কারাগারে বন্দীদের 'খিচুড়ি সংগ্রাম পরিষদ'-এর জন্য খিচুড়ি রেঁধেছিলেন বঙ্গবন্ধু

২৮৭৩ পঠিত ... ১৭:৩১, মার্চ ১৭, ২০১৯

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সাথে যার নামটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত তিনি হলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বঙ্গ প্রদেশের গোপালগঞ্জ মহকুমায়। তরুণ বয়স থেকে জীবন কাটিয়েছেন পাকিস্তান নামের নতুন এক দেশে। সেখানে ছিল না বাঙালির অধিকার কিন্তু ছিল পশ্চিমাদের অত্যাচার আর নিপীড়ন। ব্রিটিশ আমল থেকেই সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িত বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে লাগলেন পাকিস্তান আমলেও। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা এবং গণঅভ্যুথান, আন্দোলন আর সংগ্রামেই কেটেছে তাঁর জীবন। আর এসবে বারবার চক্ষুশূল হয়েছেন অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর। বারবার যেতে হয়েছে জেলে। তাও বঙ্গবন্ধুকে দমিয়ে রাখা যায়নি। স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করেই ছেড়েছেন।

১৯৬৭ সালে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে বসেই তিনি নিয়মিত লিখতেন। প্রতিদিনকার যাপনের কথা, সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে ভাবনা ডায়রিতে লিখে রাখতেন তিনি। সেসব নিয়েই পরে ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয় বই ‘কারাগারের রোজনামচা’। সমাজ, রাজনীতি ছাড়াও বন্দিজীবনের নানান অভিজ্ঞতার কথাও লিখেছেন বঙ্গবন্ধু। কারাগারে থাকাকালে এই দৃঢ় ব্যক্তিত্বের মানুষটি কখনো ভেঙে পড়েননি। বাকি বন্দিদের উজ্জীবিত করতে বঙ্গবন্ধুর রসবোধের পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর ডায়রিতে। তেমনই একটি মজার ঘটনা থাকছে eআরকির পাঠকদের জন্য।

২৯শে এপ্রিল ১৯৬৭, শনিবার

২৯ তারিখ সকালে বসে কাগজ পড়ছি, ডাক্তার সাহেব আমাকে দেখতে আসলেন | বললাম, রোগ ও শোক এই দুইটাতো কারাগারের সাথী-কি আর দেখবেন? সকালে ১০টা-১১টা পর্যন্ত কাগজ অথবা বই পড়ি। ১২টার সময় দেখি রেণু কয়েক সের চাউল, কিছু ডাউল, তেল, ঘি, তরকারি, চা, চিনি, লবণ, পিঁয়াজ ও মরিচ ইত্যাদি পাঠাইয়াছে। আশ্চর্য হয়ে গেলাম। ডিভিশন 'ক' কয়েদিরা বাড়ির থেকে এসব আনতে পারে ডিআইজি প্রিজনের অনুমতি নিয়ে। অনুমতি নিয়েই পাঠাইয়াছে দেখলাম। ভালই হয়েছে । কিছুদিন ধরে পুরানা বিশ সেলে যে কয়েকজন ছাত্র বন্দি আছে তারা খিচুড়ি খেতে চায়। বহুদিন আমাকে বলেছে কিন্ত কুলাতে পারব না বলে নড়াচড়া করি না। কিছু কিছু বাঁচাইয়াছি, কয়েকটা মুরগি, কিছু ডিমও জোগাড় করেছি। নূরুল ইসলাম, নূরে আলম সিদ্দিকী ও আরও কয়েকজন মিলে ‘খিচুড়ি সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করেছে। খিচুড়ি আদায় করতেই হবে। একদিন হঠাৎ আমার পাকের ঘরের কাছে একটা কাঠাল গাছ আছে, সেখানে খবরের কাগজে কালি দিয়ে লিখে কাঠাল গাছে টানাইয়া রেখেছে কোনো কয়েদিকে দিয়ে৷ তাতে লেখা আছে 'আমাদের দাবি মানতে হবে, খিচুড়ি দিতে হবে।' নীচে লেখা ‘খিচুড়ি সংগ্রাম পরিষদ’। আমি তো নূরুল ইসলামের হাতের লেখা চিনি। বাইরে ও পোস্টার লেখতো। তারই হাতে লেখা। আমি তাদের ডেকে বললাম, এসব দাবি টাবি চলবে না। দরকার হলে জনাব মোনেম খানের পন্থা অবলম্বন করব। খুব হাসাহাসি চললো৷ মাঝে দুই একজনে দুই একবার শ্লোগানও দিয়েছে-‘খিচুড়ি দিতে হবে।’

আজ সুযোগ হয়ে গেল। মালপত্র পাওয়া গেল| বিকালে তাদের বললাম ‘যাহা হউক তোমাদের ভাবির দৌলতে তোমাদের খিচুড়ি মঞ্জুর করা গেল। আগামীকাল খিচুড়ি হবে।’

যথারীতি রবিবার সকাল থেকে খিচুড়ি পাকের জোগাড়ে আত্মনিয়োগ করা হলো। রেণু কিছু ডিমও পাঠাইয়াছে। কয়েকদিন না খেয়ে কয়েকটা ছোট ছোট মুরগির বাচ্চাও জোগাড় করা হয়েছে। আমি তো জেলখানার বাবুর্চি, আন্দাজ করে বললাম কি করে পাকাতে হবে এবং আমার কয়েদি বাবুর্টিকে দেখাইয়া দিলাম৷ পানি একটু বেশি হওয়ার জন্য একদম দলা দলা হয়ে গেছে। কিছু ঘি দিয়ে খাওয়ার মত কোনোমতে করা গেল। পুরানা বিশ সেলে আট জন ডিপিআর, তাদের ফালতু, পাহারা, মেট চারজন করে দেওয়া হলো। আমার আশে পাশেও ৮/১০ জন আছে সকলকেই কিছু কিছু দেওয়া হলো৷ ডিম ভাজা, ঘি ও অল্প অল্প মুরগির গোস্তও দেওয়া হলো। গোসল করে যখন খেতে বসলাম তখন মনে হলো খিচুড়ি তো হয় নাই তবে একে ডাউল চাউলের ঘণ্ট বলা যেতে পারে। উপায় নাই খেতেই হবে কারণ আমিই তো এর বাবুর্টি। শাহ মোয়াজ্জেম, নূরে আলম, নূরুল ইসলাম বলল, ‘মন্দ হয় নাই।’ একটু হেসে বললাম, ‘যাক আর আমার মন রাখতে হবে না। আমিই তো খেয়েছি। যাহা হউক খিচুড়ি সংগ্রাম পরিষদের দাবি আদায় হলো, আমিও বাঁচলাম।

২৮৭৩ পঠিত ... ১৭:৩১, মার্চ ১৭, ২০১৯

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top