হাসতে হাসতে মরে যাওয়া: আক্ষরিক অর্থেই হাসতে হাসতে মারা গেছেন যারা

২৮১৫ পঠিত ... ০১:১২, জুন ২২, ২০২০

অলংকরণ: সালমান সাকিব শাহরিয়ার

'হাসতে হাসতে মরে গেলাম'- কথাটা আমরা প্রায়ই বলি। 

খুব মজার কিছু ঘটলে আমরা বলি 'হাসতে হাসতে মরে গেলাম।' বাংলায় এটি এতই প্রচলিত একটি কথা যে বাংলা ব্লগে তুমুল মজার কিছুর শর্ট-ফর্ম হিসেবে একসময় বলা হতো হাহাপগে (হাসতে হাসতে পড়ে গেলাম) আর হাহামগে (হাসতে হাসতে মরে গেলাম)। 

কথাটার মাধ্যমে আমরা নিশ্চয়ই আক্ষরিক অর্থে মরে যাওয়া বোঝাই না। মানুষের আবেগ প্রকাশের ভাষায় স্বাভাবিকভাবেই অতিরঞ্জন থাকে। এ কারণে দেখা যায়, প্রেমিকের কাছে সব প্রেমিকাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সুন্দরী। পারস্যের এক কবি তো প্রেমিকার গালের একটা তিলের জন্যে সমরখন্দ রাজ্য বেচে দিতে চান। হাসিও একটা আবেগঘটিত ব্যাপার। এর ফলেই সম্ভবত অরিরঞ্জিত 'হাসতে হাসতে মরে গেলাম' কথাটার উৎপত্তি। 

তবে মানব সভ্যতার ইতিহাসে এমন অদ্ভুত সব কান্ডকারখানা ঘটে, যা কল্পনাকেও হার মানায়। তেমনই কিছু সত্যি ঘটনার কথা আজকে জানাতে চাই। অবশ্য এই সত্যি ঘটনাগুলোর প্রতিটির একটা বিষয় কমন- ব্যক্তির মৃত্যু আর মৃত্যুর জন্য কোনো না কোনোভাবে দায়ী ছিলো হাসি! 

যিশু খ্রিষ্টের জন্মেরও ৪৫০ বছর আগের ঘটনা। যিউক্সিস নামের এক বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ছিলেন গ্রীসে। যিউক্সিস একবার এক কুৎসিতদর্শন নারীর পোর্ট্রেইট আঁকলেন। আর সেই ছবির দিকে তাকিয়ে এমনই হাসা শুরু করলেন যে, একসময় হাসতে হাসতেই মারা গেলেন এই শিল্পী। 

বাস্তব জীবনের কোনো মজার ঘটনা দেখে কোনো না কোনো সময় আপনি নিশ্চয়ই হেসেছেন। কিন্তু হাসতে হাসতে মরে যাওয়ার কথা ভাবতে পারেন? ২০৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে কিন্তু এমন ঘটনাই ঘটেছিলো এথেন্সের দার্শনিক ক্রিসিপ্পাসের সঙ্গে। কী এমন মজার ঘটনা, যা দেখে অমন মরণহাসি হাসছিলেন ক্রিসিপ্পাস? আড়াই হাজার বছর পরে এখন সেই ঘটনা হয়তো আপনার কাছে অতটা মজার কিছু মনে হবে না। যা হোক, ঘটনাটা এমন-

গাধাকে ডুমুর খেতে দেখে এক বৃদ্ধা ভাবলো, গাধা যদি ডুমুর খেতে পারে তাহলে ওয়াইনও নিশ্চয়ই খেতে পারবে। গাধারও তো একটু মাতাল হওয়ার অধিকার আছে, নাকি? বৃদ্ধা সবচেয়ে দামী ও খাটি ওয়াইন খেতে দিলো গাধাটাকে। 

ক্রিসিপ্পাস এইটা দেখেই নাকি হাসতে হাসতে মারা যান (এ যুগে উনি থাকলে না জানি কত কী কান্ড দেখে কতই না হাসতেন!)...

