হেফাজত ও বেশ্যা শব্দের পোস্টমর্টম

৮৯২ পঠিত ... ১৪:৫২, মে ০৮, ২০২৫

17 (3)

বে/শ্যাবৃত্তিকে সম্মানজনক পেশা হিসেবে স্বীকৃতি চাওয়ায় নারী কমিশনকে ‘বেশ্যা’ ডেকেছে হেফাজতে ইসলাম। সেই সুতা টানতে টানতে এই দীর্ঘ লেখা।

‘বেশ্যা’ বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে একটি স্ল্যাং। 

স্ল্যাং কী? যেসব শব্দ জনসম্মুখে বললে  তওবা তওবা পড়তে হয়, কিংবা শিক্ষিত লোক কানে হাত চেপে রাখে সাধারণ অর্থে তা-ই স্ল্যাং। কানে হাত চেপে ধরা ছাড়াও ভিন্ন ক্যাটাগরির স্ল্যাং আছে। যেমন, অক্কা পাওয়া কিংবা পটল তোলা। অক্কা অর্থ প্রভু বা মা। অক্কা পাওয়া হলো যখন কেউ প্রভু লাভ করে। সিমিলারলি, পটল একটি সংস্কৃত শব্দ, অর্থ চোখের পাতা। পটল তোলা হলো কেউ যখন তার চোখের পাতা বা পটল উলটে ফেলে। ইয়ুজুয়ালি, স্ল্যাং বলতে আমরা কিছু নির্দিষ্ট শব্দকে কল্পনা করলেও এর গণ্ডি আরও বড়। শব্দের স্তরগত যাতায়াতের কারণে একই শব্দ কখনও স্ল্যাং, আবার কখনও স্ল্যাং নয়। তবে স্ল্যাং যে শুধু শব্দের ওপরই নির্ভর করে তা-না, কনটেক্সটের ওপরও নির্ভর করে। পটল তোলা কিংবা অক্কা পাওয়া হলো কনটেক্সচুয়াল স্ল্যাং।

কিছু স্ল্যাং আছে যাকে বলে প্রফেশনাল বা বৃত্তিগত স্ল্যাং। চাকরিজীবী মানুষ যদি না বলে ছুটি নেন, তাকে ফ্রেঞ্চ লিভ, ক্যাজুয়াল লিভ বা CL না বলে কেউ যদি ‘শেয়াল মারা’ বলেন সেটিও  স্ল্যাং।

স্ল্যাং এখন যেমন অশালীন ইঙ্গিতে প্রয়োগ হয়, ষোড়শ-সপ্তদশে কিংবা তারও আগে এমনটা ছিলো না। তখন এই পরিশীলিতের চর্চা বা সেন্সরশিপের ধার ধারতেন না কেউ। তাদের গিভ অ্যান্ড টেইকও ছিলো স্বাভাবিক। এর উদাহরণ দেয় প্রবাদগুলো। যেমন,  

* পাঁচজনের খায় একলা মা/গি
দশ হাতে খায় ডোকলা মা/গি

*ঘরে ভাত নেই, না/ঙে ঠেলায়

*গিন্নির পা/দে গন্ধ নেই ইত্যাদি।

‘কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ’ বইটিতে মাগ ও ভাতার শব্দযুগল ব্যবহৃত হয়েছে স্বামী-স্ত্রী অর্থে। যেমন, ‘বাকিয়ারাস শুহরে দুই বিভাস্তু আছিল; মাগ সুশীল, ভাতার কুশীল হইল।
এ কু ভাতার এক রবিবারের মাতাল হইয়া শুঁড়ির দোকানে শুইয়া রহিল।
এহা শুনিয়া তাহার যে মাগ, সে দোকনেতে গিয়া, ভাতার মাতাল দেখিয়া তাহারে কহিল, ঠাকুর, মুনিয়ে দেখিলে কী কহিবে? চলে যাও বাড়িতে। এহা শুনিয়া ভাতারে বড় ক্রোধ হুইয়া মাগেরে কিলাইতে লাইগিল, এবং গাইল অনেক দিল।'

