সমাজসেবার হিউমিলিশন থেকে 'পালাবি কোথায়?'

৫৮৮ পঠিত ... ১৮:৫৩, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫

১ মিনিট ১১ সেকেন্ডের ১টা ভিডিও। 

ভিডিওটা আমি দেখতে পারি না।

দমবন্ধ করা অস্বস্তি আর রাগ লাগে!

অস্বস্তি আর রাগ নিয়াও ভিডিওটা আমি সকাল থেকে ৬ বার দেখলাম।

১টা লোক। তার চুলদাড়ি বড়, আউলাঝাউলা। জামাকাপড় ময়লা। লোকটার চুল কেটে দিতেছে মুসল্লি নামধারী ৫/৬ জনের একদল লোক; জোর কইরা। আশেপাশে আরও অনেক মানুষজন আছে। তারাও সাগ্রহে দেখতেছে।

এদিকে অসহায় লোকটা নিজেরে ছাড়ায়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেছে। কষ্টে, কান্না আর গোঙানির মাঝামাঝি ধরণের কন্ঠে কিছু বলার চেষ্টা করতেছে। ঠিকঠাক আর্টিকুলেটও করতে পারতেছে না।

অনেকের কাছে এই দৃশ্য নরমাল, নৈমিত্তিক ১টা ঘটনা মাত্র। ‘এই দেশে তো এমনই হওয়ার কথা। দেশে এইগুলা আর নতুন কি!’

হয়তো নতুন কিছু না। কিন্তু এই দৃশ্য আমি নিতে পারি না।

পারি না কারণ এই লোকটার জায়গায় আমি নিজেরে দেখি। নিজেরেই হিউমিলিয়েটেড হইতে দেখি।

আমার চুলও বড়, আউলাঝাউলাও। অন্তত ৫/৬ বছর ধরে।

মনে আছে, হাসিনা-আমলে পুলিশ আমারে প্রত্যেক মাসে অন্তত ২/৩ বার রাস্তায় থামাইতো। চেক করতো মাদক আছে কিনা। পকেট ও ব্যাগ সার্চ করতো। (এখন যে আটকায় না, তার কারণ পুলিশের কিছুটা ভয় আছে, জুলাইয়ের স্মৃতি আছে। কিন্তু দেশ যেদিকে যাইতেছে আমি নিশ্চিত কিছুদিনের পুলিশ তার আগের চেহারায় ফিরে আসবে।)

এগুলা কেন করতো?

কারণ আমার চুল বড়; আর বড় চুল ‘সন্দেহজনক’।

এই ভিডিওতে চুল কামায়ে দেওয়া মুসল্লি ভাইটি বলে:

‘তুমি তো নামাজ-কালাম পড়োই না, তুমি দাড়ি কাটলেই কি আর চুল কাটলেই কি! এ্যা?’

আমাদের আলেমরা, মুফতিরা আল্লার দুনিয়ার সব বিষয়ে মতামত দেন। অথচ এই যে অসহায় এক আদম সন্তানের এমন অবমাননা, যা দেশে রেগুলার ঘটতেছে, কোনো ১জন প্রমিনেন্ট আলেম বা মুফতিরেও কি এই বিষয়ে কথা বলতে দেখছেন? তারা কি মানুষের অবমাননারে ধর্মের অবমাননা মনে করেন না?

এই ক্রাউডের মনস্তত্ব, জম্বির মতো আচরণ, আর কেনই বা এই বর্বর অসুস্থ আচরণরে তারা মনে করতেছে ‘ভালো কাজ’ – আমি কিছুটা ব্যাখ্যা করতে পারি।

ব্যাখ্যা করতে পারি— বড় আউলাঝাউলা চুলরে কেন এরা খারাপ, 'অসভ্য’ মনে করে।

এই আচরণের ঐতিহাসিক, সামাজিক, এস্থেটিক, নৃতাত্ত্বিক, নৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি অন্তত ১ ডজন ব্যাখ্যা আমি দিতে পারি। চুল নিয়া বড়সড় একটা বইই আমি লিখছি।

লিখছি কারণ জাস্ট বড় চুলের কারণে যখন পুলিশ আমারে রাস্তায় দাড় করায়ে ব্যাগ সার্চ করতো, পকেট সার্চ করতো, আমার অসম্ভব হিউমিলিয়েটেড লাগতো। আমি ভুলতে পারি নাই। হিউমিলিয়েশন শব্দটা মোলায়েম, কিন্তু অনুভুতিটা ভয়ানক।

হিউমিলিয়েশনের ল্যাটিন রুট ‘হিউমুস’ মানে মাটি। আক্ষরিক অর্থে হিউমিলিয়েশন মানে মাটির সাথে মিশে যাওয়া। বাংলায় আছে: লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যাওয়া।

হাসিনা আমলে প্রত্যেক মাসে ২-৩ বার আমি মাটির সাথে মিশে যাইতাম।

আমার পকেট সার্চ করতো, ব্যাগ সার্চ করতো— তাতেই আমার এত হিউমিলিয়েটেড, ভায়োলেটেড লাগতো।

জোর কইরা যাদের চুল কাইটা দেয়, কামায়ে দেয়, তাদের কেমন লাগে?

কিন্তু এইসব ব্যাখা-বিশ্লেষণ আমার করতে ইচ্ছা করে না। করে না, কারণ এই অসহায় লোকটার জায়গায় আমি নিজেরে দেখি।

প্রবাসী সেলেব খাদিজাতুল কুবরা আপুর মতো হইলে অভিমান করে বলতাম, থাকবো না এই দেশে। IELTS দিয়ে বিদেশ চলে যাবো।

সুশীল হইলে বলতাম, মাননীয় সরকার, এই ঘৃণ্য ও গর্হিত অপরাধ যারা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

কিন্তু এইসব বালের আলাপ দিতে আমার ইচ্ছা করে না।

কারণ এই অসহায়, অক্ষম লোকটার জায়গায় আমি নিজেরে দেখতে পাই।

ডিগনিটি ভায়োলেট হইতে থাকা, গোঙানির মতো কান্না করতে থাকা, অসহায়, আউলাঝাউলা চুল আর ময়লা জামাকাপড়ের এই ‘পাগল’

লোকটার জায়গায় আমি নিজেরে দেখি।

৫৮৮ পঠিত ... ১৮:৫৩, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top