লেখা: ওয়াসিফা জান্নাত
বাংলাদেশের মেয়েদের জীবনে ’নারী দিবস’ এসেছে আজ। মেমোরেবল, হেরে যাওয়া একটা অনুভূতি নিয়ে।
হাসিনা পালানোর আগের মুহূর্তে অনেক কিছুই মনে দাগ কাটার মতো ছিল, একটা স্ট্যাটাসের কথা বলব, সম্ভবত সার্জিস লিখেছিলেন, আপনারা এলেই আমাদের মুক্তি, আপনারা না এলে আমাদের মৃত্যু। দেখেন, আজকে আমাদের বাঁচা-মরার লড়াইয়ে একা ফেলে, আপনারা কিন্তু আর সাথে নেই! এমনটা ঘটার সম্ভাবনার কথা কী জানতাম না? অবশ্যই জানতাম!
মাহফুজ-আসিফ-নাহিদ আপনারা এলেন, দেশের মানুষের কথা আর মনে থাকল না। যেভাবে অতীতের কোনো মনস্টার শাসকের মনে থাকেনি। হাসিনা 'জোর' করে সবকিছুর মধ্যে 'বঙ্গবন্ধু' ইনক্লুড করত, আপনারা 'জোর' করে এক্সক্লুড করা শুরু করলেন। কেন আপনারা কেউ দেশের মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিতে পারেন না? কার 'বঙ্গবন্ধু' চর্চা করতে মন চাইবে, কার চাইবে না—এই ডিসিশান নেওয়ার আপনারা কে? এই যে আপনাদের আমূল পরিবর্তন আসছে, কিন্তু এখনকার 'চরিত্র' দিয়ে কি হাসিনা পালানোর আগের যে স্ট্রাগল—সেটাকে জাজ করছি আমরা? বাংলাদেশের যে মানুষের খুশি সে ৭১-এর আগের বঙ্গবন্ধুকে মনে রাখবে, যার কাছে তার শাসনামলের ব্যর্থতা গুরুত্বপূর্ণ সে সেটাই মনে রাখবে। যে পুরোটা নির্মোহভাবে দেখতে চায়—সে সেভাবেই দেখবে। এমনটাই কী রিয়েলিটি না?
গত কয়েকদিনে কোনো পোস্টে কোনো কমেন্টে আমি 'তৌহিদী জনতা' বা ধর্মীয় লেবাসের কোনো মানুষের কথা টানিনি। কেন জানেন? কারণ তারা এই গেমটার সবচেয়ে তুচ্ছ 'ঘুঁটি' মাত্র। বাংলাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীকে তারা রিপ্রেজেন্ট করে না, প্রয়োজনে কওমী মাতার আঁচলের নিচে লুকায়—এদের গুরুত্ব দিয়ে কোনো লাভ নাই। আমাদের যুদ্ধটা মূল খেলোয়াড়দের সাথে। এত সহজে ডিস্ট্র্যাক্ট করতে পারবেন বলে ভেবেছেন?
বাংলাদেশের ইতিহাস-সংস্কৃতি প্রচণ্ড রকম কম্প্লিকেটেড। আপনারাই যে প্রথমবার এসে নিজের পছন্দের ন্যারেটিভে 'শেপ' দেওয়ার চেষ্টা করছেন, তা না। অতীতেও অনেকে করেছে, পারেনি। আপনারা অতীতের প্রতিটা ভুলই করেছেন, হাসিনা মনে করত তার আশেপাশের সাঙ্গপাঙ্গ আর পলিটিক্যাল বেনিফিশিয়ারি মিলে ২ কোটি মানুষ মানেই বাংলাদেশ, আপনারা ৫০ হাজার নিয়ে নৃত্য করতেছেন। ১৮ কোটি মানুষকে এজ এ হোল বাংলাদেশের জনগোষ্ঠী হিসেবে কোনো শাসক ভাবতে পারবেন? কবে আসবেন তিনি? জানা নেই।
হাসিনার পতনের একটু একটু শুরু কবে থেকে জানেন? যখন সে দেশের মানুষের দারিদ্রতাকে তাচ্ছিল্য করে কুমড়ার বেগুনি বানাতে বলত। আট মাস যায়নি, আপনাদের সরকার প্রচার করছে জনগণ উচ্ছৃঙ্খল, দুইটা মেয়েকে মিলে একশ মানুষ অ্যাটাক করলে এবং সেটার প্রতিবাদ জানালে আপনারা দাবি করছেন মেয়েরা বিড়ি খাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে। আপনার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নারী নিপীড়নকারীদের ক্লিন চেক দেওয়ার পরই ঢাবিতে হ্যারেজমেন্টের ঘটনা ঘটল। মেট্রোরেলে মেয়েদের বগিটাও এখন ভীষণভাবে অরক্ষিত। এই ভিক্টিম দুইজনকে কীভাবে ব্লেম করবেন? গল্প বানানো হয়নি এখনও? সারাদেশে নারী ও শিশুদের সাথে ঘটে যাওয়া লাগাতার নিপীড়নের কথা না-ই বললাম।
আপনাদের কাছ থেকে খুব আশা করেছিলাম, তা না। তবে মাত্র আট মাসের মাথায় আরেকটা সম্ভাব্য '৫ আগস্ট' পরিস্থিতি ক্রিয়েট করবেন—এটা আশা করিনি। বাংলাদেশের মানুষকে আবার বাজেভাবে আন্ডারএস্টিমেট করলেন আপনারা—এত লেখাপড়া করেও কোনো শিক্ষা নিলেন না, এটাই দুঃখ।
আমাদের একটু শান্তিতে থাকতে দেন। ঘরে চাল না থাকলে, বাচ্চা চিকিৎসা না পেলে—আপনাদের কাছে হাত পাততে যাই না। বাট নূন্যতম মানবাধিকারে যখন হাত দেবেন, যতবার লড়তে হয়, পথে নামতে হয়—নামব।
পাঠকের মন্তব্য