বাংলা সাহিত্যের আদিতম স্ল্যাং এর পরিচয় পাওয়া যায় চর্যাপদের ১৮ নাম্বার পদটিতে। কাহ্নপা এই পদের শেষ বাক্যটি লিখেন, ‘ডোম্বী ত আগলি নাহি চ্ছিণালী’। চ্ছিণালীর বর্তমান রূপ হলো ছেনালি, অর্থ ব্যাভিচারী নারী। অবশ্য হাজার বছর আগে কাহ্নপা ছেনালির চরিত্র কী ভেবেছিলেন, আমরা জানি না।'

বিদ্যাসাগর তার প্রভাবতীসম্ভাষণের এক পাদটীকায় লিখেন, ‘মা/গী শুইল। আমি আদর করিয়া, তোমায় মা/গী বলিয়া আহ্বান ও সম্ভাষণ করিতাম; তদনুসারে, তুমি মা/গী শব্দে আত্মনির্দেশ করি্তে’
তারই ‘কুন্দনন্দিনী বিষপান’ গল্পের অন্যতম চরিত্রের এক সংলাপ হলো ‘দূর মা/গী আমি হলেম গিয়ে কিনা তোর বাপের শালা’

শালার ব্যাপারটা যখন চলেই এলো, এ নিয়ে কথা শেষ করেই যাই। কথায় কথায় অনেকেই বলেন, ‘ধুর শালা! যাহ শালা!’ শালা ইটসেলফ ইজ আ স্ল্যাং। সাধারণ একটি সম্পর্ক কেন, কীভাবে গালি হয়ে উঠলো তা বোঝা কঠিন। তবে ‘শনিবারের চিঠি’ পত্রিকায় একবার বনফুল ‘শালা’ নামে একটি কবিতা লিখেন ভাদ্র মাসের এক সংখ্যায়। পরবর্তী সংখ্যায়ই শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায় প্রস্তাব করেন, ‘শালা’র প্রতিশব্দ হিসেবে যাতে কমরেডকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

সমরেশ বসুর ‘প্রজাপতি’ অশ্লীলতার অভিযোগে নিষিদ্ধ হয়ে যায়। উপন্যাসকে কেন্দ্র করে মামলা মোকাদ্দমাও হয়। ‘এখনি’ উপন্যাস প্রসঙ্গে লেখক রমাপদ চৌধুরী জানান একটি প্রাসঙ্গিক কথা। বলেন,

‘একটি পত্রিকায় তো একজন পাঠক জানালেন, এ উপন্যাসে কতবার ‘শালা’ শব্দটি আছে। তাকে আর জানাইনি অন্যান্য শব্দগুলি যা কানে এসেছে, মুদ্রণ অযোগ্য বলেই সবচেয়ে নির্দোষ শব্দটি বারংবার ব্যবহার করতে হয়েছে।’

মুদ্রণ অযোগ্য মানে হলো পাঠকের তা গ্রহণ করার অক্ষমতা, এবং যে অক্ষমতা ক্রমশ উর্ধমুখী।

ওই সময় সুশীল সমাজের ইন্টেলেকচুয়াল স্যানিটেশনের দায়িত্ব নেয় বঙ্গদর্শন, তত্ত্ববোধিনীসহ আরও কিছু পত্রিকা। শুধু তাই নয়, ১৮৭৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর কলকাতার টাউন হলে জড়ো হন অশ্লীলতা নিবারণী সমিতির ভদ্রলোকেরা। উদ্দেশ্য বইয়ের, খেউড়ের, কবিগানের, যাত্রার বা সংমিছিলের অশ্লীলতা নিবারণ।

স্ল্যাং বা অপভাষার পথের বাঁক পরিবর্তন হয় বিশ শতাব্দীর দিকে। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দে ‘পরিচয়’ পত্রিকায় সৈয়দ আলী আহসান একটি প্রবন্ধ লিখেন। প্রবন্ধের নাম-‘কবি সত্যেন্দ্রনাথ’

এখানে এক অংশে তিনি বলেন,
‘ইংরেজিতে যাহাকে স্ল্যাং বলে, যাহাকে অভিধানকারেরা অপভাষা আখ্যা দিয়ে থাকেন, তাহার প্রাচুর্য্য ঘটিয়াছে নিম্নোদ্ধৃত কয়েকটি ছত্রে-' 

এরপর তিনি কিছু লাইন দেন যেখানে তার মনে হয়েছে অসংখ্য অপভাষার ব্যবহার হয়েছে।


‘বাদলা দিনের উদলা ঝামট
ভাসিয়ে দেবে সৃষ্টি
লাগবে উছট ছাটের জলে
লাগিয়ে  দেবে দৃষ্টি’

এখানে আমাদেরকে মাইক্রোস্কোপ দিয়ে স্ল্যাং খুঁজতে হলেও সৈয়দ  আলী আহসানের হয়নি। এভাবেই সময়ের সাথে সাথে স্ল্যাং কিংবা অপভাষার চেহারা বদলায়।

স্ল্যাং সম্পর্কে John Moore একটা চমৎকার কথা বলেছেন।

Slang is poor man’s poetry.

শুধু তাই নয়, স্ল্যাং দিয়ে অর্থের প্রসারণ কিংবা সংকোচন লক্ষণীয়। যেমন, ‘ফেসবুকে ওরা দুইজন একে ওপরের পিছে লেগেছে’ বলার চেয়ে ‘ফেসবুকে পোন্দা/পুন্দি করতেছে’ বললে বেশি অর্থ ব্যয়ের ঝামেলাও মেটে, আবার পরিষ্কারও হয়।

স্ল্যাং ব্যবহারের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো অন্যকে অপমান করা। অপমান করতে গিয়ে আমাদের বেছে নিতে হয় তীব্র, জ্বালাময়ী কিছু। অপমানের কোনো স্বতন্ত্র ভাষা নেই। একজন ডাকাতকে ডাকাত বললে সে অপমানিত হবে না, কিন্তু একজন দোকানদারকে যদি বলেন ডাকাত, তা হবে অপমানের ভাষা। মানুষকে পশু বললে সে রাগ করে, অপমানিত হয়। একই সাথে, বাঘের বাচ্চা বললে সে গর্বিত হয়, কিন্তু শু*য়ো*রের বাচ্চা বা কু*ত্তা*র বাচ্চা শুনলে তেড়ে আসে। কারণ তা অপমানের ভাষা।


ঠিক এই কারণের নারী কমিশনের বেশ্যাবৃত্তিকে সম্মানসূচক হিসেবে চাওয়া আর নারী কমিশনকে হেফাজতের ‘বেশ্যা’ ডাকার প্রতিবাদ কন্ট্রাডিক্ট করবে না। দুটি শব্দ একই হলেও তাদের কনটেক্সট, পারপাজ, এমনকি টোনও আলাদা।

এই লেখার উদ্দেশ্য হেফাজত বা নারী কমিশন না। বরং, বে/শ্যা হতে  পারে।

বেশ্যা ঘাঁটতে গিয়ে (মানে শব্দটি ঘাঁটতে গিয়ে) এক মজার জিনিস জানলাম। যদিও এর স্বপক্ষে তেমন একটা প্রমাণ নেই।

বিক্রমাদিত্য ছিলেন বিদ্যোৎসাহী এবং প্রজাবৎসল মহারাজা। তার রাজসভাতেই কালিদাসরা ছিলেন। বিক্রমাদিত্যের মাথায় একবার তৃষ্ণার্ত পথিকদের বিনামূল্যে জল দান করার ভূত চাপলো। সেই লক্ষে রাস্তার ধারে বসালেন পানশালা। জলাধারগুলির নাম দিলেন ‘বেশ’। বেশ পরিচালনার জন্য নিয়োগ পেল অনেক মহিলা কর্মচারী।

রাস্তায় চলমান পথিক, বণিক, সৈনিক, পর্যটকরা সেখানে এসে জল খায়। এভাবেই দিন গড়ায়। কালক্রমে জলের সাথে যোগ হলো খাদ্য। খাদ্য পরিবেশনের জন্য বাড়লো নারী। এরপর তারা সেখানে থাকা শুরু করলো। সেই সুবাদে পথিকরাও সেখানে রাত্রিযাপনের সঙ্গী হলো। পয়সার বিনিময়ে শুরু হলো সেবা। সেই সেবা সময়ের ব্যবধানে যৌনতায় রূপ নিল। এইভাবেই ‘বেশ’-এর মালকিন ‘বেশ্যা’য় পরিণত হন এবং ‘বেশ্যা’ শব্দটির উৎপত্তি হয়। তবে আগেই বলেছি, এর স্বপক্ষে শ্রুতি ব্যতীত অন্য প্রমাণ নেই বললেই চলে।

