নব্বইয়ের দশকের শেষেরদিকের পটেটো স্টিক্সের বিজ্ঞাপনের কথা মনে আছে? ঐযে একা একা খেতে চাও? দরজা বন্ধ করে খাও বলা বিজ্ঞাপনটা। এবিজ্ঞাপনের একটা ডায়লগকে এত সিরিয়াসলি যে নেয়া হবে সেটা বোধ হয় নির্মাতাও কল্পনা করেননি। মনে হচ্ছে, পরামর্শটা পটেটো স্টিক্সের জন্য ছিল না বরং দেশের সম্পদ লুটের জন্য ছিলো। পার্থক্য শুধু, এখানে দরজা নেই, বরং সবাইকে ঘটনাস্থল থেকে বের করে দিয়ে খাওয়া হচ্ছে খোলাখুলি।
বাংলাদেশে পর্যট খাতের যে নাজুক অজস্থা, হাতেগোনা কয়েকটা জায়গায় গিয়ে স্বস্তি পাওয়া যায় টুকটাক, এরমধ্যে সিলেটের কয়েকটা জায়গা উল্লেখযোগ্য। এখানের পর্যটন স্পটের কথা বলতে গেলে জাফলং, রাতারগুলের সাথে ভোলাগঞ্জের সাদা পাথরের নাম এম্নিতেই চলে আসে মানুষের মুখে মুখে। সেই ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর এলাকায়, গতবছর ৫ আগস্টের কিছু পর পরই ফেসবুকে একটা ভিডিও ভাইরাল হতে দেখেছিলাম।
সাদাপাথর এলাকায় একদল মানুষ মাইক নিয়ে ঘোষণা করছে, এখানে এসে আপনারা পরিবেশ নষ্ট করছেন, আপনারা আর এখানে আসবেন না। ছেলেমেয়ে এক সাথে পরিবেশ নষ্ট করা আমরা মেনে নেব না। আপনারা আর কখনও আসবেন না। বেশ কয়েকদিন আলোচনায় থাকলেও পরে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর চাপে হারিয়ে যায় বিষয়টি।
চিন্তা করে দেখলাম আসলে এত মানুষ একত্রে যাচ্ছে, নিশ্বাসের কার্বন ডাই অক্সাইডেও তো পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। মানুষজন কত ভালো, পরিবেশ রক্ষার জন্য মানুষজকে আসা থেকে নিরুৎসাহিত করছে, হয়ত বাধাও দিবে সামনে। যাক, দেশে ভাল কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে।
তবে সেই স্বস্থির নিশ্বাস বেশিদিন স্থায়ী হয়নি, খবরের শিরোনামে ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর। খবরটা হলো যত্রতত্র পাথর উত্তোলন করে এলাকাটাই পরিষ্কার করে ফেলা হয়েছে। গুগল ইমেজে সাদা পাথর লিখে সার্চ দিলেই একটা জিনিস দেখা যাচ্ছে। অতীত-বর্তমান। সাদা পাথর আগে কেমন ছিল? আর এখন কেমন আছে। বর্তমানের ছবি দেখলে মনে হবে কেউ যেন পাথর মাটি খুবলে খুবলে খেয়ে সাবাড় করে ফেলেছে।
পাথর, বালু উত্তোলন করে পুরো জায়গাটা এমন অবস্থা করে ফেলা হয়েছে যেন দেখলে মনে হবে কোনো একটা মরুভূমিতে ভুল করে চলে এসেছি। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে মাঝখানে এক জায়গায় বলতে শুনি, দেশের রাজনীতিতে কারও সাথে কারও কথায় মেলে না, মত মেলে না, কিন্তু পাথর তুলবার ক্ষেত্রে সর্বদলীয় ঐক্য করে রাখা হয়েছে।
শেখ হাসিনা পালানোর সাথে সাথে সিলেটে পাথর তোলার কেয়ারির ইজারাদাররাও পালিয়েছে, এরপর যে যার মত পাথর তোলা শুরু করেছে, পাথর তুলতে তুলতে এমন অবস্থা হয়েছে যে জায়গাটার নাম সাদা পাথর থেকে সাদাচর করে ফেলার মত বানিয়ে ফেলেছে। আসলেই একা একা খেতে চাইলে দরজা বন্ধ করে খাও। আর দরজা না থাকলে যেখানে খাচ্ছো সেখানে কাউকে আসতেই দিয়ো না।
পাঠকের মন্তব্য