গোরাজ্যে এলো আর্যগরু

১৬৯ পঠিত ... ১৭:৩৭, এপ্রিল ২২, ২০২৪

38 (2)

আর্যগরুটি অভিজাত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে ছিলো। তার ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছিলো  অনার্য গরুদের সারিতে দাঁড়াতে। নীল রক্তের গরুটিকে দেখতে ভীড় জমায় আপামর গরু সাধারণ।

এক গরু সাহস করে বলে, আমি ষাঁড়ের লড়াইয়ে অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ান হয়েছি আলফাডাঙ্গায়; বংশ মর্যাদায় আমি সে এলাকায় উচ্চে ছিলাম। আপনার সান্নিধ্য কী পেতে পারি মহাশয়!

একটু দূরে দাঁড়াও; তবে আমার পরেই তুমি মর্যাদাশীল। ফলে গুরুত্বে তুমি দ্বিতীয় স্থানে।

আরেকটি গরু এগিয়ে এসে বলে, আমি ব্যবসা সামগ্রী পরিবহন করি। দ্রুততার জন্য পাটগাঁতি বাজারে সবার সেরা আমি। আমার সঙ্গে কী একটু কথা বলবেন মহাশয়!

তুমি বরং লড়াকু ষাঁড়ের সঙ্গে কথা বলো; আমি ওর মাধ্যমে তোমার প্রশ্নের উত্তর দেবো।

আরেকটি ক্ষীণকায় গরু এসে বলে, মহাশয়, কষ্টের জীবন আমার; ময়লার গাড়ি টানি আমি বোয়ালমারীতে। আমার কী স্থান হবে আপনার গরু সমাজে।

আর্য গরুটি লড়াকু গরুকে বলে, সামাজিক স্তরে সে সবচেয়ে নিম্নে; ওকে আরেকটু দূরে যেতে বলো; ও ভুল করে স্পর্শ করলে আমি অশূচি হয়ে পড়বো।

এইভাবে শ্রেণী বিভাগ হয়ে গেলে সমাজের গরুরা তাদের শ্রেণীমত সার বেঁধে দাঁড়ায়।

আর্য গরু ঘোষণা করে, গরুর পালের নামানুসারে এ রাজ্যের নাম এখন থেকে গোপালরাজ্য।

আর্যগরু এবার তাদের সবার উদ্দেশ্যে বলে, তোমাদের গরু সমাজে যে জিনিসটার অভাব; তা হচ্ছে আধ্যাত্মিক জ্ঞান। এ জ্ঞান তোমাদের থাকার কথা নয়; এই জ্ঞান থাকে শরীরের নীল রক্ত প্রবাহে। সৃষ্টিকর্তার মাথাটা হচ্ছি আমি। হাত দুটি হচ্ছে ঐ লড়াকু ষাঁড়। শরীরের মাঝের অংশটি হচ্ছে ব্যবসা সামগ্রী টানা গরু। আর পায়ের অংশটি হলো ময়লার গাড়ি টানা গরু।

গরুরা সবাই এবার নতজানু হয়। আর্যগরু এবার গলার ঘন্টা বাজিয়ে বলে; আমি এসেছি ককেশীয় অঞ্চল থেকে। আমার উচ্চতা; সুঠাম দেহ, গায়ের রঙ এসব দেখে নিশ্চয়ই ধারণা করতে পারো; আমি আসলে সৃষ্টিকর্তার পছন্দের গোপুত্র। তোমরা যদি আমাকে মান্য করো; তবে আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করবো; মৃত্যুর পর তোমাদের স্থান যেন হয় হেভেনে। যদি অমান্য করো আমায়; তবে স্থান হবে হেইল-এ; সেখানে যন্ত্রণায় খাক হবে তোমরা। কৈ তোমরা আমাকে উপঢৌকন দেবে না!