পতিতা বা বেশ্যাবৃত্তির উৎপত্তি অনেক অনেক বছর আগে। পৃথিবীতে তখনও ধর্মের বিকাশ সেভাবে ঘটেনি। সুমেরিয়ান, মতান্তরে ব্যাবিলনীয় সভ্যতার মধ্যেই প্রথম পতিতার দেখা মেলে। হেরাডোটাস অবশ্য ব্যাবিলনের পক্ষে। সেখানে প্রত্যেক নারীকে বছরে অন্তত একবার করে ফার্টিলিটির দেবী আফ্রোদিতির মন্দিরে যেতে হতো এবং সেবাশুশ্রূষার নমুনা হিসেবে একজন বিদেশীর সাথে অল্পমূল্যের বিনিময়ে মিলিত হতে  হতো। একই চর্চা হতো সাইপ্রাস, করিন্থে ও আশেপাশেও।

সেসময় গণিকা নারীরা সমাজে-রাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হিসেবে সম্মান পেতেন এবং সাধারণ সভ্যসমাজের প্রতিনিধিসহ  রাজারাও তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। যখন ইচ্ছা তখন যে কেউ তাদের ভোগার্থে ব্যবহার করতে পারত না কিংবা বাজে কথা বলতে পারত না। এমনকি গণিকাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তিরও অধিকার ছিল। রাজকোষ থেকে বেতন ছাড়াও তারা অলংকার, পোশাক-আশাক, অন্যান্য উপঢৌকন, উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি লাভ করতেন। কোনো গণিকার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার সঙ্গে বা তার অবিবাহিতা মেয়ের সঙ্গে বদেহমিলনের চেষ্টা করলে সর্বোচ্চ আর্থিক জরিমানা হতো।

কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র থেকে জানা যায়, মৌর্য যুগের বহু আগে থেকেই রাষ্ট্রের প্রয়োজনে গণিকা বা বেশ্যা রাখা হতো। পুরাণে আছে বেশ্যা দর্শনে ‘দিন ভালো যায়’। তন্ত্রশাস্ত্রে আছে, পাঁচ শ্রেণির বেশ্যা; শক্তি বা দেবীর স্থান অধিকার করতে পারে। পাঁচটি শ্রেণি হলো: ১. নাগরী – নগরবাসিনী গণিকা ২. রাজবেশ্যা – রাজার দ্বারা গৃহীত গণিকা ৩. গুপ্ত বেশ্যা – গোপন অভিসারী নারী ৪. ব্রহ্ম বেশ্যা – তীর্থস্থানে যারা গণিকাবৃত্তি করে ৫. দেববেশ্যা – মন্দিরের দেবদাসী।

নারীরা কেন গণিকাবৃত্তি পেশা হিসেবে নেয় এর কারণ হিসেবে আর্থার বাসাম তার ‘Wonder that was India’ বইতে পাঁচটা কারণ বলেছেন।

১) স্বজাতি পাত্রের সন্ধান না পাওয়া

২) নারীর প্রতি আত্মীয় ও শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের দুর্ব্যবহার

৩) নানারকম ধর্মীয় অনুষ্ঠানে শিশুকন্যাদের উপহার হিসেবে দান করা

৪) অকাল বৈধব্য

৫) ধর্ষিতা ও অপহৃতা নারীদের সামাজিকভাবে বহিষ্কার

সপ্তম শতকের রাজা হর্ষবর্ধনের সভাকবি ছিলেন বানভট্ট। বানভট্ট তার ‘কাদম্বরী’ গ্রন্থে লিখেছেন, সেকালে বেশ্যারাই দেশের রাজাকে স্নান করাত। এমনকি রাজার পরনের সব পোশাক বেশ্যারাই পরিয়ে দিতো। নবম শতকে 'কুট্টনীমত' গ্রন্থ লিখেছিলেন কাশ্মীরের মন্ত্রী ও কবি দামোদর গুপ্ত। বিকরবালা নামের এক বৃদ্ধা বেশ্যার উপদেশ নামা নিয়েই মূলত লেখা হয়েছে বইটি। বাৎসায়নের কামসূত্রের মতোর 'কুট্টনীমত' একটা কামশাস্ত্র গ্রন্থ। কালিদাসের মহাকাব্য গুলিতেও বেশ্যা নারীর উল্লেখ আছে। দোনা গাজির-সয়ফুল মুলক বদিউজ্জামাল, আবদুল হাকিমের- লালমতি সয়ফুল মুল্লুক, শুকুর মাহমুদের- গুপীচন্দ্রের সন্ন্যাস – এইসব কাব্য পুথিতে বে/শ্যা- সংস্কৃতির সরস বিবরণ দেওয়া রয়েছে। একটা সময় গণিকাবৃত্তি সম্মানিত পেশা হিসেবে গণ্য হলে কীভাবে আজকে স্ল্যাং হিসাবে রূপ নিলো সেটা ফুড ফর থট। 

