মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ১৬ মে-র মৈত্রী যাত্রা নারীর প্রথম শেকল ভাঙার যাত্রা না। সারা পৃথিবী জুড়ে সভ্যতার নানান বাঁকে নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াই করতে হয়েছে মেয়েদের। লড়াই করতে হবে সামনের সময়গুলোতেও। তবু ১৬ তারিখে এই মৈত্রী যাত্রা নানান দিক থেকে নানান গুরুত্ব বহন করে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে লক্ষ লক্ষ নারী রাস্তায় নেমে এসেছিল, শহীদ হয়েছিল, আহত হয়েছিল বাজেভাবে! নারীদের বাদ দিলে জুলাই আমাদের হতো না, জুলাই হতো শেখ হাসিনার। জুলাই জুড়ে নারীরাই হয়ে উঠেছিল আমাদের অনুপ্রেরণা, সাহস আর ভরসার জায়গা। ৫ আগস্টের পর যা উলটে গেছে ৩৬০ ডিগ্রি। দেশটা যেন নারীদের জন্য হয়ে উঠেছে আরেকটা টিকে থাকার লড়াই। ধর্ষণ, গণধর্ষণ, হেনস্থা, মব টেরোরিজম, চরিত্র হনন থেকে শুরু করে নারীদের ওপর নেমে আসে নানান পুরুষতান্ত্রিক খড়গ। শেষমেষ নারী সংস্কার কমিশন বাতিল চেয়ে হেফাজতে ইসলামের বিশাল সমাবেশ ও সেই সমাবেশে ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্য যেন নারীদেরকে আরও বেশি কুক্ষিগত করে ফেলছিল।
বলা হয়ে থাকে, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষ তার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে কামব্যাক করে। নারীরাও করেছে। জগতের সকল নারী বিদ্বেষের প্রতিবাদ ও ন্যায্য হিস্যা বুঝে নেয়ার জন্য ১৬ মে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে হয়ে গেল নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা। যেখানে যোগ হয়েছেন নানা শ্রেণী, পেশার নারী-পুরুষ সবাই। প্লাকার্ডে, স্লোগানে ও গানে-গানে তুলে ধরেছেন নিজেদের হিস্যার কথা, দাবির কথা, অধিকারের কথা, মানুষ হিসেবে রাষ্ট্রে বেঁচে থাকার আকুতির কথা।
যে যাত্রায় যুক্ত হয়েছে চা-শ্রমিক নারীরা, গার্মেন্টসের নারীরা, দলিত নারীরা, যৌনকর্মীরা থেকে শুরু করে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ!
আমরা সবাই বেশ্যা, বুঝে নিব হিস্যা
চেয়েছিলাম হিস্যা হয়ে গেলাম বেশ্যা
আমরা কী চাই? আজাদি!
জমি, ঘর, উত্তরাধিকার, নারী চায় সমান অধিকার।
আমরাই তনু, আমরাই মুনিয়া, আমরাই নুসরাত।
কৃষিতে নারীর কাজকে স্বীকৃতি দিতে হবে।
স্লোগানে স্লোগানে ও প্লাকার্ডে উঠে আসে নারীদের এমন দাবি, অধিকার ও মনের কথা। বসুন্ধরার আনভীরের আলোচিত ধর্ষণ ও আত্মহত্যার ঘটনার বিচার চেয়ে প্লাকার্ডও দেখা গেছে মৈত্রী যাত্রায়।
নারীর ডাকে এক মৈত্রী যাত্রাতেই সব অধিকার আমরা পেয়ে যাবো না। পুরোনো শিকল ভাঙলে নতুন শিকল আসবে। সেসব শিকল ভাঙার জন্য যুগে যুগেই থাকবে নারীদের তথা মজলুমদের এই যাত্রা।
পাঠকের মন্তব্য