দল বদল করতে হবে? রাজনীতি ছাড়তে হবে? সঙ্গীকে ডিভোর্স দিতে হবে? জেল থেকে মুক্তি? এইগুলো সমাজে কোনো নতুন ঘটনা নয়। এই ঘটনাকেই যদি নাটকীয় করতে হয়? লাগাও দুধ দিয়ে গোসল!
প্রশ্ন হলো, এই ‘দুধ দিয়ে গোসল’ কি নতুন কোনো আবিষ্কার? ইতিহাস কী বলে?
ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষরা মূলত বিশ্বাস থেকেই দুধকে পবিত্র উপাদান হিসেবে গণ্য করে। বৈদিক যুগ থেকেই গরুর দুধ, ঘি, দই ইত্যাদি নানা আচার-অনুষ্ঠানে ব্যবহার হতো। ব্রাহ্মণদের শুদ্ধ করার জন্য দুধে স্নান করানো ছিল রীতি। দেবতাদের মূর্তিতে ‘অভিষেক’ করতে দুধ ঢালা হতো। এমনকি বিয়ে বা রাজ্যাভিষেকের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষেও থাকত এই দুধ দিয়ে গোসল।
ভারতবর্ষ থেকে বের হলে দেখা যায়, প্রাচীন মিশরের রানি ক্লিওপেট্রা প্রতিদিন গাধার দুধ দিয়ে গোসল করতেন। তার বিশ্বাস ছিল, এতে ত্বক থাকবে কোমল ও তারুণ্যদীপ্ত। এই দুগ্ধস্নান ছিল সে সময়ের রাণীদের মধ্যে সৌন্দর্য রক্ষার প্রতীক।
রোমান অভিজাতশ্রেণি দুধ, মধু, গোলাপজল দিয়ে তৈরি গোসলের পানিতে অনেকক্ষাণি সময় কাটাতেন। এটা ছিল বিলাসিতা, আরামপ্রিয় জীবনের প্রতীক।
এছাড়াও বিশেষ ব্রত, মানত বা রোগমুক্তির উদ্দেশ্যে অনেকেই দুধ ঢেলে স্নান করে এসেছেন যুগের পর যুগ। শতাব্দীর পর শতাব্দী। এই জিনিসটা তারা করেন আত্মশুদ্ধি বা ঈশ্বরের কৃপা পাওয়ার আশায়।
এই প্রথার সমালোচনাও রয়েছে। মানুষ পর্যাপ্ত খেতে পায় না, সেখানে এতখানি ‘পুষ্টির অপচয়’ কতখানি যুক্তিযুক্ত—এই নিয়ে সরবও ছিলেন বিভিন্ন সময়ের মানুষ।
যদি বলেন ‘উপকারিতার’ কথা... একেবারেই যে উপকার নেই, এ কথা বলারও সুযোগ নেই আসলে। আছে। প্রাচীন রোমানরা মুখের ত্বক কোমল রাখতে নিয়মিত দুধ মিশ্রিত পানিতে গোসল করতেন। ফারাও ক্লিওপেট্রা দুধ আর মধু মিশ্রিত গরম পানিতে গোসল করে তার অপরূপ সৌন্দর্য ধরে রেখেছিলেন। গত আর এই শতাব্দীর শুরুতে আমেরিকায় ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল বাটারমিল্কে মুখ ধোয়া। কেবল সৌন্দর্য বৃদ্ধি না; একজিমা, সোরিয়াসিস আর শুষ্কতাসহ ত্বকের বেশ কয়েকটি রোগের জন্য দুধ মিশ্রিত পানি উপকারী বলে ধরা হয়।
তবে দুধ দিয়ে গোসল সবার জন্য উপকারী নাও হতে পারে, বিশেষ করে স্পর্শকাতর ত্বকের অধিকারীরা ভুগতে পারেন অ্যালার্জিতে। তাই দুধ দিয়ে গোসল করবেন কিনা, সেটা আপনার সিদ্ধান্ত। তবে তার আগে চিকিৎসকের সাথে একবার পরামর্শ করে নিলে, ব্যাপারটা খারাপ হবে না।
পাঠকের মন্তব্য