লেখা: শরিফুল ইসলাম সৌরভ
আই উইশ, আপনাকে এক বেলার খাবার পানি সংগ্রহ করতে ৫ কিলো দুর্গম পাহাড়ি পথ পাড়ি দেওয়া লাগত।
আই উইশ, সেই দুর্গম পাহাড়ের গায়ে মাত্র এক সিজন আপনার পরিবারের জুম চাষের সুযোগ হতো, এবং সেই ফসলেই সারাটা বছর আপনার খেয়ে-পরে বাঁচতে হতো।
আই উইশ, ওয়ান ফাইন মর্নিং আপনি আবিষ্কার করতেন, পাহাড়ের মালিক আসলে রাষ্ট্র৷ তাই আপনাকে এখন এই ভিটা ছাড়তে হবে।
আই উইশ, আপনার ভিটা থেকে আপনাকে উচ্ছেদ করে রাষ্ট্র সেখানে সমতলের মানুষ এনে সেটেল করত। আর আপনাকে পাঠিয়ে দিত আরও দুর্গম কোনো পাহাড়ে।
আই উইশ, এনাদার ওয়ান ফাইন মর্নিং আপনি আবিষ্কার করলেন আপনার সেই জুম চাষের জমিটুকুও আর আপনার নাই। রাষ্ট্র সেখানে ট্যুরিজম স্পট বানায়ে রিসোর্ট বানাইতে লিজ দিচ্ছে।
আই উইশ, যেখানে আপনি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে নিজস্ব জাতিসত্ত্বা নিয়ে কোনোমতে টিকে আছেন, সেখানে নেমে আসত সংখ্যাগুরুর আগ্রাসন।
আই উইশ ওয়ান ফাইন ডে, রাষ্ট্রের প্রধান আপনার পরিবারকে বললেন, তোরা সবাই বাঙালি হয়ে যা!
আই উইশ, এত নিপীড়ন সইতে না পেরে আপনার কমিউনিটির কিছু মানুষ অস্ত্র হাতে ধরত। আর সেই কিছু মানুষকে শায়েস্তা করার জন্য আপনাদের সবার জীবনে নেমে আসত মিলিটারি শাসন।
আই উইশ, আপনার পরিবারের কাউকে সপ্তাহে একদিন মিলিটারি ক্যাম্পে গিয়ে বিনামূল্যে কামলা দিয়ে আসা লাগত।
আই উইশ, আপনার শত বছরের চেনা প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংস করে বাড়ির পাশের একমাত্র মিঠা পানির লেকটায় বসানো হতো জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। আর তার জের ধরে বন্যায় বিলিন হতো আপনাদের শত বছরের বসত ভিটা।
আই উইশ, আপনার সাথে করা পার্বত্য শান্তিচুক্তি নিয়ে রাষ্ট্র আপনার সাথে মশকরা করত যুগের পর যুগ।
আপনাকে বরণ করে নিতে হতো এক দাসত্বের জীবন। আপনাকে বছরের অন্তত তিনটা মাস ভাত না পেয়ে শুধু বাশকোড়ল খেয়ে কাটাতে হতো।
আই উইশ, তখন আমি আপনাকে গিয়ে প্রশ্ন করতে পারতাম। কীরে ভাই? এত হিংস্র হইছস ক্যান? নিজেকে বাংলাদেশি ভাবতে পারস না?
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন