ফাল্গুন এলে চারদিক ভরে ওঠে রঙের সমাহারে। কিন্তু বাঙালিদের জন্য ফাল্গুন, আনন্দ ও রঙের সমারোহের সঙ্গে নিয়ে আসে শোক। কারণ প্রায় সত্তরের বেশি বসন্ত আগে বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের পথঘাটও রঙ্গিন হয়েছিল। রঙে বা ফুলে নয়। রক্তে। যেন কৃষ্ণচূড়ার লাল এসে মিশেছিল রাজপথে। তাই তো বসন্ত এলে পরিবেশ যখন নিজে সেজে ওঠে ফুলে ফুলে, আমরা তখন ফুলেল শ্রদ্ধা জানাই আমাদের ভাষা শহীদদের। প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি তথা ৮ ফাল্গুন ভোরবেলা খালি পায়ে হেঁটে সকল বয়সী নারী-পুরুষেরা শহীদ মিনারে যায় ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে।
শহীদ মিনারের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই পাঁচটি স্তম্ভ। মাঝের স্তম্ভটি সবচেয়ে উঁচু এবং মাথাটা নোয়ানো। মাঝের স্তম্ভের দু’পাশে রয়েছে আরো দুটি ছোট স্তম্ভ। মনে করা হয়, অতন্দ্র প্রহরী চার সন্তানকে নিয়ে মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন মা। যেন ভাষা শহীদ রফিক, সালাম, বরকতেরা পাহাড়া দিচ্ছে আমাদের মাতৃভাষাকে। আর পেছনের উদীয়মান লাল সূর্য্য নির্দেশ করে নতুন, উজ্জ্বল দিনের।
কিন্তু শহীদ মিনারের পেছনের লাল সূর্য্য বা বৃত্তটি কেন সারা বছর থাকে না?
এর কারণ, শহীদ মিনারের লাল বৃত্তটি মূল নকশার অংশ ছিল না। আশির দশকে যুক্ত হয়েছে বৃত্তটি। শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ারের থেকে জানা যায়, লাল বৃত্ত ব্যতীত শহীদ মিনারের দিকে তাকালে তার পেছনে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বারান্দা দেখতে পাওয়া যেত। তা এড়াতে প্রথমে প্রাচীর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও, পরবর্তীতে মুস্তাফা মনোয়ারের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। তিনি ভবনকে আড়াল করতে স্তম্ভের মাঝে একটি লাল বৃত্তের আবর্তনের প্রস্তাব দেন। যা হয়ে উঠবে শহীদদের রাজপথ রাঙানো লাল রক্ত ও নতুন দিনের প্রতীক।
এছাড়াও তখনকার কর্মকর্তারা বৃত্তটিকে স্থায়ীভাবে রাখতে বলেন। কিন্তু তিনি ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, বসন্তকালে নতুন ফুল ফোটে। সৌরভ ছড়িয়ে একসময় সেই ফুল ঝরে যায়। বছর শেষে আবার সজীবতা নিয়ে আসে নতুন ফুল। সে কারণে ফেব্রুয়ারি এলে আমরা শহীদ মিনারে লাল বৃত্তটি লাগাব। এটা বিবর্ণ হয়ে গেলে আবার নতুন বছরে নতুন লাল বৃত্ত লাগাব।’ তাঁর এ প্রস্তাবও পরবর্তীতে গ্রহণ করা হয় এবং সে থেকে প্রতি বছর ২০ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে নতুন লাল বৃত্ত যুক্ত করা হয়।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন