ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের ৫টি মজার ঘটনা

১৯২৮ পঠিত ... ১৬:১৯, জুন ২৮, ২০২০

বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল লরিয়েট। বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন অবিরাম। তাঁর সুবিশাল কর্মময় জীবন থেকে পাঁচটি মজার ঘটনা তুলে ধরা হলো এখানে eআরকির পাঠকদের জন্য। 

 

১# 

ছোটবেলা থেকেই ডক্টর ইউনূস আর তাঁর বড়ভাই ছিলেন বইয়ের পোকা। আর সেই বই পড়ার জন্য কত কী যে করেছেন, তার ইয়ত্তা নেই। ইউনূসের লেখনিতেই শোনা যাক বই পড়ার জন্য কী কাজটা তিনি করেছিলেন, 

‘বড়দা ও আমি আমি হাতের কাছে বই বা পত্রিকা যা পেতাম পড়ে ফেলতাম। আমি রহস্য রোমাঞ্চ ও গোয়েন্দা কাহিনীর ভক্ত ছিলাম। বারো বছর বয়সে আমি নিজেই গোটা এক রহস্যকাহিনী লিখে ফেলেছিলাম।

অবিরত পড়ার খোরাক যোগাড় করা আর আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠছিল না। প্রয়োজন মেটাতে নিজেদেরই উপায় উদ্ভাবন করতে হয়েছিলো--বই কেনা, ধার করা, এমনকি চুরি পর্যন্ত। আমাদের প্রিয় শিশুপাঠ্য পত্রিকা শুকতারা কলকাতা থেকে প্রকাশিত হত। তাতে নিয়মিত একটি প্রতিযোগিতা থাকত, জিতলে বিনামূল্যে পত্রিকার গ্রাহক হওয়া যেত। পত্রিকায় বিজয়ী প্রতিযোগীদের নাম ছাপা হত। তাদের মধ্যে একজনের নাম বেছে আমি সম্পাদককে চিঠি লিখেছিলাম:

মাননীয় সম্পাদক,

আমি অমুক, একজন বিজয়ী প্রতিযোগী। আমাদের ঠিকানা বদল হয়েছে। এখন থেকে আমার বিনামূল্যে প্রাপ্য সংখ্যা ডাকযোগে বক্সিরহাটে পাঠালে বাধিত হব।

বাড়ির নম্বর হল…

আমাদের সঠিক ঠিকানা না দিয়ে পাশের দোকানের ঠিকানা জানালাম যাতে করে পত্রিকা আব্বার হাতে না পড়ে। প্রতি মাসে আমরা সেই বিনামূল্যের সংখ্যার অপেক্ষায় বসে থাকতাম। এবং এই পরিকল্পনা নিখুঁতভাবে স্বপ্নের মতো কাজ করেছিল।’ 

 

২# 

একবার এক আমেরিকান সাংবাদিক ডক্টর ইউনূসের কাছে সাক্ষাৎকার নিতে এলেন। সেই সময়ে বিশ্বব্যাংকের প্রতি ডক্টর ইউনূসের নানা অভিযোগে এই সাংবাদিক খুবই খাপ্পা। মাইক্রোফোন সামনে নিয়ে প্রথমেই সাংবাদিক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন--

সর্বক্ষণ সমালোচনার বদলে আমাকে বলুন আপনি নিজে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হলে কী কী পদক্ষেপ নিতেন?

বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হলে কী করবো তা আমি কখনও ভেবে দেখিনি। জবাব দিলেন ইউনূস।

তারপর আবার বললেন, বোধহয় আমার প্রথম কাজ হবে এর প্রধান কার্যালায় ঢাকায় স্থানান্তরিত করা।

: এরকম একটা অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নেবার কারণটা জানতে পারি কি?

এরপর ডক্টর ইউনূস বললেন, আসলে প্রধান কার্যালয় ঢাকা শহরে স্থানান্তরিত করলে বিশ্বব্যাংকের পাঁচ হাজার কর্মচারী সেখানে বদলী হবার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করবেন। সন্তানদের ঠিকমতো মানুষ করে তোলার জন্য ও আনন্দদায়ক সামাজিক জীবন যাপনের জন্য ঢাকা শহরকে তাঁরা উপযুক্ত মনে করেন না। অতএব অনেকেই স্বেচ্ছা অবসর নেবেন ও চাকরি বদল করবেন। সেক্ষেত্রে আমার দু’টি সুবিধা। যারা দারিদ্র দূরীকরণের জন্য একান্তভাবে উৎসর্গীকৃত নন তাঁদের বাদ দেয়া যাবে। সেই খালি পদগুলিতে সমস্যা সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল ও অঙ্গীকারবদ্ধ এইরকম কর্মী নিযুক্ত করা যাবে।   

 

৩#

আমেরিকায় ডক্টরেট করার সময় ইউনূসের মন খুব চাইতো মায়ের হাতের মশলা দেয়া তরকারি মাখিয়ে ভাত খাবার জন্য। ওদেশের ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, বিফ বার্গার আর ব্যাঙের ছাতার চাটনি ভালো লাগলেও, তাঁর মন কাঁদতো ভাত, ডাল আর বাংলাদেশের মিষ্টির জন্য।

একদিন রেস্তোঁরায় গিয়েছেন। পরিচারিকা জিজ্ঞেস করলেন,

- কোন পদের ডিম খেতে ইচ্ছুক?

