আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা, সেনাবাহিনীর হেফাজত কেন?

৫৮ পঠিত ... ১১ ঘন্টা ৪৯ মিনিট আগে

লেখা: নাবিলা ইদ্রিস

পিএইচডিতে প্রফেসররা শিখিয়েছিলেন, একজন ভাল রিসার্চার 'কী হয়েছিল' জানতে চাওয়ার উর্ধ্বে জানতে চায় 'কেন হয়েছিল'। মনে ধরেছিল কথাটা, যদিও পরবর্তীতে এই 'কেন' অ্যানালাইসিস রপ্ত করতে গিয়ে যাঁতাকলে পিষ্ট হয়েছি!

ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙে। অতএব গুম কমিশনে যদিও আমাদের কাজ মোস্টলি 'কী' কেন্দ্রিক, মনের অগোচরে 'কেন'-এর ভূত আমাকে ছাড়ে না। অনেক কেন-এর মাঝে আজকাল যেই কেনটা আমাকে বেশ ভাবায় সেটা হলো: গুমের জন্য অভিযুক্ত অফিসারদের পারসোনাল ক্রিমিনাল লায়াবিলিটি (বা ব্যক্তিগত অপরাধ) কেন তাদের ইনস্টিটিউশন স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজের ঘাড়ে তুলে নিচ্ছে? কাজটা এত সুইসাইডাল যে আমরা এটার কোনো আগামাথা বুঝি না।

ব্যাপারটা এরকম–ধরেন আমি বাংলালিংকে চাকরি করি, পরে গ্রামীণফোনে গেলাম। সেখানে আচ্ছামত চুরি করে, ক'দিন পর বাংলালিংকে ফিরে এলাম। এদিকে আমার গ্রামীণফোনের কুকীর্তি ফাঁস হওয়ায়, পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করতে হাজির হলো বাংলালিংকে। বাংলালিংক কি আমার গ্রামীণফোনের ক্রাইম ওউন করবে? বাংলালিংকের কোনো কর্মকর্তা কি বলবে, ‘চল তোমার গ্রামীণফোনের ক্রাইম লুকাতে সহযোগিতা করে আমি আমার ক্যারিয়ার ঝুঁকিতে ফেলি?’ উঁহু, নো চান্স। তারা বলবে, ওখানে যা করেছ এটা তোমার প্রবলেম, আমাকে-আমার প্রতিষ্ঠানকে তোমার ক্রাইমে জড়াবা না।

বাট উইয়ার্ডলি গুম-খুনের বিচারের বিষয়ে আমরা এই অদ্ভুত কাজটাই দেখছি। এভিডেন্স ডেস্ট্রয় করে, অ্যাকাউন্টেবিলিটি অ্যাভয়েড করতে সহযোগিতা করে, পালিয়ে যেতে দিয়ে, 'হেফাজতে আছে কিন্তু অ্যারেস্টেড না'-টাইপ কথা বলে, একটা নতুন সাবসেট অফ অফিসার্স (যারা বাংলালিংকের মতোই অরিজিনালি আন-ইনভলভড) আরেকজনের পারসোনাল ক্রিমিনাল লায়াবিলিটি নিজের ঘাড়ে তুলে নিচ্ছে।

ভালো গবেষক হওয়ার সেই আদি খায়েশের তাড়নায় আমি বোঝার চেষ্টা করছি কেন এরকম সুইসাইডাল কাজ তারা করছেন। কারণ এটা তো দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, এসকল অফিসারদের এই সদ্য-ক্রিয়েটেড আমলনামা নিয়ে মাত্র ক'দিন পরেই তাদের প্রফেশনাল এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরাই টান দিবে। সো হয় আইনীভাবে বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে, ভেরি সুন ওনারা এক্কেরে খামাখা পে করবেন! তাহলে কৌতূহল জাগে না যে, কেন তারা এমন করছেন? আমার তো জাগে।

অনেক কারণ মাথায় আছে তবে আজকে একটা শেয়ার করি। আমার কাছে মনে হয়েছে ইনারা একই সোশ্যাল ক্লাসের হওয়ায়, অভিযুক্ত অফিসারদের মাঝে নিজেদের দেখতে পান, রিলেট করতে পারেন। ওনারা ফিল করেন, ইনার সাথে আমি অমুক জায়গায় চাকরি করেছি; আমার মিসেস তো ভাবীর ফ্রেন্ড। যদি আমার পোস্টিং হত RAB Int-এ? বা DGFI-এ? হয়তো আমিও এরকম করতাম। অতএব গুম-খুনের বিচার বাধাগ্রস্ত করে আমি খুব পুণ্যের কাজ করছি; ইন ফ্যাক্ট আমার নিজের অলটার ইগোকেই বাঁচাচ্ছি!

