হাসিনা-নিজামি-মোদি-বাবর-মেননের চেবানো চুইংগাম আর নয়

৩৬ পঠিত ... ৭ ঘন্টা ৫২ মিনিট আগে

ডাকসুতে এক ঝাঁক উজ্জ্বল তরুণ-তরুণী অংশ নিচ্ছে। এরা সবাই জুলাই বিপ্লবী। ফলে একবিংশের এই তারুণ্য প্রত্যেকেই সমান সম্ভাবনাময়। এরা প্রত্যেকেই যে মতাদর্শগুলো থেকে এসেছে; সেই মতাদর্শগুলোর প্রত্যেকের হাতে রক্ত রয়েছে; স্বদেশ বিরোধিতা রয়েছে। মতাদর্শগুলোর ইতিহাস মূলত ব্যর্থ রাষ্ট্র গড়ার ইতিহাস। বাংলাদেশ কল্যাণরাষ্ট্র হয়ে উঠতে না পারার পেছনে সর্বদলীয় লুণ্ঠন আর পীড়নের ইতিহাস।

ফলে এই তরুণেরা যতক্ষণ পর্যন্ত ইলেকশন ডিসকোর্স স্বীয় যোগ্যতা পর্যন্ত রাখতে পারবে; ততক্ষণই তারা উজ্জ্বল।

ডানপন্থী ছাত্রদের পূর্বসূরী জামায়াতের ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি দখলদার সেনাবাহিনীর সহযোগী হিসেবে কাজ করা বাংলাদেশ বিরোধিতার কালো দাগ। ফলে সেখানে বিন্দুমাত্র গর্বের চিহ্ন নেই। আছে কলঙ্ক। এই বিষয়টি সবচেয়ে আলোচিত। কারণ আওয়ামী লীগ ও বামপন্থী এক্টিভিস্টরা প্রায়ই প্রতিদিনই জামায়াতের একাত্তরের কুকীর্তি সম্পর্কে আমাদের আলোকিত করেন। যদিও বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি পরিবারেই একাত্তরের ট্র্যাজেডির কালেক্টিভ মেমোরি সদাজাগ্রত। তবু  মুক্তিযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির আঁচ সংস্কৃতি মামা ও খালাদের পরিবারে নেই বলেই হয়তো, কালচারাল উইং প্রতিদিনই আমাদের অশ্রুজলে সিক্ত করেন। ৫৪ বছর আগের মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ে তাদের এই স্পর্শকাতরতা শ্রদ্ধা পাওয়ার মতো। এক বছর আগের জুলাইয়ে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের বামদের হাতে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ে ক্ষমা চাওয়া তো দূরে থাকুক; যা করেছি; তা ঠিক করেছি মনোভাব আমাদের ব্যথিত করলেও আশ্চর্য করে না। ঘুমিয়ে আছে ইয়াহিয়া সব হাসিনার অন্তরে। ভারতীয় কোলাবরেটর সত্তাকে আড়াল করতে যত্রতত্র বাংলাদেশ কালে জন্ম নেওয়া মানুষকে রাজাকার বলে বেড়ায় আওয়ামী লীগ ও বাম। হাসিনা যেমন মুক্তিযুদ্ধের সময় আরামে পাকিস্তানি সেনাদের তত্ত্বাবধানে বসবাস করে, গড়ে সবাইকে রাজাকারের নাতিপুতি বলেছিলেন।

বামপন্থী ছাত্রদের পূর্বসূরীরা স্বাধীনতার পরে একটি সম্ভাবনাময় বিরোধীদল না হয়ে আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে একটি স্বৈরশাসন বিনির্মাণ করে। এতে আরেকদল বাম নিগ্রহের শিকার হয়; সেটা স্প্যানিশ ট্র্যাজেডির মতোই। কিন্তু বামের মূলধারাটি বাকশালের একদলীয় শাসনে আত্মাহুতি দেয়। আর বাংলাদেশে ভারতীয় রাষ্ট্রের আগ্রাসনের কালচারাল উইং-এর পরিচর্যা করে এই বামেরা। সাম্প্রতিকতম হাসিনা শাসনে বামদলের নেতাদের ভূমিকা ছিল নির্মূলের রাজনীতি। ইনু-মেননের মতো স্পষ্ট করে দাড়ি-টুপিওয়ালা নির্মূলের কথা আর কে বলেছেন। তারা ভারতের ইসলামোফোবিয়ার বাংলাদেশ চ্যাপ্টার দেখা শোনা করেছেন। কট্টর মতাদর্শের ডানপন্থীদের সাধারণ মানুষ যেমন ভয় পায়; একই রকম ভয় পায় কট্টর মতাদর্শের বামপন্থীদের। ফলে বামপন্থী ছাত্রেরা তাদের পূর্বসূরীদের গর্বের চিহ্ন খুঁজতে গেলে কলঙ্ক চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যাবে। আই-বাই-সাই করে মেনন ব্যাড লেফট, আমরা গুড লেফট বললে; তা আফগানিস্তানের গুড তালিবান ও ব্যাড তালিবান, ভারতের গুড শিবসেনা ব্যাড শিবসেনার মতো কৌতুককর শোনাবে।

ছাত্রদলের পূর্বসূরীরা মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখসমরে অংশ নিলেও একাত্তরে বাংলাদেশ বিরোধী অভিমতের লোকেদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেন। মুক্তিযোদ্ধা হত্যার রক্তের দাগ বিএনপির হাতে রয়ে গেছে। ৭০টি ইঁদুর খেয়ে বেড়ালের হজ্জ্বে যাওয়ার মতো চব্বিশের ৫ অগাস্টের পর আওয়ামী লীগের ফেলে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোকানে আগরবাতি জ্বেলে চেতনার পাণ্ডুলিপি বিক্রি করলেই কি দেশের মানুষ ভুলে যাবে, একুশে আগস্টের গ্রেনেড অ্যাটাক, দেশব্যাপী বোমা হামলা; আর তা প্রতিরোধে বিএনপির নিষ্ক্রিয়তা; ইসলামের নামে সন্ত্রাসবাদী বাংলা ভাইয়ের উত্থানকল্পে বিএনপি নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতার ঘটনা রোদেলা দিনে জনমানুষের চোখের সামনে ঘটেছে। 

কাজেই এমন কোনো গর্বের প্রামাণ্য দলিল কোন দলের পূর্বসূরীরা রেখে যাননি; যা দেখিয়ে গলা ফুলিয়ে আরেকজনের দিকে আঙ্গুল তোলা যাবে।

বরং নিজেদের ক্লিন স্লেটে নিজের সুকৃতি নিজেই লিখতে হবে। ধর্মীয় বিদ্বেষের যে শিক্ষা হিন্দু ও মুসলমান ছেলে-মেয়েরা পরিবার, পরিপার্শ্ব, সাংস্কৃতিক পুরোহিত ও ধর্মীয় মোল্লার কাছে পায়; সেসব আনলার্ন না করলে; সেই একই এঁদো পাতকূয়ায় ঘুরপাক খেতে হবে। মুসলমান ছেলে মানেই তাকে পাকিস্তানি বলে দেওয়ার যে ট্রেনিং ঠাকুদ্দা দিয়েছেন কিংবা হিন্দু ছেলে মানেই ভারতীয় বলে দেওয়ার যে ট্রেনিং দাদা দিয়েছেন; ওসব আনলার্ন করে একবিংশের সভ্যতার আলোয় বাংলাদেশ আত্মপরিচয় বিনির্মাণের আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে হবে। চারুকলার রামমন্দিরে ডাকসু প্রার্থীর ছবিতে হিজাবের ওপরে শিং এঁকে দেওয়ার হিন্দুত্ববাদ আর শাহবাগে আল-আকসা মসজিদ নির্মাণে প্রবৃত্ত ইসলামপন্থী গিয়ে নারীকে ওড়না পরতে বলার কট্টরপন্থা; এ যুগে আর চলবে না। ওসব আঁশটে কুঁচকুঁচানির সময় গত হয়েছে। সমসাময়িক পৃথিবী ফ্রিডম অফ চয়েস বা ইচ্ছার স্বাধীনতার আলোকসরণি।

অখণ্ড পাকিস্তান গত হয়েছে ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ, আর অখণ্ড ভারত গত হয়েছে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট। যেদিন গেছে তা একেবারেই গেছে; বাংলাদেশ প্রজন্মের মধ্যে কলকাতার জমিদার বা লাহোরের জমিদারের সামনে কাঁচুমাঁচু করে অনুগ্রহ চাওয়ার দিনকাল আর কখনোই ফিরে আসবে না। কাজেই আওয়ামী লীগ ও বাম কালচারাল উইং আর জামায়াতকে নতুন বাংলাদেশ ভাবনা অনুশীলন করতে শিখতে হবে।

সে কারণেই ডাকসু নির্বাচনে লড়াই-এ অবতীর্ণ তরুণ-তরুণীদের নিজস্ব নেতৃত্বগুনে লড়তে হবে। কারও মুখে হাসিনা, নিজামি, মোদি, বাবর বা মেননের চেবানো চুইংগাম থাকলে তা আর চিবিয়ে একটি ভোটও জুটবে না। জুলাই বিপ্লবের অঙ্গীকার নিয়ে বহুত্ববাদী ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে  রচিত হোক নতুন রাজনীতির ইতিহাস।

৩৬ পঠিত ... ৭ ঘন্টা ৫২ মিনিট আগে

আরও

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top