'চাইতাম লোকে বলুক মুর্তজা বশীরের বাবা ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ'

১৫১০ পঠিত ... ২০:৩৮, আগস্ট ১৫, ২০২০

জন্মেছিলেন ১৯৩২ সালের ১৭ আগস্ট। তিনি প্রখ্যাত ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ছেলে। বাংলাদেশের শিল্পকলার পরিসরে মুর্তজা বশীর ছিলেন অপরিহার্য ও অন্যতম উল্লেখ্য এক নাম। দৃশ্যশিল্পের বিভিন্ন শাখায় যেমন বিচরণ করেছেন তিনি, তেমনি সৃজনকলার অন্য দুটি মাধ্যম সাহিত্য ও চলচ্চিত্রেও রেখেছেন সৃজন-প্রতিভার স্বাক্ষর। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর সদ্য বিকাশমান এই অঞ্চলের দ্বিধাগ্রস্ত শিল্পকলাকে যাঁরা পর্যাপ্ত আস্থা ও উপাদান জুগিয়েছেন, তিনি অবশ্যই তাঁদের মধ্যে অন্যতম। শুধু তা–ই নয়, মুর্তজা বশীর একাধারে চিত্রশিল্পী, ভাষাসংগ্রামী, গবেষক ও ঔপন্যাসিক। তাঁর গল্প, উপন্যাস, এমনকি তাঁর কবিতাও মূলত আত্মজৈবনিক। মহান ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণের পর রক্তাক্ত আবুল বরকতকে যাঁরা হাসপাতালে নিয়ে যান, মুর্তজা বশীরও তাঁদের মধ্যে ছিলেন। 

চিত্রকলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ১৯৮০ সালে একুশে পদক পান মুর্তজা বশীর। একই কাজে স্বাধীনতা পুরস্কার পান ২০১৯ সালে। কর্মজীবনে তিনি দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

বাংলাদেশে বিমূর্ত ধারার চিত্রকলার অন্যতম পথিকৃৎ মুর্তজা বশীরের ‘দেয়াল’, ‘শহীদ শিরোনাম’, ‘পাখা’, ‘রক্তাক্ত ২১শে’ শিরোনামের চিত্রকর্মগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পেইন্টিং ছাড়াও ম্যুরাল, ছাপচিত্রসহ চিত্রকলার বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করেছেন তিনি। এছাড়া লিখেছেন বই এবং গবেষণা করেছেন মুদ্রা ও শিলালিপি নিয়েও। বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য দেয়ালচিত্র করেছেন মুর্তজা বশীর।

শিল্পী মুর্তজা বশীরের ‘আমার জীবন ও অন্যান্য’ গ্রন্থ থেকে কয়েকটি চমকপ্রদ উক্তি ও ঘটনা রইলো eআরকির পাঠকদের জন্যে। 

 

১#
‘ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্’র ছেলে মুর্তজা বশীর, এই পরিচয় আমার কাম্য ছিলো না। আমি বরং চাইতাম লোকে বলুক মুর্তজা বশীরের বাবা ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্। তাই নামের শেষ থেকে ‘উল্লাহ্’ মুছে দিয়ে আমি মুক্তির স্বাদ অনুভব করেছি । এই পারিবারিক চিহ্নটি মুছে ফেলার ব্যাপারটি আমার বাবা-মা কেউ সহজভাবে নিতে পারেননি।’

২#
বাবু (বাবা) একদিন তাঁর লাইব্রেরিতে পড়ছেন। ডাক পিওন আমার একটা চিঠি দিলো। চিঠিটি বাবুর সামনে রাখতেই তিনি চোখ বুলিয়ে ফেরত দিলেন। ঘটনাচক্রে তখন আমি সেখানে। হাত বাড়িয়ে চিঠিটি নিয়ে দেখলাম আমার চিঠি। তিনি আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। আমি অকম্পিত গলায় বললাম, ‘উল্লাহ্’ কেটে দিয়েছি। নিজের পরিচয়ে দাঁড়াতে চাই। তিনি অনেকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। হাত বাড়িয়ে চিঠিটা নিয়ে নাম পড়লেন; বললেন, ‘তোমার মুর্তজা নামের বানানে ‘ম’ এর নিচে দীর্ঘ ঊ-কার দাও কেন? মূর্খের বানানে ‘ম’ এর নিচে দীর্ঘ ঊ-কার হয়। তুমি তো মূর্খ নও, তাই তুমি ‘ম’তে লিখবে হ্রস্ব উ-কার।’

৩#.
...(একবার) আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলাম। মাসের প্রথম দিক ছিলো। সংসারের সব টাকা মার দেরাজ থেকে নিয়েছিলাম। আর বাবার সুটকেস থেকে আরও কিছু টাকা। লক্ষ্ণৌ চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু আবার ফিরে এসেছিলাম। বাসার জন্য মন খারাপ হয়েছিলো সাংঘাতিক। বাবু আরাম কেদারায় বসে বই দেখছিলেন। আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালেন। আমার ভীষণ ভয় করছিল। হয়তো তিনি মারবেন। কিন্তু তিনি মারলেন না। 

ধীর গলায় প্রশ্ন করলেন, ‘কোথায় গিয়েছিলে?’

মাথা নিচু করে জবাব দিয়েছিলাম, 'লক্ষ্ণৌ পর্যন্ত।'

আমার জবাবে তিনি ক্ষুণ্ন হলেন। বললেন, 'আগ্রায় গিয়ে তাজমহল তো দেখতে পারতে।'

তারপর দৃঢ় কণ্ঠে বললেন, 'আমার ছেলে তুমি। নটোরিয়াস বা ফেমাস হবে। মাঝামাঝি কিছু হও, আমি তা চাই না।'

১৫১০ পঠিত ... ২০:৩৮, আগস্ট ১৫, ২০২০

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top