আমার মনে হয়েছে এই কর্মকর্তারা এখানে দুইটা মেজর অ্যানালিটিকাল এরর করছেন।

১) ওনারা ভাবছেন ওনারাও ওই পোস্টিংয়ে থাকলে এমন ক্রাইম করতেন। এটা আসলে ট্রু না। আমরা যথেষ্ট এভিডেন্স পাই যে সৎ অফিসাররা এসব ক্রাইম থেকে দূরে থেকেছেন। এমনকি আওয়ামীপন্থী অফিসার কিন্তু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গুম-খুন করতে রাজি হন নাই, এমন একাধিক সুস্পষ্ট প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। তার মানে যারা গুম-খুন করেছে, তারা সজ্ঞানে চুজ করেছে। পোস্টিং-এর পরদিন রাতারাতি সবাই খুনি হয়ে যেতেন, এটা পিওর প্রোপাগান্ডা ব্যতীত আর কিছু না।

২) সোশ্যাল ওভারল্যাপ না থাকায়, ওনারা ভিক্টিমের সাথে এম্প্যাথাইজ করতে পারছেন না। আফটার অল, ওনার মিসেস ইজ অনলি ফ্রেন্ডস উইথ ভাবী, নট ফ্রেন্ডস উইথ ভিক্টিমের 'আমি-কি-বিধবা-নাকি-সধবা?' বউ। এর মানে এও দাঁড়ায় যে যদি আমরা শুধু লোয়ার র‍্যাঙ্কের অভিযুক্তদের ধরতাম, কখনই ইনস্টিটিউশন এই সুইসাইডাল লায়াবিলিটি ঘাড়ে নিত না। কোম্পানির সি-স্যুট কর্মকর্তা কি অফিসের দারোয়ানের জন্য নিজের ক্যারিয়ার বিসর্জন দেবে? উঁহু!

এই অ্যানালিটিকাল এররের কারণে ওনারা সামনের যেসমূহ পারসোনাল বিপদ ধেয়ে আসছে–যখন ওনাদের বর্তমান আমলনামা বিবেচনা করে ইনডিসক্রিমিনেটলি ওনাদের ক্যারিয়ার (অর মোর!) আটকে যাবে–সেই ব্যাপারটা ইগনোর করছেন।

সমাধান কী? আসলে আমাদের ক্ষেত্রেও এমন ঘটে–যখন ৬-৭ ঘণ্টা টানা একজন অভিযুক্তের ইন্টারভিউ নেই, তখন খানিকটা হলেও তাদের চিনে ফেলার সুযোগ পাই। সে সময় ফ্র্যাঙ্কলি অনেক চিন্তা মাথায় আসে। ভাবি, 'হু, ওই সময়ে লোকটা অনেক ক্রাইমই করেছে। কিন্তু আজকের অবস্থা প্যাথেটিক–বউ-এর সাথে অশান্তি, বাচ্চার পড়াশোনা লাটে উঠেছে।'–করুণা হয়।

এসব ক্ষেত্রে আমি স্মরণ করি নৌকায় চোখ বেঁধে শোয়ানো ভিক্টিমের অন্তিম মুহূর্তের কথা। কারণ কাজের থ্রুতে এই ভিক্টিমদের–যাদের কখনও মিট করিনি, হয়তো আখিরাতে করব–তাদেরকেও আমি চিনে ফেলেছি। জানেন আমি মাল্টিপল অফিসারের সাথে চেক করেছি যে, মৃত্যুর আগ মুহূর্তে did the victims put up a fight? মাত্র হাতে গোনা কয়েকটা উদাহরণ পেয়েছি যেখানে the victim tried to escape in the last moment; mostly, they did not even try. একজন বর্ণনা করেছিলেন, না, ওরা তো একদম নিঃশেষ তখন। জানে যে মারা যাবে। খুব নির্জীব।

I can't take it, bhai. I can't take the tragedy of a man who is resigned to his death. I can't take it. I just can't.

আপনিও মেনে নিয়েন না। এই ঘৃণ্য অপরাধের দায়মুক্তি দিতে গিয়ে আপনার জানমাল-ক্যারিয়ার-পরিবার এবং সর্বোপরি, বিবেক বিসর্জন দেওয়া সাজে না, ভাই। রিয়েলি না।

৫৮ পঠিত ... ১১ ঘন্টা ৪৯ মিনিট আগে

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top