নান্দনিক বর্বরতার বিরুদ্ধে জেনজি বিপ্লব

৪৫ পঠিত ... ১১ ঘন্টা ৩৩ মিনিট আগে

একজন দুর্নীতিবাজ আমলার ছেলের ছাগলকাণ্ড, আরেক দুর্নীতিবাজ আমলার মেয়ের ক্যানাডায় স্পোর্টসকারে বসে ছবি, মন্ত্রীদের সেকেন্ড হোমের খবর, রোলেক্স ঘড়ি পরে বাগানে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা; সরকারি দলের সহ-সভাপতিদের হাজার কোটি টাকার মালিক হবার খবর; হেলিকপ্টারে বসে ছবি; এসবই বাংলাদেশের জেন-জিকে একটি বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করেছিল।

নেপালে ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে। মন্ত্রী ও আমলাদের ছেলেমেয়েদের দামি রেস্টুরেন্টে খলবল করার ছবি; নতুন অ্যাফলুয়েন্স শো-অফের ছবি; ঘটে যাওয়া দুর্নীতি বসন্ত, তা থেকে তৈরি হওয়া সমাজ বৈষম্য নেপালের জেন-জি বিপ্লবের প্রস্তুতির প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে।

বাংলাদেশ ও নেপালের কয়েক দশকের বৈষম্য ধূসর বাস্তবতায় এই জেন-জি বিপ্লব অনিবার্য ছিল। বাংলাদেশ ও নেপালের প্রধানমন্ত্রীর অনক্যামেরা বীরত্ব প্রদর্শন ও প্রতিবাদীদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা; তাদের দুজনকেই হেলিকপ্টারতুতো ভাইবোনে পরিণত করেছে।

বাংলাদেশ ও নেপালের কয়েকটি দশকের ভিআইপি কালচারের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কোলাবরেটর হয়ে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত সুযোগ সন্ধানী লোকেরা তাদের ভাগ্য বদলেছে। তারা বৃটিশ কোলাবরেটর জমিদারদের ভঙ্গিতে সাধারণ মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে শিখেছে। দারিদ্র্য বিশীর্ণ মানুষের বৈষম্যে ম্লান জীবনের ট্র্যাজেডির চেয়ে তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ রবীন্দ্রসংগীত গাওয়ার পরিবেশ হারানো কিংবা চর্যাপদের পাণ্ডুলিপি পুড়ে যাবার খবর।

এইযে সুপারফিশিয়াল ফাঁপা অ্যাসথেটিকসের প্রদর্শনবাদী সমাজ; এদের নরভোজী মানস এক শকিং কম্বিনেশন। শিল্প-সাহিত্য-সংগীত মানুষকে জীবনের গভীরের জীবন দেখতে শেখায়; ফলে মানুষ, নিসর্গ ও প্রাণীজগতের প্রতি গভীর ভালোবাসা জন্মে মানুষের। কিন্তু এই গরীব থেকে সচ্ছল মধ্যবিত্ত বা নেহাত মধ্যবিত্ত হয়ে ওঠা কথিত শিক্ষিত ও সংস্কৃতি শ্রেণী; নিজেদের সন্তানকে পশ্চিমে পাঠিয়ে; দেশের বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিপ্লবোন্মুখ জেন-জিকে বর্বর বলে গালমন্দ করে। এমন বিশুষ্ক বর্বর সাংস্কৃতিক সমাজের জুড়ি মেলা ভার।

বাংলাদেশ ও নেপালের উপায়হীন তরুণ; যাদের একমাত্র ঠিকানা তাদের জন্মভূমি; সেইখানে যেন তারা নিজভূমে পরবাসী। নিম্নবিত্তের ছেলে একটু অ্যাফলুয়েন্সের মুখ দেখলেই ভিআইপি কালচারের জলসাঘরে একটি আসন চায়। সে শত্রু হয়ে পড়ে নিজের দরিদ্র অতীতের। বাংলাদেশ ও নেপালের টিভিতে স্যুট-কোট পরে, কিংবা কুঁচি দিয়ে শাড়ি পরে তারা সভ্যতার জ্ঞান দেয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠা তারুণ্যকে।

পৃথিবীর অসভ্যতম এই সুবিধাবাদী সমাজ মনে করে; তারাই ঠিক করে দেবে গণতন্ত্র কেমন হবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেমন হবে। সমাজ ও সংস্কৃতির সিলেবাস লিখতে কে যেন তাদের ডাক দিয়ে এনেছে। তারা একধরনের আর্য কল্পনা ধারণ করে তাদের বেগুণী মুখমণ্ডলে। ইনফেরিয়রের সুপিরিয়র সাজার বাতিক আর নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণের মরিয়া চেষ্টা এদের ক্রমে-ক্রমে গণশত্রুতে পরিণত করেছে।

নিজেদের নতুন শেখা সব সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, সমাজ বীক্ষণ; যা এরই মাঝে জীর্ণ হয়ে গেছে; শোষকের মুখোশ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে; সেইসব ডেটএক্সপায়ার্ড মেডিসিন নিয়ে হাজির হয় এইসব হাতুড়ে ডাক্তারেরা।

স্বাধীনতার এত বছর পরে এসেও কেন রাজনীতির নামে নতুন কাস্ট সিস্টেম বিনির্মিত হবে; কেন আউটডেটেড সেন্স অফ এন্টাইটেলমেন্ট নিয়ে একদল অপদার্থ লোক ভিআইপি বন্দোবস্তের খেলনা জমিদার হয়ে ঘুরবে। এদের ছেলেমেয়ে পশ্চিমে পড়ে, নিজেরা চিকিৎসা করাতে বিদেশে যায়, আর সাধারণ মানুষের সন্তানকে প্রজা ভেবে তাদের ভাটের আলাপ শেখাতে আসে।

বাংলাদেশ ও নেপালের জেন-জিরা বুঝে গেছে; এইসব ক্ষমতা-কাঠামোর ফড়িয়া, সুবিধা লোলুপ ব্যর্থ লোকজন; যারা বৈষম্য জিইয়ে রেখে নিজের রাজপুত্র-রাজকন্যা নিয়ে আদিখ্যেতা করতে চায়; বাংলাদেশ ও নেপালের অচলায়তনটাই তাদের পছন্দ। যদি জেন-জির সমাজ বিপ্লবে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে জমিদারি হারানো লোকগুলোর মতো পরিণতি হয়; সেই ভয়ে এরা ভিআইপি কালচারের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ধরে রাখতে চায়। আর সেই গজদন্তের মিনার টিকিয়ে রাখতে যুক্তিহীনতার শিং ঘষে।

৪৫ পঠিত ... ১১ ঘন্টা ৩৩ মিনিট আগে

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top