ডাকসুর কথায় আর সংবাদে ফেসবুক নিউজফিড সয়লাব। আমি ঢাকার মানুষ নই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও গিয়েছি অতিথি পাখির মতোই। ডাকসুর কথা প্রথম শুনে তাই মনে হলো হাঁস সম্পর্কিত কিছু হবে হয়তো! কিন্তু পরে জানলাম ডাকসু হলো Dhaka University Central Students Council (যদিও নাম শুনে আমার ধারণা খুব একটা চেঞ্জ হলো এমন না!)
জানার পর মনে হলো ব্যাপারটা দেখা দরকার। যতোই হোক এবার যখন দেখার সুযোগ আছে সেটা মিস করা ঠিক হবে না। তাই আজ (৭ সেপ্টেম্বর) রোদ আর গরমকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলে গেলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসুকে দেখতে, সাথে গাইড হিসেবে ছিল ভার্সিটির বড় ভাই। পোঁছে রাস্তায় নামতেই প্রথমে চোখে পড়ল নানা রকম লিফলেট। মজার ব্যাপার হলো অন্য সব নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার মতো কোন সাদামাটা লিফলেট ছিল না সবগুলো। সাধারণ লিফলেটের পাশাপাশি নানান সাইজের, নানান ধরণের রঙিন, সাদা-কালো লিফলেটে সয়লাব। ব্যাপারটা আমার কাছে ইন্টারেস্টিং তো লাগলোই, মাথায় ঘুরতে লাগল এইসব দারুণ আইডিয়ার পিছনে না জানি কত দারুণ মানুষেরা আছে।
টিএসসি এসেছি আর চা খাব না তা হয় না। বড়ভাই নিয়ে গেলেন চায়ের দোকানে। চা অর্ডার দিয়ে কথা হলো বিখ্যাত স্বপন মামার সাথে। স্বপন মামাকে জিজ্ঞেস করলাম, ডাকসু নির্বাচন চান নাকি মামা? মামা তো পুরো সংগ্রামী নেতার মত বলে উঠলেন, অবশ্যই চাই! ডাকসুর নির্বাচনের দরকার আছে, ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকার আদায়ের জন্য। মামাকে এলাকার লোকজন জানেন, চেনেন, মামাও চেনেন প্রায় সবাইকেই। তার চাওয়া, যোগ্য প্রার্থীরাই ক্ষমতায় আসুক। কিছুদিন পরপরই তাদের দোকানগুলো উচ্ছেদ করা হয়– এসব সমস্যা নিয়েও তারা কথা বলুক–এই আশাও ব্যক্ত করলেন।
বহুবার ডাকসু দেখা স্বপন মামা
এরপর শুরু করলাম হাঁটাহাঁটি। চারদিকে লিফলেটের ছড়াছড়ি। প্রজাপতি, গিটার, মুষ্টিবদ্ধ হাত, বিড়ালের বুকমার্ক স্টাইলের লিফলেটগুলো আগ্রহ নিয়ে কালেক্ট করলাম। হাকিম চত্বরে যেতেই সারি সারি দাঁড়ানো ছেলেমেয়েরা, হাতে লিফলেট। কোনো প্রার্থী নিজের প্রচারণার জন্য নিজেই আছে, কারও কারও প্রচারণায় ছোটভাই, বড়ভাই, হলের ভাই, রুমের ভাই এবং বোনেরা এসেছে। হাসিমুখে লিফলেট দিয়ে বলছে আপু ভোট দিয়েন, ভোট না থাকলে দোয়া কইরেন। ভীড়ের জন্য সেখানে বেশিক্ষন দাঁড়াতে পারলাম না। একটা ব্যাপার ভালো যে এলাকার নির্বাচনের মত কেউ মাইক হাতে কার চরিত্র ফুলের মত পবিত্র–এটা হেঁড়ে গলায় প্রচার করছে না। চারদিকে বেশ শান্তিপূর্ণ উৎসবের একটা আমেজ।
টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায় যেয়ে দেখি সবার জন্য সমানভাবে বাঁশ গাঁথা হচ্ছে। পড়ে বুঝলাম ওখানে আসলে ভোটের কেন্দ্র। সবার জন্য আলাদা আলাদা জায়গা করা হচ্ছে। বাঁশ খেতে কেউ বাদ যাবে না যা বুঝলাম। যাক আয়োজন তো বুঝলাম কিন্তু ডাকসু নিয়ে কাহিনী কী চলছে?
প্রস্তুত হচ্ছে ভোটকেন্দ্র
এটা জানার জন্য ক্যাম্পাসের কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলাম। একজন জানালেন তার চাওয়া যে-ই আসুক সে যেন স্টুডেন্টদের হয়ে কাজ করে। কোন একটা পদে দাঁড়িয়ে ভুলে না যায় কেন সে সেখানে দায়িত্বে আছে। জানতে চাইলাম ডাকসু নির্বাচনে জুলাই স্পিরিট পাচ্ছে কিনা? এটি নিয়ে তিনি একটু হতাশ হয়েই জানালেন যে জুলাইয়ের স্পিরিটটা তিনি সেভাবে ফিল করতে পারছেন না।
এরপর পেলাম একজন নির্বাচনের প্রার্থীকে, পেয়ে তার সাথে কথা বলতে ছাড়লাম না। তিনি রাজনীতি নিয়ে বেশ সক্রিয়। তার কথায়, তিনি জিতে যান বা হেরে যান, স্টুডেন্টদের কাজ করেই যাবেন। তার মতে, জুলাইয়ের আন্দোলনের পর সফলতা এটাই যে এখন কোনো একটি দলের একচ্ছত্র আধিপত্য নেই, অন্তত গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনগুলো হচ্ছে, সবাই নিজের কথা বলতে পারছে মন খুলে। তার সাথে কথা বলে বুঝলাম ডাকসু নির্বাচন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেও এটি রাজনৈতিক ক্ষেত্রের একটা ছোট্ট ফর্ম যা পরবর্তীতে মূলধারার রাজনীতিতে ভালোই প্রভাব ফেলতে পারে।
অবশেষে এলো ফেরার পালা। ফিরতে ফিরতে ভাবছিলাম আমি যদি ডাকসুতে ভোটার হইতাম তবে কাকে ভোট দিতাম? অনেক ভেবেচিন্তে মনে হলো যে প্রার্থী হাতপাখা লিফলেট বানিয়েছে তাকেই ভোট দিতাম। কারণ এই গরমে তার এই সুন্দর, একটু শক্ত, হাতপাখা স্টাইলের লিফলেটটা দিয়ে এতক্ষণ বেশ বাতাস খেয়েছি, মনে প্রশান্তি এসেছে।
পাঠকের মন্তব্য