আমার জন্য দোয়া করো আর তুমি সাবধানে যেও

৭৯ পঠিত ... ১৭:৩৩, জানুয়ারি ১১, ২০২৫

34

ঢাকা কমার্স কলেজের ছাত্র ফাহমিদ অর্পণ সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন জুলাই আন্দোলনে। ছাত্রদের হাত ধরে শুরু হওয়া এই আন্দোলনে তার শরীরে ৪২টি রাবার বুলেট বিদ্ধ হয়, যার মধ্যে ৪টি তার চোখে লাগে। শুরুতে আন্দোলন নিয়ে আগ্রহ থাকলেও ঢাকায় ছিলেন না অর্পণ। ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থী অর্পণকে তার মা পরিস্থিতি বিবেচনা করে গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।

কিন্তু মা অসুস্থ থাকায় ভিসার অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য ৩ আগস্ট ঢাকায় ফিরতে হয় অর্পণকে। ৪ আগস্ট, মায়ের সঙ্গে কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে নিজের কলেজের সামনে পরিচিত ছাত্রদের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে দেখে অর্পণ সিএনজি থেকে নেমে যান। মাকে বলেন, আমার জন্য দোয়া করো আর তুমি সাবধানে যেও।

প্রসিকার মোড়ে ছাত্ররা জড়ো হচ্ছে শুনে রিকশা নিয়ে সেখানে চলে যান তিনি। দুপুর ২টার দিকে ছাত্ররা মিরপুর ৬ হয়ে মিরপুর ১০-এ শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেয়। মিরপুর ১০ তখন ছাত্রলীগের দখলে ছিল। যখন তারা মিরপুর ১০-এর পপুলার হাসপাতালের সামনে পৌঁছায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের বাধা দেয়। কিন্তু তারা পিছু হটেনি।

মিরপুর ১১ থেকে আরও ছাত্ররা এসে যোগ দেয়। তখন ছাত্রলীগ ও পুলিশ টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, এবং গ্রেনেড দিয়ে আক্রমণ শুরু করে। ছাত্রদের প্রতিরক্ষার জন্য ছিল শুধু ইট আর লাঠি। এক পর্যায়ে অর্পণ নিজেকে প্রশ্ন করেন, আজ যদি পিছু হটি, তাহলে আর কখনও সামনে এগোতে পারব না। সাহস সঞ্চয় করে তিনি এবং তার সহপাঠীরা আবারও এগিয়ে যান।

তাদের পাল্টা আক্রমণে ছাত্রলীগ পিছু হটে। কিন্তু মেট্রো স্টেশনের নিচে হঠাৎ অর্পণের ডান চোখ বন্ধ হয়ে যায়। হাত দিয়ে মুখ স্পর্শ করে দেখেন, তার পুরো মুখ রক্তে ভেসে গেছে। এক গলিতে লুকিয়ে থাকার সময় ছাত্রলীগের কয়েকজন তার ওপর হামলা করে। তারা আহত অবস্থাতেও তাকে আঘাত করে।

তার এক বন্ধু তাকে মিরপুর ১০-এর আজমল হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসা শুরুর আগে মাকে ফোন করে বলেন, মা, আমি ভালো আছি, আমার জন্য দোয়া করো। তার মা হার্টের রোগী হওয়ায় বিস্তারিত জানাতে সাহস করেননি।

সেদিন রাতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। ছাত্রলীগের ভয়ে তাকে নিরাপদে বাসায় পৌঁছাতে পরিবারকে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। পরদিন আগারগাঁও চক্ষু হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, তার ডান চোখের রেটিনা ছিঁড়ে গেছে। অপারেশন করেও পূর্ণদৃষ্টি শক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

৪২টি রাবার বুলেটের আঘাত সত্ত্বেও তার মনে কোনো আফসোস নেই। তিনি গর্বিত যে দেশের জন্য কিছু করতে পেরেছেন। অর্পণ বলেন, এই রক্ত যেন বৃথা না যায়। আমাদের বাংলাদেশকে নতুন করে সুন্দরভাবে গড়ে তুলুন।

 

 

৭৯ পঠিত ... ১৭:৩৩, জানুয়ারি ১১, ২০২৫

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top