করোনায় মানুষের এই খাঁচায় ঢুকে যাওয়া নিয়ে বনের পশুরা যা ভাবছে

৬৮১ পঠিত ... ১৭:৫৮, এপ্রিল ১৫, ২০২০

কেউ যেন পৃথিবীর রিফ্রেশ বাটন টিপে দিয়েছে। পৃথিবী এখন নিজের মত করে নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে নিচ্ছে। বাংলাদেশের কক্সবাজারে, হিমছড়িতে ফিরে এসেছে হরিণ! কুয়াকাটা বিচে লাল কাঁকড়া! কক্সবাজার সৈকতে কচ্ছপরা দল বেঁধে উঠে এসে ডিম পারছে। ডলফিনের দল চলে এসেছে আরও কাছে, দাপাদাপি করছে মনের আনন্দে... ওদিকে দিনাজপুরে পথে দেখা গেল উটপাখি ঘুরছে দিব্যি, তারা কোথা থেকে এল?
এ তো গেল দেশের কথা। কানাডা থেকে একজন জানালো, তাদের কোন এক শহরে চলে এসেছে নেকড়ের দল। তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে শহরের ভিতর। আরেক শহরে নেমে এসেছে বড় বড় শিংয়ের পাহাড়ি ছাগলের দল।
ইউরোপের কোন এক শহরের ডাউনটাউনে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিশাল সাইজের সব পাঠার দল। তাদের বাচ্চা কাচ্চা সমেত, তারা নির্বিকারে ঘুরছে। সাউথ-ক্যারোলিনার এক সমুদ্রের কাছে কারো একজনের বাসার চৌহদ্দিতে হঠাৎ দেখে কুমির। তারা কেউ এখন আর মানুষকে ভয় পাচ্ছে না। আর মানুষ থাকলে তো! মানুষতো সব ঘরের ভিতর কোয়ারেন্টাইনে।
তাহলে ব্যাপারটা কি এমন, পৃথিবী (নাকি প্রকৃতি) যাকে ভালোবাসে তাকে বাইরে নিয়ে আসছে নিজের কাছে, আর যাদের পছন্দ করে না তাদের ঢুকিয়ে দিচ্ছে ঘরের ভিতর?

ব্যাপারটা আসলে কী? এর পিছনের বিজ্ঞানটাই বা কী?

ম্যানহাটন প্রজেক্টের অন্যতম নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী রিচার্ড (ডিক) ফাইনম্যান বিজ্ঞানের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে একবার বলেছিলেন, 'প্রকৃতির চেতনাকে বুঝতে পারাই হচ্ছে বিজ্ঞান।' আমরা মানুষরা আসলে কি কখনো আদৌ প্রকৃতির চেতনা বোঝার চেষ্টা করেছি?

বরং কল্পনা করা যাক...
পৃথিবীর সব শহরই ভরে গেছে নানান প্রাণীতে। কোনো এক শহরের চৌরাস্তায় সব প্রাণীদের একটা মিটিং বসেছে। সে মিটিংয়ে আছে বাঘ, সিংহ, ছাগল, গরু, ছাগল, পাঠা, নেকড়ে, জিরাফ, গাধা, ঘোড়া, কুমির, হায়না, কচ্ছপ, খরগোশ, বেজি, কে নেই!

'আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান কে?' পশুরাজ সিংহ জানতে চাইলেন, তিনি বসে আছেন চৌরাস্তার মাঝখানে। অন্য সবাই তাকে ঘিরে আছে।
মাথা ঝাঁকালো জিরাফ। তার মাথাটাই সবার উপরে, বুদ্ধির ব্যাপারটা তো ওখানেই। পশুরাজ জিরাফকে খেয়াল করলেন কিনা ঠিক বোঝা গেল না। তিনি ফের বললেন,
: আচ্ছা তোমাদের কি ধারণা? মানুষের হলোটা কী? তারা সব ঘরের ভিতরে কেন? আর আমরা সব শহরে?
'আমার মনে হয় মানুষ আসলে বোকা...', গলা খাঁকারি দিয়ে বলা শুরু করল এক শিম্পাঞ্জি। 'মানুষ যখন কাউকে প্রশংসা করে তখন আমাদের মধ্যে যারা হিংস্র তাদের উদাহরণ দেয়। যেমন সিংহের মত তেজি, বাঘের মত ঝাঁপিয়ে পড়ল। কিন্তু যখন কাউকে গালি দেয় তখন আবার বলে উপকারী প্রাণীর নাম যেমন গরু, গাধা, শুয়োর।'

'কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর তো হলো না।' পশুরাজ যেন কিঞ্চিৎ বিরক্ত হলেন।
'আমি বলতে চাই।' লেজ তুললো জেব্রা। সে একটা জেব্রা ক্রসিংয়ের উপর দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে। 'একটু খেয়াল করলে দেখবেন মানুষ যখন কলে কারখানায় কাজ করে তখন গাধার মত খাটে...'

