মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনের ৫টি মজার ঘটনা

২৪৬৮ পঠিত ... ১৭:৫২, জুন ২৯, ২০২০

কে বাংলা সাহিত্যকে প্রথম নাটক ও প্রহসনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন? কে প্রথম বাংলায় চতুর্দশপদী কবিতা রচনা করে বাংলা কবিতার এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছেন? কে চিরাচরিত বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণের জনক? এসব প্রশ্নের উত্তরে একজনের নামই আসে- মাইকেল মধুসূদন দত্ত। উনপঞ্চাশ বছরের এক ছোট্ট জীবন কাটিয়ে গেছেন তিনি, কিন্তু সেই জীবনই ছিলো নানা বৈচিত্র্যে ভরপুর। 

মাইকেল মধুসূদন দত্তের পাঁচটি মজার ঘটনা তুলে ধরা হলো ইআরকির পাঠকদের জন্য।

 

১#

একদিন মধুসূদন দত্ত কলকাতার এক বাজারে হাঁটছিলেন। সেই সময়ে তিনি মেঘনাদ বধ কাব্য লিখে সাহিত্য সমাজে খুবই আদৃত। হঠাৎ খেয়াল করলেন, এক দোকানী খুব মনোযোগ দিয়ে মেঘনাদ বধ কাব্য পড়ছেন। তিনি কৌতুহলীভাব নিয়ে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, 'কী পড়ছেন?'

দোকানী উত্তর দিলো, 'একটি কাব্য।'

মধুসূদন ইচ্ছা করেই একটু ঠেস দিয়ে বললেন, 'বাংলা ভাষায় আবার কাব্য!'

দোকানী বললেন, 'মেঘনাদবধ কাব্য একটি জাতির ভাষাকে গৌরবময় করতে পারে। ও আপনি বুঝবেন না!'

 

২#

কলকাতায় তাঁর সময়ে কিশোরী চাঁদ মিত্রের বাগান বাড়িতে কবি-সাহিত্যিকদের আড্ডা হতো। ওই আসরে উপন্যাসিক প্যারীচাঁদ মিত্র ওরফে টেকচাঁদ ঠাকুর আসতেন। তিনি ‘আলালের ঘরের দুলাল’ উপন্যাস লিখে বাংলা সাহিত্যে বিশেষ স্থান দখল করে আছেন। কিন্তু চলতি ভাষার উপন্যাসটি মধুসূদনের পছন্দ হয়নি এবং স্বভাব সুলভ ‘কিছুই হয়নি’ বলে বসেন।

তখন প্যারীচাঁদ মিত্র উত্তেজিত হয়ে বললেন, 'তুমি বাংলা ভাষার কী বুঝবে। জেনে রেখো, আমি যে রচনারীতি চালু করলাম ওটাই বাংলা সাহিত্যে চিরদিন বেঁচে থাকবে।'

মধুসূদন দত্ত হেসে জবাব দিলেন, 'আমি যে ভাষা সৃষ্টি করবো, তাই বাংলা সাহিত্যে চিরস্থায়ী হবে।'

অমিত প্রতিভাবান মধুসূদন দত্ত এরপর রচনা করেন- মেঘনাদবধ কাব্য, তিলোত্তমা সম্ভব কাব্য, পদ্মাবতী নাটক, কৃষ্ণকুমারী নাটক, একেই কি বলে সভ্যতা (প্রহসন), বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ (প্রহসন) ইত্যাদি গ্রন্থসমূহ।

 

৩#

হাইকোর্টে ব্যারিস্টারি করার সময় মধুসূদন খুব উঁচু গলায় কথা বলতেন। তার বক্তৃতাও ছিল অত্যন্ত তেজোদীপ্ত। মাঝে মাঝে তিনি উত্তেজিত হয়ে উঠতেন, অন্যদের মতো তোষামোদ করে বিচারকের মন তুষ্ট করার চেষ্টা করতেন না। একবার জজ জ্যাকসনের এজলাসে মধুসূদন খুব উঁচু গলায় বক্তৃতা দেওয়ায় জজ বিরক্ত হয়ে বললেন, The Court orders you to speake slowly. The Court has ears.

মধুসূদন তৎক্ষণাৎ জবাব দিলেন, But pretty too long, My lord.

 

৪#

মাইকেল মধুসূদন দত্তের আর্থিক অনটনের সময় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর উনাকে টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করতেন। একদিন এক মাতাল বিদ্যাসাগর মশাইয়ের কাছে সাহায্য চাইতে এলো। বিদ্যাসাগর সাফ বলে দিলেন, আমি কোন মাতালকে সাহায্য করি না।

কিন্তু আপনি যে মধুসুদনকে সাহায্য করেন? তিনিও তো মদ খান’, মাতালের উত্তর।

বিদ্যাসাগর বললেন, 'ঠিক আছে, তোমাকে মধুসূদনের মত সাহায্য করতে রাজি আছি। তার আগে একটা ‘মেঘনাদ বধ’ কাব্য লিখে আনো দেখি?'

 

৫# 

তরুণ বয়সে বন্ধুরা মিলে গল্প করছিলেন। সাথে ছিলেন মধুসূদনের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু গৌরদাস বসাক। আড্ডাতে এক বন্ধু বললেন, 'মধু, তুই বাংলায় কাব্য চর্চা করিস না কেন? পারিস না বলে?'

বন্ধুর চ্যালেঞ্জ পেয়ে মধুসূদন তৎক্ষণাৎ রচনা করলেন কবিতা 'বর্ষাকাল'। 

বর্ষাকাল

গভীর গর্জ্জন সদা করে জলধর,
উথলিল নদনদী ধরণী উপর।
রমণী রমণ লয়ে, সুখে কেলি করে,
দানবাদি দেব, যক্ষ সুখিত অন্তরে।
সমীরণ ঘন ঘন ঝন ঝন রব,
বরুণ প্রবল দেখি প্রবল প্রভাব।
স্বাধীন হইয়া পাছে পরাধীন হয়,
কলহ করয়ে কোন মতে শান্ত নয়॥

 তারপর বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বললেন, 'মিলিয়ে দেখো, প্রতিটি চরণের প্রথম বর্ণ নিয়ে আমার বন্ধু গৌরদাস বসাকের নাম হয়।'

২৪৬৮ পঠিত ... ১৭:৫২, জুন ২৯, ২০২০

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top