এটিএম শামসুজ্জামান: অসাধারণ কিছু উক্তি ও মজার ঘটনা

২৯৮৩ পঠিত ... ১৭:৪৬, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২১

কারো কাছে বদ লোক তো কারো কাছে হাস্যরসে পরিপূর্ণ একজন মানুষ। সকল বয়সের মানুষের কাছে সমান পছন্দ ও গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া চলচ্চিত্রের সবচেয়ে প্রবীন অভিনেতাটি হলেন এটিএম শামসুজ্জামান। যদিও অভিনেতা ছাপিয়ে তিনি ছবি ও নাটকের পরিচালনা ও কাহিনী নির্মাণেও অবদান রেখেছেন। বারংবার নানা গুজবের মাধ্যমে তার মৃত্যুর খবর রটানো হলেও ২০ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় তিনি সত্যিই সকলকে ছেড়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। 

চলচ্চিত্রে ‘মন্দ মানুষ’ নামে খেতাব পেলেও বাস্তব জীবনে তাঁর সদা হাস্যোজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব ও সাদা-সিধে, সরল কথাবার্তা থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, বাংলাদেশের নাটক ও চলচ্চিত্রশিল্প এবং তার দর্শক হারিয়ে ফেলেছে অসামান্য এক রত্ন। এটিএম শামসুজ্জামানের ব্যক্তিত্ব ও মতামতের অভিপ্রকাশ ঘটে এমন কিছু উক্তি ও ঘটনা তুলে ধরা হল পাঠকদের জন্য। 

atm shamsu

উক্তি

১# 'এই যে তোমরা আমার মৃত্যু নিয়ে গুজবের নামে মজা করছো বারে বার। যেদিন সত্যি সত্যি চলে যাবো- পারলে আটকে রেখো। বাঁচার গুজবটা ছড়িয়ে দিও! দেখবো কতোটা পারো।’

২# 'নায়ক হিসেবেও দুটি ছবি করেছি। দুটোই ছিল সুপারহিট। একটি ছবি ‘দায়ী কে’। আমার গল্পের আমি হিরো, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পাই। অন্যটি হচ্ছে তারাশঙ্করের ‘চাঁপাডাঙ্গার বউ’। সেখানে সেতাব মণ্ডল চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। সুতরাং কমেডি, ভিলেন ছাড়াও আমি নায়ক হিসেবে সাকসেস পেয়েছি। আমার কাছে সব কাজই আপন। তবে মানুষ আমাকে কেন জানি ‘মন্দ মানুষ’ হিসেবে বেশি চিনেছে!'

৩# 'ভিলেন হিসেবে আমি ছিলাম অতি নিম্নমানের। আমার এক্সপ্রেশন এতো বাজে ছিল সেটা বলে বোঝাতে পারবো না। পয়সা পেয়েছি। এছাড়া আর লাভের কিছু পাইনি। মনের মতো ভিলেন চরিত্র আমার করা হয়নি।'

৪# ক্লাসিক মুভি করতে হলে তিন পুরুষের দরকার। যেমন সত্যজিৎ রায়। তার বাবা সুকুমার রায়। সুকুমারের বাবা উপেন্দ্র কিশোর রায়। উপেন্দ্র ‘দত্যি দানো’র গল্প লিখতেন। এর ভিতরে জীবন দিলেন সুকমার রায়। ছড়ার মধ্যে এই জীবনকে তিনি বিশ্লেষণ করলেন। এর পরে সত্যজিৎ রায় এলেন। যার ডাক নাম মানিক। ইনি চলচ্চিত্রে এসে ধ্রুপদ চলচ্চিত্রের প্রমাণ দিলেন ‘পথের প্যাঁচালি’ নির্মাণ করে।

৫# আমার একটা জিনিস ভালো লাগে। আমাদের বাবারা ছিলেন মৌলভী। সেই গর্ব নিয়েই দেশভাগ করেছিলো আমাদের বাবারা। তাদের ছেলে হয়ে আমরা এখন লেখক, পরিচালক, গল্পকার, অভিনেতা। আমরা এক পুরুষ। ক্লাসিক মুভি হতে হলে তিন পুরুষ লাগে। আমরা মৌলভীর ছেলে হয়ে এত দূর এগোতে পেরেছি এতেই আমি খুশি। সামনে আরও ভালো দিন আসবে। সময় তো দিতেই হবে।