- তার মানে?

- ভাজা, ঝুরি ভাজা, কড়া সেদ্ধ, পোচ না অমলেট, কোনটা খাবেন বলুন।

- ডিম ভাজা।

- কেমন ভাবে ভাজতে বলবো?

- কেমন ভাবে ভাজতে বলবো মানে বুঝলাম না।

- ডিম ভাজার কুসুম উপরে থাকবে না উলটে দিতে বলবো?

- যা হয় হলেই হলো।

এতক্ষণ ইউনূস মনে করছিলেন পরিচারিকা তাঁকে বিব্রত করার জন্যই এতো প্রশ্ন করছে। কিন্তু তারপর বুঝলেন, এভাবে প্রশ্ন করাই আমেরিকান রীতি। নিজেকে ধাতস্থ করে তিনি আবার বললেন,

- আচ্ছা বেশ, কুসুম উপর দিকেই থাকুক।

- কড়া, না অল্প ভাজা?

- যা খুশি।

- সাথে টোস্ট, মাফিন বা রুটি দেব?

- যা হোক।

- এর সঙ্গে আপনি আরও কিছু নিতে পারেন আলুভাজা, চপ বা আলুসিদ্ধ--কোনটা দেব?

- লাগবে না।

- কাটা সসেজ, হ্যাম বা বেকন কোনটা আপনার পছন্দ?

এবার ইউনূস বললেন, দেখুন, আমি নিজেই ডিম ভেজে নিতে পারি।

 

৪#

ডক্টর ইউনূসের ছোটবেলায় তিনি আর তার বড়ভাই একসাথে পড়াশোনা করতেন। যে ঘরে তারা পড়তেন, ঠিক তাঁর নিচতলায়ই ছিলো তাঁর আব্বার স্বর্ণের ব্যবসার দোকান। মাঝেমধ্যে তিনি ছেলেদের পড়াশোনার হাল দেখার জন্য উপরে উঠে আসতেন। তাঁর পায়ের শব্দে ইউনূসরা তড়িঘড়ি করে অন্য কাজ ফেলে বইয়ের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়তেন। সেটা যে পাঠ্যপুস্তক নিয়েই বসতেন, তা নয়। কিন্তু তাদের বাবা যখন দেখতেন সামনে খোলা বই আর তাদের ঠোঁট নড়ছে, তখন ‘লক্ষ্মী ছেলে, ভালো ছেলে’ বলে নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে রওনা হতেন।

 

৫#

শেষ ঘটনাটি হয়তো তেমন 'মজার' ঘটনা না, তবে এটি আপনার মুখে হাসি ফোটাবে তাতে সন্দেহ নেই।

গ্রামীণ ব্যাংক থেকে চিন্তা করা হলো, দরিদ্রদের মাঝেও দরিদ্রতম কারা? যারা ভিক্ষা করে, তারা। তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে চেষ্টা শুরু করলো ডক্টর ইউনূসের নেতৃত্বে গ্রামীণ ব্যাংক।

ডক্টর ইউনূস ও অন্যান্যরা ভিক্ষুকদের বোঝানোর চেষ্টা করলেন, বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি বা মানুষের কাছে তাদের যখন যেতেই হয়, তখন খুব সামান্য কিছু জিনিস, যেমন লজেন্স, বিস্কিট, বাচ্চাদের খেলনা এইসব জিনিস বিক্রি করার চেষ্টা করা।

তাদের ধারণা ছিলো, এই কার্যক্রমে যুক্ত হবেন হয়তো ৪ থেকে ৫ হাজার ভিক্ষুক। কিন্তু বছরশেষে দেখা গেলো, এতে যুক্ত হয়েছেন ২৬,০০০ ভিক্ষুক।

এই ভিক্ষুকরা খুবই খুশি, কারণ যেসব দরজা আগে তাদের দেখলেই বন্ধ হয়ে যেতো, সেইসব দরজা এখন বন্ধ হচ্ছে না। তারা বসার জন্য টুল পাচ্ছেন। সবচেয়ে বড় কথা, তারা এখন সম্মানটা পাচ্ছেন, ভিক্ষাবৃত্তির সময়ে যা চিন্তাও করা যেতো না।

 

তথ্যসূত্র: 

১) গ্রামীণ ব্যাংক ও আমার জীবন: মুহাম্মদ ইউনূস
২) হোয়ারটন ইউনিভার্সিটি অফ পেনিসিলভানিয়াকে দেয়া ডক্টর ইউনূসের সাক্ষাৎকার 

১৯২৮ পঠিত ... ১৬:১৯, জুন ২৮, ২০২০

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top