লাল মাওলানার ১০টি রাজনৈতিক উক্তি

৬২৪৮ পঠিত ... ১৮:১৪, নভেম্বর ১৭, ২০২১

Maolana-vasaniThumb

বাঙালির একমাত্র মজলুন জননেতা ও রাজনীতিবিদ মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে নিয়ে লেখক তারাশঙ্কর বন্ধ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘আসলে তিনি সোজা-সরল ধরনের মানুষ। রেখেঢেকে মেপেবুঝে কথা বলতে জানেন না। মনে যা ভাবেন, মুখে তা-ই বলেন। খোলামেলা মানুষ। তাতে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। তাছাড়া তিনি মাটির মানুষের একেবারে কাছে আছেন। তাদের সুখ-দুঃখ-অনুভূতি তিনি ভালো বোঝেন, যা উপমহাদেশের আর কোনো নেতা অনুভব করতে পারেন না। ভাসানীর রাজনীতি সম্পূর্ণ অন্য ধরনের রাজনীতি- প্রথাগত রাজনীতির সঙ্গে যার মিল নেই।’ 

খোলামেলা সেই মানুষটা রাজনীতিকে নিয়ে গিয়েছিল মাটির মানুষের কাছে, রাজনীতিটা করেছিলেন মাটির মানুষের জন্য। কৃষকদের দুঃখ, সংখ্যালঘুদের কষ্ট তার চেয়ে বেশি কেউ অনুভব করেননি। ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর অসহায় মানুষগুলোকে একা করে চলে যান জনগণের এই নেতা। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর জীবনের বিভিন্ন সময়ে, ভাষণে কিংবা আলোচনায় বলা উক্তি থাকছে eআরকির পাঠকদের জন্য।

১# যেসব মুসলমান হিন্দুদের বিধর্মী মনে করে, তাদের ক্ষতি করতে চায়, আমি তাদের বলি তোমরা কারা? খুব বেশি হইলে চার-পাঁচ পুরুষ আগে তোমরা কারা ছিলা? তোমাদের বাপ-দাদার বাপ-দাদারা ছিলেন হয় হিন্দু নয় নমঃশূদ্র। এ দেশের হিন্দু আর মুসলমানের একই রক্ত। কতজন আরব ইরান-আফগানিস্তান হইতে আসিয়াছে? পাঁচ পুরুষ আগে যারা ছিলো তোমাদের পূর্বপুরুষ আজ তাদের গায়ে হাত তুলতে তোমাদের বুক কাঁপে না? তোমরা কি মানুষ না পশু?

২# ধর্মের সঙ্গে ভাষার কোন সম্পর্ক নাই। ধর্ম এক জিনিস আর ভাষা আর একটি জিনিস। একটির সঙ্গে অন্যটিকে যারা মেশায় তারা অসৎ ও মতলববাজ। উর্দুর সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক কী? আরব দেশের মানুষ উর্দুতে কথা বলে নাকি? ইরানের মানুষ কি উর্দু জানে? উর্দু কি দুনিয়ার সব মুসলমানের ভাষা? বাংলাকে যারা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা চায় তারা পাকিস্তানের দুশমন নয়। যারা চায় না তারাই পাকিস্তানের দুশমন। পাকিস্তানের যদি ক্ষতি হয় তাহলে বাংলা-বিরোধীদের দ্বারাই হবে।

৩# নীল নদের পানি যেমন নীল নয়, তেমনি জামায়াতে ইসলাম মানেই ইসলাম নয়। 

৪# আমি ইতিহাসবেত্তা নই, রাজনৈতিক আন্দোলনের ভাষ্যকারও নই। আমি হাড়ে হাড়ে রাজনীতিবিদ থাকতে চাই এবং অসিংসার বাণী নয়, বিপ্লবের মন্ত্রে উদ্দীপিত হইয়া আন্দোলন চালাইয়া যাইতে চাই। 

৫# মদ চোলাইয়ের কারখানা হইতে যেমন কেহ দুধ প্রত্যাশা করে না, তেমনি কেরাণীকূল ও গোলামী মানসিকতা সৃষ্টির জন্য যে শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তিত হইয়াছিল তাহা হইতে স্বাধীন স্বাবলম্বী পরিশ্রমী সহানুভূতিশীল মানুষ সৃষ্টি সম্ভব নয়। 

৬# ধর্মীয় শিক্ষার নামে জীবনের সাথে সম্পর্করহিত তথাকথিত মাদ্রাসা শিক্ষা প্রবর্তন করিয়া সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় সুকৌশলে আমাদের ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মানো হইয়াছে । 

৭# গড়িতে হইলে আগে ভাঙিতে হয়। মানুষের মুক্তি আপোষরফায় আসে না। সুদূরপ্রসারী, কর্মসূচীভিত্তিক বিপ্লবই এর একমাত্র পাথেয়। 

৮# রাজনীতি শিখিতে হয় সাধারণ মানুষ আর পরিবেশ হইতে। 

৯# আমাদের ভাগ্য আমাদেরই গড়ে নিতে হবে। পিন্ডির গোলামি ছিন্ন করতে হবে।

১০# ভালোবাসাকে কখনো বিভক্ত করা যায় না। সর্বহারা ও পুঁজিপতিকে একই মন ভালোবাসে। সর্বহারাকে ভালোবেসে আমরা তার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আর পুঁজিপতিকে ভালোবেসে আমরা তাকে মানুষ রাখতে চাই। এই চাওয়া-পাওয়ায় কোন আপোষ নেই। প্রয়োজনে তাই আমরা হিংসাত্মক পন্থা অবলম্বন করতেও দ্বিধাবোধ করি না।

বোনাস উক্তি: 

# ১৯৫৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কাগমারী সম্মেলনের সুবিশাল জনসভায় মাওলানা ভাসানী বলেছিলেন: এভাবেই যদি পূর্ব বাংলার জনগণের ওপর শাসন-শোষণ চলতে থাকে, তবে আগামী ১০ বছরের মধ্যে পূর্ব বাংলার মানুষ পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি আসসালামু আলাইকুম জানাবে। তোমাদের পথ তোমরা দেখো, আমাদের পথ আমরা দেখব।

# ব্যক্তির চেয়ে আদর্শ ঊর্ধ্বে । ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতিতে যাহারা বিশ্বাসী, তাহারা আর যাহাই হউন, প্রকৃত দেশপ্রেমিকের মর্যাদা লাভ করিতে পারেন না । ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতি জনতার আশা-আকাংক্ষার পরিপন্থী । ব্যক্তির দোষে গোটা জাতিই ক্ষতিগ্রস্থ হইতে বাধ্য । এই কারণেই আমি নেতা মানি প্রতিষ্ঠানের কর্মসূচীকে।

৬২৪৮ পঠিত ... ১৮:১৪, নভেম্বর ১৭, ২০২১

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top