লড়াকু গরুরা মুখ চাওয়া চাওয়ি করে। আর্য গরু ফিস ফিস করে বলে, গাত্রবর্ণ উজ্জ্বল এমন উর্বশী গাভীদের নিয়ে এসো; মঙ্গল নৃত্যের জন্য। এ নৃত্য হবে তাবত গরু সমাজের মঙ্গলের জন্য।

 অনুগত লড়াকু ষাঁড়েরা জোর করে লেজের চাবুক মেরে নিয়ে আসে কয়েকটি অপরুপা গাভীকে; ভয় দেখিয়ে  বলে, নাচো!

আর্যগরু প্রথমে তাদের মাথা এরপর দেহবল্লরীর উপত্যকায় আদর বুলিয়ে বলে, যাও তোমাদের শুদ্ধ করে দিলাম; তোমরা এখন থেকে হেভেনের জন্য উপযুক্ত গাভীসব।

লড়াকু গরুরা ব্যবসা সামগ্রী পরিবহন করা গরুদের বলে, যাও হেভেন কন্যাদের জন্য রুপসজ্জার জন্য সামগ্রী নিয়ে এসো; আর্যপুত্রের জন্য পর্বত থেকে আহরণ করো শিলাজিত; আর আমাদের জন্য নিয়ে এসো নদী পাড়ের সতেজ ঘাস।

আর্যপুত্র মলত্যাগ করলে ময়লার গাড়ি টানা গরুরা সেগুলো বহন করে নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে আর্যপুত্রের পাহাড় প্রমাণ পবিত্র বর্জ্যের কিংবদন্তী ছড়িয়ে পড়ে।

গরু সমাজের সবার পরিশ্রমে জিভ বের হয়ে যাবার উপক্রম। আরাম আয়েশ করে শুধু লড়াকু ষাঁড়েরা।  আর্য গরু শুধু সুন্দরী গাভীদের নাচ দেখে আর ঘুমায়। কয়েকটি গাভী সন্তান সম্ভবা হলে আর্যগরু তাদের বলে, তোমাদের সন্তানদের শরীরে নীল রক্ত এসে গেলো। ওরা পবিত্র সন্তান। আর তোমরা পবিত্র সন্তানের মা। গর্ভবতী গাভীগুলোর তখন দেমাগে আর মাটিতে পা পড়ে না। তাদের দাসী গাভীদের চোখে পবিত্র সন্তান লাভের স্বপ্ন জুলজুল করে।

একদিন আর্যগরুর পাহাড়সম বর্জ্য সংগ্রহে দেরী হওয়ায়, লড়াকু ষাঁড়েরা শিং-এর গুঁতোয় মেরে ফেলে ময়লা টানা গরুটিকে। গোরাজ্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়। প্রাণের ভয়ে তটস্থ থাকে অস্পৃশ্য গরুরা।

  লড়াকু ষাঁড়েরা ব্যবসা সামগ্রী টানা গরুদের কাছে চাঁদা চাইতে শুরু করে। আর্যগরুর পবিত্রতার রাজস্ব নাম দেয় এই চাঁদার। পবিত্রতার রাজস্ব দিতে দেরি হওয়ায় লড়াকু ষাঁড়েরা দুটি ব্যবসা সামগ্রী টানা গরুকে শিং-এর আঘাতে হত্যা করে মধুমতী নদীতে ভাসিয়ে দেয়।

আর্য গরুর জীবন কাটে বিলাস ব্যসনে; গরু সমাজের পাপ-পূণ্যের হিসাব কষে; আর সুন্দরী গাভীদের পবিত্র সন্তান দিতে দিতে। কিছু পবিত্র সন্তান বাছুর আর্য পরিবারতন্ত্রের গৌরবে গলায় ঘন্টা বেঁধে ঘুরে থাকতে গোরাজ্যময়। সামান্য পৌরুষ প্রাপ্তি হলেই তারা সুন্দরী কিশোরী গাভীদের ওপর উপগত হয়।

গোপালরাজ্য রাজ্য ভরে যায় উচ্চ বংশ মর্যাদার আর্য গরুতে; তারা অনন্তকাল ধরে অনার্য গরুদের ওপর ছড়ি ঘোরাতে থাকে।

১৬৯ পঠিত ... ১৭:৩৭, এপ্রিল ২২, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top