মাংস ভাত

৭০৬ পঠিত ... ১৫:১১, এপ্রিল ২৭, ২০২৩

Mangsho-vat

প্রথমে জিপ, এরপর ট্যাক্সি আর সবশেষে ঢাকার মতো ঘিঞ্জি লোকাল বাসের ছোট সিটে বসে উত্তরাখন্ডের সাপের মতো পাহাড়ি পথে ছয় ঘণ্টার জার্নি শেষ করে যখন কৌশানী নামক জায়গাটায় পৌঁছালাম, তখন বিকালের ঠান্ডা হাওয়া বইতে শুরু করলেও আমার বন্ধু জয়েশের মেজাজটা একটু চড়া হয়েই ছিলো। প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে বুঝলাম, লোকাল বাসের একদম দরজার সাথে সিট হওয়াতে মোটামুটি বাসে ওঠা সকল যাত্রীর ঘষা খেতে খেতে আমার বন্ধুর মনটা উনুনের মতো হয়ে গিয়েছে। বাস থেকে নেমেই মোটামুটি আধাঘণ্টার চেষ্টার পর রিসোর্টের কনফিউজড সহকারীকে আমরা খুঁজে পেলাম নাকি সে আমাদের খুঁজে পেলো, আপাতত সে তর্কে যাচ্ছি না। রুমে জিনিসপত্র রেখেই বের হয়ে গেলাম খাবারের খোঁজে। সেই সকালের রুটি-সবজির পর পেটে আর কিছু যায়নি। পেট ফাঁকা পেয়ে সেখানে মোটামুটি ইঁদুরের দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে গিয়েছে।  

ধরেই নিয়েছিলাম ভাত জাতীয় কিছু এখানে পাওয়ার আশা নেই। কারণ, এইসব জায়গাগুলোতে সামান্য ভাত পাওয়াটাও সোনার হরিণ পাওয়ার মতো, বাঙালি খাবারের আশা আর নাই করলাম। খুঁজে ফিরে একটা চায়ের দোকান পাওয়া গেলো। চা খেতে খেতে চায়ের দোকানদারের সাথে কথাবার্তার একপর্যায়ে জানা গেলো, ফরমায়েশ পেলে সে আমাদের পছন্দ অনুযায়ী খাবার রান্না করে দিতে পারবে। তার দোকানে সে ব্যবস্থাও আছে। ফাইন বিপ্লবী সুমন আর খাদ্যমন্ত্রী অরুন্ধতী দোকানদারকে রাতের ডিনারের জন্য মোটামুটি ম্যানেজ করেই ফেলেছিলো; এরমাঝেই হেঁটে একটু এগিয়ে যেতে সামনে চোখে পড়লো ভাঙা একটা কাঠের দোকান। রাস্তা থেকে কিছুটা উচুতে থাকাতে চোখে পড়ার সম্ভাবনা কম, তবে দেখে অনেকটা বাঙালি ভাতের দোকানের মতো মনে হওয়াতে বন্ধুদের বললাম, ‘একটু দেখে নেওয়া যাক।’ প্রথমে সবাই ভাতের হোটেল হিসেবে বিশ্বাস না করলেও গিয়ে দেখা গেল, পুরোটাই আদতে ভাতের হোটেল। বড় কোনো ট্যুরিস্ট স্পট নয়, এরকম ছোট উত্তর ভারতীয় পাহাড়ি টাউনে ভাতের দোকান পাওয়াটা যেন প্রচণ্ড গরমে রাস্তায় লেবুর শরবতের দোকান পাওয়ার মতো।  

ভাত তো পাওয়া গেলো, সাথে কী খাবো? কথায় কথায় জানা গেলো আজকের মেন্যুতে মুরগির মাংসের তরকারি আছে। গত কয়েকদিন ধরে রুটি খাওয়া ব্রেইনে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেলো সবার। প্রচণ্ড মসলাওয়ালা উত্তর ভারতীয় স্টাইলের গ্রেভিময় মাংস খাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে বসে দেখি, একদম আমাদের বাঙ্গালিদের মতো হালকা মাখো মাখো ঝাল মুরগির মাংস আর সাথে গোল করে কাটা পেঁয়াজ। পেয়েই ঝাঁপিয়ে পড়লাম চার বন্ধু। ভাতের সাথে মুরগির মাংসের ঝোল মাখিয়ে একটু পেঁয়াজের সাথে মুখে দেওয়ার পর মনে হলো দুনিয়াতে তো এর জন্যেই এসেছিলাম, জীবনের বাকি আর সব ফাঁকি। এ তো একদম আমার শুক্রবারের মাংসভাত। মাংসভাত পেটে যাওয়ার পর জয়েশের মেজাজও কিছুটা নেমে এলো বলে মনে হলো। তবে তরকারির পরিমাণ একটু লিমিটেড হওয়াতে মন ভরলেও পেটের শান্তি তেমন একটা মিললো না। আরেকটু গ্রোগ্রাসে মাংস খাওয়ার জন্য মনটা আঁকুপাকু করতে শুরু করে দিলো। কাকুর সাথে কথা বলে প্ল্যান হলো, এখানে থাকার বাকি কয়টা দিন আমরা তার দোকানেই খাবো, কিন্ত মুরগি আমরা কিনে দেবো। কথামতো বিকালে আশপাশটা ঘুরেফিরে মুরগির দোকান খুঁজে দেড় কেজির কাছাকাছি একটা মুরগি কিনে হেলেদুলে চলে গেলাম কাকুর দোকানে। কাকুকে মুরগি বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেলাম রিসোর্টে। রিসোর্টে গিয়ে পড়লাম আরেক ফ্যাসাদে, রিসোর্টের মালিক ভদ্রমহিলা একটু পরপর এসেই নিজের আর নিজের হোটেলের গুণগান করতে করতে আরামের বারোটা বাজিয়ে দিলো।  নয়টার দিকে বের হয়ে গেলাম কাকুর দোকানের উদ্দেশ্যে, বৃষ্টি মাড়িয়ে দোকানে পৌঁছে দেখি ধোঁয়া ওঠা গরম মাংসের তরকারি রেডি। একদম দুপুরের মতো, কিন্তু এবার পরিমাণ অনেক বেশি। পাগলের মতো ভাত খেলাম চারজন। দেখে যে কেউ বলবে এরা অনেকদিন খেতে পায় নাই। পুরো দেড় কেজি মুরগির মাংস ঝোলসমেত খেয়ে মনে হলো ‘এইতো জীবন।’

৭০৬ পঠিত ... ১৫:১১, এপ্রিল ২৭, ২০২৩

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top