'অবজেকশন ইওর অনার...' এবার গাধা আপত্তি জানায় 'বারবার আমাদের নাম আসছে, আমাদের সন্মানহানি হচ্ছে।'
'ওকে বলতে দাও।' সিংহ হালকা গর্জন করল। জেব্রা ফের বলতে শুরু করল।
: যা বলছিলাম, যখন কলকারখানা খোলা ছিল মানুষ তখন গাধার মত সেখানে খাটত। মানুষের মধ্যে যারা ধনী তারা গরিবদের সঙ্গে কুকুর বিড়ালের মত ব্যবহার করত। আর রেস্টুরেন্টগুলোতে ঢুকে তারা শুয়োরের মত খেত।

'এটা দিয়ে তুমি কি বোঝাতে চাচ্ছ?' সিংহের পাশে বসা বাঘ বলে।
: আমি বোঝাতে চাচ্ছি, মানুষ আর পশুতে আসলে খুব বেশি পার্থক্য নেই। আমরা সবাই একইরকম আচরণ করি। যে বুদ্ধিমান সে-ই টিকে থাকবে... সারভাইবেল অফ দ্যা ফিটেস্ট। তাই মানুষরা বুদ্ধিতে হেরে গিয়ে...

'আমিও এটাই বলতে চাচ্ছিলাম...' শিম্পাঞ্জী ফের বলে। 'আমাদের আর ওদের মধ্যে পার্থক্য খুব বেশি নেই... তাই...।'
'একটা পার্থক্য আছে।' ভারি গলায় কে যেন বলে!
কে বলল কথাটা! সবাই এদিক ওদিক তাকায়। হঠাৎ দেখে উচু ল্যাম্পপোস্টে একটা বয়স্ক প্যাঁচা বসে আছে, তার মাথাটা ৩৬০ ডিগ্রী একবার ঘুরে আসল। কথাটা সেই বলেছে।

'কী পার্থক্য?' নিচ থেকে অনেকে জানতে চায়! সবাই জানে জ্ঞানী প্যাঁচা অন্য অনেকের চেয়ে বেশি জানে।
: পার্থক্য বুঝতে হলে আমাদের সবাইকে ফিরে যেতে হবে জঙ্গলে। এই শহর বন্দর রেখে যেতে হবে মানুষের জন্য।
: কেন?
: কারণ মানুষদের ঘর থেকে বের হওয়ার সময় হয়েছে। মানুষের বড় অস্ত্র 'সময়'। তারা সময়কে ব্যবহার করতে জানে... আমরা জানি না।
প্রাণীরা কি বুঝলো কে জানে, তারা সবাই হাঁটা দিল জঙ্গলের দিকে। আর কে না জানে সেই চিরন্তন সত্য 'জঙ্গলই মঙ্গল!'

পুন: প্রাণীরা সব ফিরে আসছে এই প্রসঙ্গে আরেকটু বলি... আমাদের বাসার সাত তলার ছাদে বসে ছিলাম বিকেলের দিকে। হঠাৎ মাথার উপরে খুব কাছ দিয়ে উড়ে গেল একপাল সাদা বকের দল। তাদের ডানার ঝাপটাও যেন টের পেলাম। আমার তখন মহামতি কনফুসিয়াসের একটা বাণী মনে পড়ল। বাণীটা এরকম- 'মাথার উপর দিয়ে দুঃখের পাখি উড়ে যাক, তাকে যেতে দাও, তবে তাকে বাসা বাঁধতে দিও না।' আমার মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া বকগুলো অবশ্যই দুঃখের পাখি না, হয়ত দুঃখদিনের পাখি। তবে হ্যাঁ দুঃখের পাখিকে বাসা বাঁধতে দিব না। আমাদেরও তো বাসা থেকে বের হতে হবে... তাই না?

৬৮১ পঠিত ... ১৭:৫৮, এপ্রিল ১৫, ২০২০

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top