ভাদ্র মাসের উত্তপ্ত ফকফকা দিন। এই ভাদ্রের উত্তাপই শুধু উত্তপ্ত নয়, এর সাথে আছে এক বিশেষ আয়োজন, যা ভাদ্রের এই উষ্ণতা কে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। বিষয়-বহুল আকাঙ্ক্ষিত ডাকসু নির্বাচন।
এমন দিনে ডাকসুর একাল দেখতে গিয়েছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে, সাবেক ছাত্র হিসেবে। গরমে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে সুর্যের দিকে আফসোস নিয়ে তাকাতে গিয়েই দেখি ওমা, ছায়া হয়ে চোখের সামনে আসলো একটা হাতপাখা। না, কোনো পীরবাবার হাতপাখা নয়। চোখের সামনে নিত্যানন্দ পাল, ব্যালট নং ৫৬। একজন প্রার্থীর অভিনব প্রচারণা। গরমে বাতাস করতে করতে মনে হলো, এই প্রার্থীকে ভোট না দিলে তো সাফ নাফরমানি হয়ে যায়।
ক্যাম্পাসে গেলাম, এক কাপ চা না খেলে কি হয়? চা খেতে টিএসসি গিয়েই দেখলাম স্বপন মামা মলিন এক হাসি দিয়ে কাছে ডাকলেন। অল্প সময়েই হাতে দিলেন আমার সেই পুরোনো রেসিপির কফি চা, চিনি একটু কম। ঠিকই মনে রেখেছেন। ডাকসুর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করার আগেই ফুসে উঠে বললেন, ‘আরে রাখেন আপনার ডাকসু। দুই দিন পরপর হেনতেন প্যাচাল পাইড়া চায়ের দোকান তুইলা দেয়। দুইটা কর্মচারির বেতন, সংসার খরচ, কই যামু কন? সব প্রার্থী তো আমার পোলামাইয়া, কথা কইব কী এই ব্যাপারে?’
আমি ভাবি তাই তো, পেট না চললে এনারা এই আয়োজন নিয়ে কী করবেন? প্রায় ৪৫ বছর তিনি ক্যাম্পাসে আছেন, ডাকসুতে কি কোনো অংশে ওনার অধিকার কম?
রাজনীতি আমার অধিকার
হেটে হেটে ক্যম্পাস ঘুরলাম। দেখলাম অভিনব সব লিফলেট পায়ের নিচে পিষে যাচ্ছে। কুড়োলাম, হাতপাখা, চিঠির খাম, ডাকটিকেটের লিফলেট, ডলার, ওয়ানটেড পোস্টার আরও কতকি! সবকিছু কিন্তু ফেইক। জেনজি-এর ইনোভেটিভ পোস্টার দেখে এদের বাহবা না দিয়ে উপায় নেই। কারও কারও দেখলাম নেগেটিভ মার্কেটিং। লিফলেটে শেখ হাসিনার নাক মোছার ছবি, ক্যাপশনে, ‘নাটক কম করো প্রিয়, ১৮১ নং ব্যালটে ভোটটি দিও।’
মধুর ক্যান্টিনে গিয়ে দেখি দৌড়ে আসছে অনেক প্রার্থী ভোট চাইতে। আহা, চিন্তা করে কুল পাই না এই হুমড়ি খেয়ে আসা দৌড়ে আসারাই একদিন জাতীয় নেতা হয়ে সংসদে ঘুমাতে পারেন নাক ডেকে। এমনই তো হয়, তাই নয় কি?
ছাত্র-রাজনীতির আঁতুড়ঘর মধুর ক্যান্টিন
ভোটারের সাথে কথা বললেই শুনি তারা সুনীলের ভাষায় বলছেন, কেউ কথা রাখেনি, কেউ কথা রাখে না। এনারা কী চান? বলেন, ডিফরেন্ট কিছুই চাই না, আমরা যা চাই সব ইশতেহার এই দেখি, শুধু সেসব ইশতেহার এর বাস্তবায়ন চাই। আমরা কী চাই প্রার্থীরা সব জানেন বলেই তারা তা ইশতেহারে দেন। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর কি উনাদের আর এসব মনে থাকে?
আসলেই কী? ডাকসু নেতারাও কী আমাদের জাতীয় নেতার মত এমন কথা রাখেন না? এই চিন্তা করতে করতে নীলক্ষেতের রাস্তা ধরে বাসার দিকে রওনা দিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মুক্তি ও গণতন্ত্র তোড়ন’ দেখে মনে পড়ল, কিছু রানিং ছাত্ররা উদ্যেগ নিয়ে এই রাস্তা বহিরাগত গাড়ির জন্যে বন্ধ করে দিয়েছিল। যার কারণে সাফার করতে হয়েছিল পুরো ঢাকা শহরের মানুষদের। আশা রাখলাম নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সামগ্রিক চিন্তা করবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কে পুরো ঢাকা শহরের রোষানলে ফেলবেন না।
পাঠকের মন্তব্য