ত ধর্মকে ব্যবহার করে নিজের ব্যক্তিস্বার্থে ও রাজনৈতিক স্বার্থে মিথ্যা ছড়িয়ে ধরা খাবেন, আর মানুষ আপনাকে বিশ্বাস করবে—এমনটা তো হয় না! মিথ্যা শুনতে শুনতে মানুষ একসময় আপনার সকল কথাকেই মিথ্যা ও বানোয়াট ধইরা নিবে। কখনও কখনও আপনার অভিযোগ শতভাগ সত্য হইলেও মানুষ তা ছুঁড়ে ফেলে দিবে। কারণ দিনের পর দিন আপনি ধর্মকে ব্যবহার করে স্ট্যান্টবাজি করতে গিয়ে নিজের বিশ্বাসযোগ্যতাকে তথা দেশের মুসলমানদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ম্যানহোলে ফেলে দিয়েছেন।  

মায়িশার কাছে আমি আবারও দুঃখিত! মায়েশা, আপনার সাথে যা ঘটেছে তা একদমই উচিত হয় নাই। আমি আপনার ঘটনাটা বিশ্বাস করেছি। আপনি শুধু ঢাবি প্রশাসনকে বলেন, এই ঘটনার সঠিক তদন্ত করে অপরাধীকে খুঁজে বের করতে। যেখানে আপনি হেনস্থার শিকার হয়েছেন সেখানে সিসিটিভি না থাকলেও এই অপরাধীকে খুঁজে বের করা সম্ভব। সেজন্য আপনাকে একটু কষ্ট করতে হবে। যে মেয়েটা আপনাকে হ্যারাস করেছে তার পোশাক কেমন ছিল? গায়ের রঙ কেমন ছিল? চুল ছোট ছিল না বড়? পোশাকের কালার কী ছিল? মেয়েটি কি মোটা ছিল নাকি চিকন? খাটো না লম্বা? 

আপনার মনে আছে এমন কোনো একটা বৈশিষ্ট্য আপনি মনে করে জানান। যা দিয়ে এই মেয়েকে শনাক্ত করা যাবে। এরপর ঢাবি প্রশাসনকে বলেন, কার্জন থেকে বের হওয়ার পথের সিসিটিভি ফুটেজগুলো চেক করতে। হেনস্থাকারী নিশ্চয়ই কার্জন থেকে উড়ে বা হাওয়ায় মিলিয়ে বের হয় নাই! কোনো না কোনো পথ দিয়েই বের হয়েছে। কার্জন বা কার্জনের আশেপাশের কোনো না কোনো সিসিটিভিতে নিশ্চয়ই তাকে দেখা যাবে। এরপর তাকে ধরে সুষ্ঠু বিচার করুন। আপনারা মানুষের কাছে যে বিশ্বাসযোগ্যতা হারাইছেন তা ফিরিয়ে আনার জন্য এই ঘটনা প্রমাণ করা অত্যন্ত জরুরী। যদি প্রমাণ করতে না পারেন, তাহলে আপনাদের কথার, অভিযোগের গ্রহণযোগ্যতা দিনদিন আরও কমবে। প্রতিটি অভিযোগ হয়ে থাকবে কেবলই একটি রাজনৈতিক প্রপাগাণ্ডা।

আর হে মুসলমান, আপনাদের ধর্ম নিয়া কারা কারা ব্যবসা করছে তা বোঝার ও চেনার চেষ্টা করেন। আপনার ধর্মরে কারও রাজনৈতিক টুল হইতে দিয়েন না, মুনাফেকির টুল হইতে দিয়েন না, স্ট্যান্টবাজির টুল হইতে দিয়েন না, ভোটের রাজনীতির টুল হইতে দিয়েন না। আপনার ধর্মকে ব্যবহার করে কেউ যেন আরেকজনকে হত্যাযোগ্য করতে না পারে। আপনার ধর্মকে যেন কেউ নির্যাতনের টুল বানাতে না পারে। যারা ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে এদেরকে প্রতিরোধ করেন। আপনার ধর্মরে ধর্ম ব্যবসায়ীদের হাত থেকে বাঁচান। এরাই আপনার ধর্মের সবচেয়ে বড় শত্রু। অন্য কেউ না! 

৬৪১ পঠিত ... ৭ ঘন্টা ১৯ মিনিট আগে

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top