দ্য লস্ট ট্রাইব অফ সেহেরি লীগ

১৬২ পঠিত ... ১৬:১৫, মার্চ ১১, ২০২৫

22 (6)

সে এক সময় ছিল, বিপু ভাই রাফসান দ্য ছোটো ভাইকে দিয়ে বিরিয়ানি টেস্ট করিয়ে সেহরি পার্টি দিত। আতিক ভাই পদ্মা সেতুর ধারে ইলিশ রেস্তোরায় সেহরি করাতে নিয়ে যেত। ইফতার পার্টিগুলোতে দাড়ি-টুপিওয়ালাদের দাওয়াত দিতে হয়। পরিবেশটা একটু ভাবগম্ভীর হয়। সেখানে কথায় কথায় সিয়াম সাধনার কথাটা ওঠে। তাই জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের পোশাক পরা সহমত, শিবব্রত, ললিতাদি, আনারকলিদের নিয়ে সেহরি পার্টিটাই পোষাতো বেশি। আর প্রত্যেক সেহরিতে আল্পনা-কল্পনা-রুপালি-শেফালির বার্থ ডে কেক কেটে মুখে পেস্ট্রি তুলে দেবার ছবি দিয়ে ফেসবুক ভরিয়ে ফেলার সে কাল ছিলো। অথচ এবার রোজায় সেহরির দাওয়াত দেয়ার কেউ নেই। বড় ভাইয়ারা কেউ জেলে, কেউবা ভারতের আধার কার্ড জোগাড় করে ভোট দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে জেতাতে গেরুয়া ডেমোগ্রাফি হয়ে গেছে।

কিন্তু এই যে এইবার সহমতের সেহরি পার্টি হচ্ছে না; সেটাকে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতির সঙ্গে জড়িয়ে দিলে ক্ষতি কী! শিবব্রত দাদা হঠাত বড্ড সেহরি প্রেমি হয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠে, সাঁঝ হলেই মানুষজন দরোজায় সিটকিনি এঁটে শুয়ে পড়ে; সেহরিতে বের হবার সাহস কারো নেই। ললিতাদি চুক চুক করে ওঠে, আমাদের মেয়েদের তো বের হবার আর কোন উপায়ই নেই।

অসূর ভট্টাচার্য এসে ধ্যানতারা জুড়ে দেয়, বীণা সিক্রির মতো খ্যাসখেসে গলায় বলে, চারিদিকে ইরানের লক্ষণ। বাংলাদেশ মৌলবাদের খপ্পরে পড়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আগুনের খবরটা শুনেই, বিএনপি-জামায়াত আমলের যে পেপার কাটিংগুলো স্ক্যান করে জড়ো করেছিলো কোকিল চক্রবর্তী; সেগুলো ব্যবহার করা গেলো না ওটা শর্ট সার্কিট জনিত ক্ষুদ্র আগুন হবার কারণে।

অসূর ভট্টাচার্য তবু তার কন্সপিরেসি থিওরি ধরে রাখে, একটু আগুন লাগিয়ে টেস্ট করে দেখলো; আমরা এখনই যদি যুদ্ধে না নামি তাহলে ঠিকই পুড়িয়ে দেবে।

ললিতাদি ফেসবুকে চ-বর্গীয় গালাগাল করে লোকজনকে এতো ক্ষেপিয়ে রেখেছে যে বাসার বাইরে বের হতে ভয় লাগে। তবু শাহবাগে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও ধর্ষণ বিরোধী বিক্ষোভের দিকে চোখ রাখে। নতুন গণজাগরণের স্বপ্নে আধা ঘুমে আধা জাগরণে দেখে তরুণীদের নেতাকে মধুর ক্যান্টিনে ডেকে নিয়ে যাচ্ছে সংস্কৃতি মামা। খাওন বুবু গাড়িতে করে বিরিয়ানির ডেকচি নিয়ে পৌঁছে গেছে। আনারকলি এক গোছা মোমবাতি নিয়ে প্রজ্জ্বলনের অপেক্ষায়। একটা অপেক্ষা অনেক বড়; কখন আন্দোলনের দফাগুলো একদফায় গিয়ে থামে, স্টেপডাউন ইউনুস। হঠাত আনারকলির ধাক্কায় ঘুম ভাঙ্গে। ওঠো ওঠো দেখো থামুনদা কি মজার স্টেটাস দিয়েছে। থামুনদা এইসব আকালের সন্ধানের দিনে; আফসোসের দীর্ঘশ্বাসের রাতে বড্ড হাসির কথা লিখে কল্পনা-আল্পনা-শেফালি-রুপালির মন ভালো করে দেয়।

ড ইউনুস ফ্যাসিস্ট হাসিনামলের ভয়ের রাজ্য বাংলাদেশকে গাজা উপত্যকার ভীত জনপদের সঙ্গে তুলনা করেছেন; যখন গরিবের ছেলে মনিরুল সেকুলারিজমের পৈতে পেতে জঙ্গী বিরোধী অভিযানের নাটক সাজাতো। গ্রামের ছেলে চাঁন আধুনিকতার দন্ড মুণ্ড সেজে ছাত্রীদের হিজাব খুলে সাংস্কৃতিক সেজে আসতে নির্দেশ দিতো। আর সিপি গ্যাং ভিন্নমতের নারীদের চ-বর্গীয় গালিতে স্তব্ধ করে দিতো। থামুনদাও টানাটানির কোয়ার্টারে বসে চৌধুরি বাড়ির রাস উতসব দেখে জিদ নিয়ে বড় হওয়া ছেলে। তাই তো ফ্রেঞ্চকার্টে লম্বা চুলে বড্ড ফরাসি সেজে ড ইউনুসকে নিয়ে র‍্যালা করে, গাঁজাকে ভুল করে গাজা লিখেছে।

কলকাতার জাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বাংলাদেশে হাসিনার খুনাখুনি দেখে যখন প্রতিবাদ মিছিল করছে; তখন ঢাকায় আলো আসবেই গ্রুপের ট্রেন্ডি দেবর থামুনদা বৈষম্যবিরোধী ছাত্রছাত্রীদের দুষ্কৃতকারী বলে তকমা দিয়েছে রিপাবলিক বাংলার ময়ূখের কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে। অতিরঞ্জন বাজারের ন্যারেটিভের সঙ্গে ন্যারেটিভ মিলিয়ে। গাঁজার আড়তের ভোক্তা থামুনদার কাছে তাই ফ্যাসিজমকালের ইসলামোফোবিয়াকে গাজা উপত্যকার মতো অবরুদ্ধতা মনে হবে কেন!

মোদি মরিশাসে তার নতুন স্ত্রী রাষ্ট্র খুঁজে পেয়েছে। সেখানে শিবব্রত দাদারা সফল হয়েছে মোদির কর্মচারিকে ক্ষমতায় বসাতে। ফলে লুটিয়েন্স প্যালেসের জাঢ্য কর্মচারিকে বাংলাদেশে পুনঃস্থাপনের গল্পটাই এখন গঞ্জিকাসঞ্জাত। লস্ট ট্রাইবের প্রতিদিন সকালের খোয়ারি ছাড়া আর কোথাও বেঁচে নেই ফ্যাসিস্ট রেজারেকশানের আকাশকুসুম কল্পনা।

১৬২ পঠিত ... ১৬:১৫, মার্চ ১১, ২০২৫

আরও

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top