একটি শব্দের কীভাবে স্থান-কাল-পাত্রভেদে স্ল্যাঙিফিকেশন (Slangification) হয়, তা এর মধ্যে বলা হয়ে গেলেও গালাগালির একটি বিস্তর ও শক্ত জায়গা জুড়ে আছে অবৈধ সম্পর্কের প্রতি ইঙ্গিত। যেমন, মাদারচো/দ, বানচো/দ, বেজন্মা ইত্যাদি। বাংলায় সবচেয়ে জোরালো ও প্রচলিত গালি বোকাচো/দা-ও এই তালিকায় অন্তভুর্ক্ত। বোকাচো/দা অবৈধ সন্তান হিসেবেই ব্যবহৃত হতো। বোকাচো/দার উৎপত্তি বিষয়ক ছড়াটি মজার।


মাটিতে পড়িলে বীর্য রোদ্দুরে শুকায়।
জলেতে পড়িলে বীর্য পুঁটি মাছে খায়।
সেই বীর্য খেয়ে বিধবা গর্ভবতী হয়।
তাহার সন্তানেরে লোকে বোকাচো/দা কয়।

বোকাচো/দা থেকে আবার বে/শ্যায় ফিরে যাই।

জীবনানন্দের লেখায় বেশ্যার আনাগোনা লক্ষণীয়। এমনকি বনলতা সেন বে/শ্যা ছিলেন কি-না এনিয়েও আর্গুমেন্ট আছে। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর পতিতা সুকুমারী দত্তের প্রেমে মজেছিলেন। সাহিত্যিক মীর মোশাররফ হোসেন নিয়মিত বেশ্যাপাড়ায় যেতেন যা তিনি নিজেই তার ডায়েরিতে লিখে গেছেন। হাসন রাজা, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পতিতালয়ে আনাগোনা ছিলো অহরহ। (তথ্যসূত্র: অবিদ্যার অন্তঃপুরে, নিষিদ্ধ পল্লীর অন্তরঙ্গ কথকতা; ড. আবুল আহসান চৌধুরী: শোভা প্রকাশ)। রবীন্দ্রনাথের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের শুধুমাত্র কলকাতার একটি এলাকাতেই ৪৩টি বে/শ্যালয় ছিলো।

রেফারেন্সের কারণ এই না যে কাউকে উৎসাহিত করা। কারণ বরং এই, বেশ্যাকে যদি সাহিত্য রসদ হিসেবে ব্যবহার করা যায়, একাকীত্বের সঙ্গী হিসেবে নেওয়া যায়, তার হাতে স্নান বা পোশাক পরা যায়-তাহলে তাকে সম্মান দেওয়া যাবে না কেন? কেন এই বেশ্যাভীতি?

বরং টেক হওয়া উচিৎ, মানুষ মূলত বে/শ্যা। যা কিছু আমাদের অর্থের যোগান দেয়, যার কাছে আমরা নিজেকে বিক্রি করি, যা আমাদের পেটে অন্ন দেয়-আমরা তারই বে/শ্যাবৃত্তি করি। যেমন্ যারা বুদ্ধিজীবী, তারা বুদ্ধিবে/শ্যা, যারা লেখক তারা শব্দবে/শ্যা, ডিজিটাল মার্কেটিং করলে মার্কেটিং বেশ্যা, টকশো করে পেট ভরালে টকশো বে/শ্যা।

ইটস টাইম। ইটস হাই টাইম, আমাদের উচিৎ বে/শ্যা শব্দটিকে শুধুমাত্র সে/ক্সের খাঁচা থেকে মুক্তি দেওয়া।


৮৯২ পঠিত ... ১৪:৫২, মে ০৮, ২০২৫

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top