৬# সৃষ্টিশীল মানুষ চিরকাল অতৃপ্ত থাকে। আমার খুব মনে হয়, আজ পর্যন্ত আমাকে দিয়ে সেরা অভিনয়টা কেউ করাতে পারেনি। আমি আরও ভালো অভিনয় করতে পারতাম। আরও অনেক ভালো চরিত্র আমার প্রয়োজন ছিলো। এখনো অনেক কিছু করা যায়। কিন্তু গল্পকার-নির্মাতারা আমাদের নিয়ে ভাবেন না। তারা একটা ফ্রেম পেয়েছে ভালোবাসার, সেখানেই আটকে আছে। সত্তর বছর বয়সেও যে নান্দনিক ভালোবাসার গল্প থাকতে পারে সেটা মাথাতেই নেয় না ওরা। যখন নিজেরা বুড়া হবে তখন হয়তো নেবে, কিন্তু তখন বয়স ওদেরকে কাজের শক্তি দেবে না। 

৭# নাটক বা সিনেমা কোনো জায়গাতেই আমার ভালো লাগেনি। সবগুলো ক অক্ষর গোমাংস। জীবন ধারণের জন্য পয়সা প্রয়োজন, তাই কাজ করেছি। দুদিন পরে মারা যাব। কিন্তু আমার কথাগুলো থেকে যাবে। আবারও বলছি- সবগুলো ক অক্ষর গোমাংস। পেটে বোমা মারলেও একটা ‘ক’ শব্দ বের হবে না, এমন মানুষ যদি নাটক, সিনেমা বানায় তাহলে আমার কিছু করার নেই। তবে সে তুলনায় নাটক এগিয়ে গেছে। আমার ঘনিষ্ঠজনেরা বলতো, নাটকে আরো বেশি মনোযোগ দিতে। কিন্তু চলচ্চিত্রের কথা ভেবে আমি আগে নাটকে সময় দেইনি। আমি যদি তাদের কথা মতো নাটকে আরো আগেই চলে যেতাম, তাহলে আজ আমার এই দশা হতো না। 

৮# একজন মানুষ প্রতিদিন ভাত খায়, সে কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে অমুক দিন ভাত খেয়ে সব চেয়ে বেশি শান্তি পেয়েছিলাম। তেমনি একজন শিল্পী, লেখক, পরিচালকের ক্ষেত্রে একই কথা। তারা বলতে পারে না তাদের কোন কাজটি সেরা। একজন শিল্পী সারা জীবন তার কাজে ব্যস্ত থাকে এবং কোনো কাজ সম্পন্ন করার পরে সে বলে, 'না, এটা হয়নি। আরও ভালো করতে পারি আমি।' তার কাজের আকাঙ্ক্ষা আরও বেড়ে যায়। যেইদিন কোনো শিল্পী তার কাজের প্রতি সন্তুষ্ট হবে সেইদিনই তার ভালো কাজের শেষ দিন।

 

মজার ঘটনা

১# রাস্তায় বের হলেই এটিএম শামসুজ্জামান কতবার যে 'বদ লোক' কথাটা শুনেছেন, তার হিসাব নেই। একবার তিনি এক গ্রামে শুটিং করতে গিয়েছিলেন। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ওই গ্রামের এক বউ পানি ভর্তি কলস নিয়ে যাচ্ছিল। তাঁকে দেখে ‘খচ্চর’ বলে চিৎকার করে কলস রেখে দৌড়ে পালিয়েছিল সে বউ। 

২# এটিএম শামসুজ্জামান একবার গারো পাহারে শুটিং করতে গিয়েছিলেন। পরিচালক ছিলেন এহতেশাম। এটিএম শামসুজ্জামান জুম্মার দিনে গোসল করে পাজামা পাঞ্জাবি পরে যখন মসজিদে যাচ্ছিলেন তখন একজন লোক তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় যাচ্ছেন?

: মসজিদে যাচ্ছি।
: জুম্মার নামাজ পড়ে আপনার লাভ কী?
: কেন ভাই?
লোকটি উত্তর দিল, জীবনে এতো আকাম করেছেন বুঝতে পারছেন না? আপনি তো একটা বাজে লোক! এটিএম শামসুজ্জামান: কিছু উক্তি ও মজার ঘটনা

তথ্যসূত্র: বাংলা ট্রিবিউন, চ্যানেল আই, জাগো নিউজ.

২৯৮৩ পঠিত ... ১৭:৪৬, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২১

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top