শুধু শিল্পী বা দার্শনিকেরাই যে হাসতে হাসতে মরে গেছেন এমন নয়। রাজা-বাদশারাও এই তালিকা থেকে বাদ যাননি। আরাগঁ- এর রাজা মার্টিন ১৪১০ সালে মারা যান এই হাসতে। তবে রাজা মার্টিন কোনো মজার ঘটনা দেখে মারা যাননি। একটা জোক শুনে হাসতে হাসতে মারা যান। মার্টিন তখন কামোদ্দীপক ড্রাগ নিয়ে মৌজ করছিলেন। ফলে আগে থেকেই মাতাল হয়ে ছিলেন। মৌজে রাজ দরবারের ভাঁড় বোররা ছিল। বোররা এমন একটা জোক বললেন যে রাজা মার্টিন পাগলের মতো হাসতে শুরু করলেন৷ সেই হাসি থামলো গিয়ে মৃত্যুতে। 

টমাস উর্কুহার্ট ছিলেন একজন স্কটিশ লেখক। তার একটা বড় পরিচয়, বিখ্যাত হিউমারিস্ট ফ্রাসোয়া রাবলের প্রথম ইংরেজি অনুবাদক ছিলেন তিনি। ১৬৬০ সালে ব্রিটিশ সিংহাসনে চার্লস দ্বিতীয় পুনরায় আরোহনের খবর পেয়েই হাসতে হাসতে মারা যান এই স্কটিশ! 

নর্দাম্পটনশায়ারের বাসিন্দা ছিলেন মিস ফিটসহারবার্ট। ১৭৮২ সালের মার্চের এক বুধবার রাতে ফিটসহারবার্ট দেখতে যান জন গে'র নাটক 'দ্য বেগার'স অপেরা'। নাটকের পলি চরিত্রে অভিনয় করা শিল্পীর পোশাক মিস ফিটসহারবার্টের এমনই অদ্ভুত আর মজার লাগে যে, সে বুধবার রাত থেকে একটানা যে হাসতে থাকলেন, শুক্রবার সকালে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত সেই হাসি থামেনি। 

এলেক্স মিচেল ছিলেন খুব সাধারণ এক ব্রিটিশ। ইট ভাঙার কাজ করতেন এলেক্স। কিন্তু তার এমন অদ্ভুতুড়ে মৃত্যু না হলে এই লেখায় তার নামটা আপনি হয়তো দেখতেন না। এলেক্স দীর্ঘদিন ধরে 'কিউ টি' সিন্ড্রোমে ভুগছিলেন। এই সিন্ড্রোম থাকলে প্রচুর এড্রেনালিন রাশ হলে হার্ট এটাক হয়ে যেতে পারে। এলেক্স সেদিন টিভিতে স্কেচ কমেডি শো 'দ্য গুডিজ' দেখছিলেন। ১৯৭৫ সালে 'কুং ফু কেপারস'  নামে একটা এপিসোড দেখার সময় এলেক্সের এমনই হাসি পায় যে সশব্দে হাসির চোটে সোফা থেকে পড়ে যান আর হার্ট এটাকে মারা যান। এই কাহিনীর আরও টুইস্ট আছে। এলেক্সের মৃত্যুর খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হলে 'দ্য গুডিজ'-এর দর্শক হঠাৎ করে অনেক বেড়ে যায়। একেই বোধহয় বলে কারও পৌষ মাস কারও সর্বনাশ। 

পাপুয়া নিউগিনির 'ফরে' জনগোষ্ঠীর সর্বশেষ ব্যক্তি মারা যান ২০০৯ সালে। এই ব্যক্তি 'কুরু' রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কুরু অদ্ভুত এক রোগ, যার অন্য নাম 'লাফিং ডেথ'। বলা হয়ে থাকে, এই ব্যক্তি মৃত শরীরের মাংস খাওয়ার পর কুরু রোগে আক্রান্ত হয়। এই রোগে দমকা হাওয়ার মতো অনিয়ন্ত্রণযোগ্য হাসি আসতে থাকে। করুণ ব্যাপার হলো, দমকা হাসির তোড়ে পৃথিবী থেকে একটা জনগোষ্ঠীর সর্বশেষ ব্যক্তিটিও বিদায় নেয়- ভাবতেই খারাপ লাগে, হাসি আর পায় না। 

আরেকজনের কথা বলে এই লেখা শেষ করবো। বিশেষ করে যারা ডার্টি জোক বেশি শুনতে বা বলতে পছন্দ করেন, তারা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। 

ইতালিয়ান স্যাটায়ারিস্ট ও নাট্যকার পিয়েত্রো আরেতিনোর মৃত্যু বেশ অদ্ভুতভাবে হয়েছিলো। অদ্ভূত, কারণ পিয়েত্রো নিজে ছিলেন অত্যন্ত রসিক ব্যক্তি এবং অন্যের রসবোধের সমঝদার।

১৫৫৬ সালের এক বিকেল বেলা চেয়ার উল্টে পড়ে মৃত্যু হয় এই নাট্যকারের। ইতিহাসবেত্তাদের দাবি, পিয়েত্রোর চেয়ার উল্টে পতনের কারণ তার বোনকে নিয়ে করা একটি ডার্টি জোক!

রসিক পাঠকগণ, ডার্টি জোক থেকে কিন্তু সাবধান! 

২৮১৫ পঠিত ... ০১:১২, জুন ২২, ২০২০

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top