লেখা: এম হাসান
সূরা কাহাফে ‘আসহাবে কাহাফ’দের সম্পর্কে কিছু বর্ণনা আছে। আসহাবে কাহাফ শব্দের অর্থ গুহাবাসি। পবিত্র কোরআনে এই ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এমনকি খৃষ্টান ধর্ম সংশ্লিষ্টরাও এই ঘটনা সম্পর্কে জানেন। খৃষ্টান ধর্মালম্বীদের কাছে এই ঘটনার নায়কেরা খুব সম্ভবত ‘সেভেন স্লিপার্স’ নামে পরিচিত।
আসহাবে কাহাফ হচ্ছেন একচুয়ালি সাতজন যুবক।
সেই সময়ের রোমান শাসকের অধীন এলাকায় তারা মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী হযরত ঈসা (আঃ) আর খৃষ্টানদের ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী যিশু-এর ধর্মে দীক্ষিত হন।
এতে সে সময়ের শাসকরা ক্ষুব্ধ হন। তারা এই সাত যুবক কে সময় বেঁধে দেন নিজেদের পুরাতন ধর্মে ফেরত আসার জন্য। এই সাত যুবক পালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেন।
আশ্চর্যজনক ঘটনা হচ্ছে, এই সাত যুবক যখন পালিয়ে যাচ্ছিল তখন তাদের পিছু নেয় একটা কুকুর।
সাত যুবক একটা গুহায় আশ্রয় নেন। সেখানে ঘুমানোর আগে তারা যাবতীয় বালা মুসিবত থেকে মুক্তি চেয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। সাত যুবক ঘুমিয়ে পড়েন। এক ঘুমে তিন শত বছর পার হয়ে যায়। এসময় বাইরে সেই কুকুরটা পাহারায় ছিল।
তিন শত বছর পর তারা ঘুম থেকে উঠে দেখতে পান, খৃষ্টান ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেই সময়ের শাসকরা তাদের সম্পর্কে জানতে পেরে অনেক খাতির যত্ন করতে চান। কিন্ত সেই যুবকরা আবার গুহায় ফেরত যান।
ইসলামিল Folklore (ইসলামিক টেক্সট না) এ খুব সম্ভবত বারোটি প্রাণী সম্পর্কে বলা হয়েছে যারা বেহেশতে যাবে। সেই প্রাণীগুলোর একটা হচ্ছে আসহাবে কাহাফ এর এই কুকুর।
ঐতিহাসিকদের মতে এই কুকুরের নাম ছিল ‘কিতমির’।
কুকুর সংশ্লিষ্ট আরেকটা ঘটনা ইসলাম ধর্ম বিশ্বাসীদের মাঝে প্রচলিত আছে।
এটা বনী ইসরাইলের এক ব্যাভিচারী নারীকে নিয়ে। যারা ইসলাম ধর্ম অনুসারী, তারা প্রায় সবাই জানেন; এই ধর্মানুযায়ী সবচেয়ে গর্হিত অপরাধের একটি হচ্ছে ব্যাভিচারীতা।
তো একবার এক ব্যাভিচারী মহিলা পানি খেতে গিয়ে খেয়াল করলেন, একটা তৃষ্ণার্ত কুকুর কূপের আশে পাশে ঘোরাঘুরি করছে। এই দৃশ্য দেখে তার মায়া হলো।
ভদ্রমহিলা নিজের জুতাতে করে পানি বয়ে নিয়ে কুকুরকে খাওয়াল।
খোদার সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসার এই দৃষ্টান্তের কারণে সেই মহিলার পূর্ববর্তী পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।
কুকুরের সাথে মানুষের সম্পর্ক ১৫০০০ হাজার বছরের পুরাতন। অন্য কোনো প্রাণীর সাথে মানুষের এত দীর্ঘ সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায় না।
কিন্ত কুকুরের সাথে মানুষের এত গভীর সম্পর্ক কীভাবে তৈরী হলো। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হয় শুরুতে সম্পর্কটা ছিল ভয়ের। তারপর সেটা রূপ নেয় ভালোবাসায়।
হয়তো মা হারানো কোনো নেকড়ে শাবককে মানুষ বুকে তুলে নিয়েছিল আদিম মমতায়। ভালোবাসায় নাকি পাহাড় ও গলে যায়। সেই নেকড়ে শাবকও বদলে গিয়েছিল। সময়ের বিবর্তনে সেই নেকড়ে শাবক হয়ে ওঠে মানুষের সঙ্গী । তাকে খাবার খুঁজতে সাহায্য করে। শিকারে সাহায্য করে। শত্রুর অবস্থান জানিয়ে দেয়। এটা থেকে মানুষ শিক্ষা নেয়। আরও এরকম প্রাণীকে পোষ মানানোর চেষ্টা করে। তাই কুকুরের যেই স্বভাব চরিত্র দেখেন, সেটা কিন্ত একান্তই মানুষের শেখানো।
এ সম্পর্কে David Paul Kirkpatric বলেছেন, God Made Wolves but Sapiens Made Dogs.
ইসলাম ধর্মে পাহাড়া দেওয়া, শিকার করা, অপরাধের অনুসন্ধান করা এরকম স্পেসিফিক কিছু কারণ ছাড়া কুকুর পালনে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্ত ধর্মে কোনো প্রাণীর সাথেই নিষ্ঠুর আচরণ সমর্থন করা হয়নি।
আমার ওস্তাদ শিখাতেন যে একজন বান্দাকে দুই ধরনের হক আদায় করতে হয়। একটা হক্কুল ইবাদ। আরেকটা হক্কুল মাওলা। মানে একটা আল্লাহর হক। আরেকটা তার সৃষ্টির হক।
ইদের খুশি যদি পৃথিবীর সব সৃষ্টির জন্য থেকে থাকে, কুকুরের জন্যও নিশ্চয়ই আছে। মনিতেও আমরা বাড়িতে দেখি বাড়ির পোষা কুকুর, যারা এঁটে খেয়ে বাঁচে তারাও বাড়ির বাসিন্দাদের আনন্দে আন্দোলিত হয়। কষ্টে কষ্ট পায়।
প্রথম আলোর ইসলাম ফোবিয়া নিয়ে কথা বলার ১০১টা সুযোগ আছে। কিন্ত এইটা একটা নির্দোষ কার্টুন। যেখানে দেখা যাচ্ছে একটা কুকুরও বাচ্চাদের সাথে ইদ আনন্দে শরিক হচ্ছে। এইটা নিয়ে এত গাত্রদাহ হবার কিছু আমি দেখি না।
আর পলিটিক্যাল দিক থেকে দেখলেও, এইটা ভুল স্টেপ।
যারা সামান্য ইদ আনন্দ বোঝাবার জন্য একটা কার্টুনে একটা কুকুরের ছবি সহ্য করতে পারে না, তাদের পলিটিক্যাল ইনক্লুসিভনেস এ আমরা কীভাবে বিশ্বাস রাখব? আস্থা রাখব।
জামায়াতের ভাই-ব্রাদাররা আপনাদের আমিরে জামায়াতকে থামান।
ওনার রাজনীতি হয় না।
পাঠকের মন্তব্য