কে এসেছে? কে এসেছে? পুলিশ এসেছে পুলিশ এসেছে!

৯২ পঠিত ... ১৮:১৬, জুলাই ০২, ২০২৫

লেখা: আহনাফ তাহমিদ 

সেই সাহসি ভিডিও ক্লিপের কথা তো সবার মনে আছে? তিনি হচ্ছেন ঠাকুরগাঁও এর বীর সন্তান। অনেক সাধনার পর আপুর সাথে যোগাযোগ করি। তিনি ফেসবুক ব্যবহার করেন না।

আজকে বলব ছবিতে স্লোগান দেওয়া এই নারীর গল্প। ওনার নাম তামান্না। ১৬ জুলাই যখন ঠাকুরগাঁও চৌরাস্তায় আন্দোলন সংগঠিত হয় তখন থেকেই তামান্না মাঠে ছিলেন। উনি এবং উনার বান্ধবী সোহানা ইসলাম সমাপ্তি মূলত নারীদের একত্রিত করে আন্দোলন পরিচালনা করতেন। একটা মেসেঞ্জার গ্রুপ খুলেই সবাইকে অ্যাড করেন সবাইকে।

এভাবে আন্দোলন চলছিল। রাত হলে সবাই মিলে প্লান করতে বসে যেতেন। কিভাবে আন্দোলন পরিচালনা করা যায়। আন্দোলন চলাকালীন সময় তিনি তার বান্ধবীরা মেসে ছিলেন। আন্দোলনের দিনগুলোতে খেয়ে না খেয়ে একলা বাসায় ছিলেন।

বাসা থেকে ক্রমেই চাপ আসতে শুরু করে। যেন বাসায় চলে আসেন। কিন্তু কোনোভাবেই তিনি বাসায় যাবেন না। ১৮ ই জুলাই ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ডে পুলিশ গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। এদিকে সারাদেশে একের পর এক লাশ। পরিস্থিতি উত্তপ্ত। রাতেই কার্ফিউ।

তামান্নার বাবা সে রাতে এসে জোর করেই তাকে গ্রামে নিয়ে যান। কিন্তু আবু সাঈদের সেই দৃশ্য তামান্নাকে ঘরে বসে থাকতে দিত না। এক চাপা উত্তেজনা। ২৯ জুলাই কার্ফিউ ভেঙে আবার আন্দোলন শুরু হয়। তো তামান্না তখনও গ্রামে। গ্রাম থেকে ঠাকুরগাঁও কম হলেও ১২ কিলোমিটার। এদিকে যাতায়াতের জন্য এক টাকাও নাই।

৩১ জুলাই বড় বোনের কাছে অনেক জোর করে ১০০ টাকা নিয়ে বেরিয়ে যান ঠাকুরগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে। কিন্তু কোর্ট প্রাঙ্গণে থামিয়ে দেয় পুলিশ। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে পুলিশ নারীদের গায়ে হাত তোলে। রাগে ফুঁসছিল সবাই। তামান্না সমাপ্তির নেতৃত্বে তখন সেখানেই বসে পড়ে মেয়েরা। সামনে পুলিশের ব্যারিকেড। সাদা পোশাকে ডিবির লোকজন সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে। ছোটো ভাই সাব্বির প্রভাত স্লোগান লিখে দেয়‌।

কে এসেছে কে এসেছে

পুলিশ এসেছে পুলিশ এসেছে

কি করছে কি করছে

স্বৈরাচারের পা চাটছে

ঠিক তখনকার ভিডিওচিত্র আমরা ফেসবুকে ভাইরল হতে দেখি। কী সাহস নিয়ে আঙুল তুলে চোখ রাঙানি দিচ্ছে ক্ষমতার দিকে। স্লোগান দেওয়ার সময় পুলিশ তুলে নিয়ে যাবার হুমকি দিতে থাকে।

তখন তিনি বলেন, আমি কোনো অন্যায় করিনি। আমাকে প্রয়োজনে জেলে নিয়ে যান। কিন্তু দাবি আদায় না করে আমি মাঠ ছাড়ব না।

গল্পের এক ফাঁকে তামান্না বলছিলেন, বিশ্বাস করবেন না ভাই আমার‌ এক বিন্দু ভয় হচ্ছিল না। আমাকে তখন যদি গুলি করত আমার একটুও আফসোস হতো না। আমার অনুপ্রেরণা ছিল আবু সাঈদ ভাই।

কতটুকু দেশপ্রেম আর বুকে সাহস থাকলে বন্দুকের নলের সামনে হাত প্রসারিত করা যায়?

আমি চুপ হয়ে শুনছিলাম।

সেই তামান্না সমাপ্তিরা ঘরে ফিরে গিয়েছে‌। কারণ কী জানেন? এখনো তাদের নিরাপত্তাটুকু নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। ওনার সাথে আন্দোলনকারীদের এখনও ছাত্রলীগের লোকজন খুঁজে বেড়ায়। পুলিশের কাছে বারবার গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরে আসে।

আর আফসোস হয় এতদিন পরেও এই নারীদের ভূমিকাকে আমরা সামনে নিয়ে আসতে পারিনা ই। আমরা যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারি নাই।

তামান্নারা জুলাই'র‌ প্রাণ। সেই কয়েক মুহুর্তের ভিডিও দেখে সারাদেশে হাজার হাজার মেয়ে সাহস পেয়েছিল। অথচ কালের ভিড়ে তামান্নারা হারিয়ে গিয়েছেন অবমূল্যায়নে।

পুনশ্চ: তিনি তার ব্যক্তি জীবনে পুরোপুরি মন দিয়েছেন। তার কোনো ফেসবুক আইডি নাই।

৯২ পঠিত ... ১৮:১৬, জুলাই ০২, ২০২৫

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top